দোষ স্বীকার করার পরও পুলিশের এফআইআরে আসামি অজ্ঞাত

কুমিল্লায় চিপসের লোভ দেখিয়ে তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীকে (১০) বাঁশঝাড়ে নিয়ে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় দোষ স্বীকার করা একমাত্র আসামি জসীমকে (২২) পুলিশের এফআইআরে অজ্ঞাত রাখা হয়েছে। এতে সুষ্ঠু বিচার না পাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন নিহত শিশুর মা। সোমবার (২ জানুয়ারি) বিকেলে কুমিল্লা নগরীর এক আত্মীয়ের বাসায় সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ শঙ্কার কথা জানান।
সংবাদ সম্মেলনে শিশুটির মা বলেন, গত ১৪ ডিসেম্বর বিকেলে চিপস কিনে দিয়ে আমার মেয়েকে বাঁশঝাড়ে নিয়ে প্রথমে ধর্ষণ এবং পরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করে বরুড়া উপজেলার ভাউকসার ইউনিয়নের গজারিয়া এলাকার মৃত মনোহর আলীর ছেলের জসীম। স্থানীয় লোকজন দুপুরে আমার মেয়েকে ধর্ষণ এবং হত্যাকারী জসীমের সঙ্গে ঘুরাঘুরি করতে দেখেছে বলে জানায়। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। পুলিশ তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। থানায় পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সে ঘটনার দায় স্বীকার করে।
পরে আমি বাদী হয়ে অভিযুক্ত জসীমকে বিবাদী করে মামলা করতে গেলে পুলিশ বিবাদীর নাম-ঠিকানা দেওয়া যাবে না এবং এজাহারের বর্ণনার সময় দিতে পারব বলে জানায়। তখন আমি পুলিশের পরামর্শে বিবাদীর নাম-ঠিকানা ফাঁকা রেখে এজাহারের বর্ণনার সময় উল্লেখ করি। পুলিশ বলেছিল দোষ করে নেওয়ায় আসামিকে মামলার পর গ্রেপ্তার দেখানো হবে। কিন্তু মামলা দায়েরের পর পুলিশের দাখিলকৃত এফআইআরে নাম-ঠিকানা অজ্ঞাত দেখতে পাই। দোষ স্বীকার করে নেওয়া আসামিকে গ্রেপ্তার দেখানো তো দূরের কথা তেমন কোনো কথাই উল্লেখ করা হয়নি এফআইআরে। পুলিশের কাছে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর আমি পাইনি।
যদিও পুলিশের দাবি, প্রত্যক্ষদর্শীর সরাসরি সাক্ষ্য না থাকায় মামলায় আসামির নাম-ঠিকানা অজ্ঞাত রাখা হয়েছে।
বরুড়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল বাহার মজুমদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, অভিযুক্ত আসামিকে সন্দেহ করে অভিযোগ দিয়েছিল মামলার বাদী। ঘটনার সরাসরি প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য না থাকলে মামলায় অজ্ঞাত রাখা হয়। সন্দেহবশত কারও নাম অভিযোগে দিলে সেই নাম এফআইআরে দেওয়া যায় না। তদন্তে কারও নাম এলে তখন সে নাম নথিভুক্ত হয়। এ মামলায় যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। আদালতে জবানবন্দিসহ সকল প্রক্রিয়া আইনগতভাবে হয়েছে। বাদী যেসব অভিযোগ তুলেছেন সেগুলো সত্য নয়।
মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন মাযহারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘটনার পরপরই দেশের সব গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। সেই সংবাদে থানার ওসি তার বক্তব্যে আটক জসীম দায় স্বীকার করেছেন বলে জানান। কিন্তু মামলায় দেখলাম আসামির কোনো নাম-ঠিকানা নেই। এর ফলে মামলাটি ৫০ শতাংশ দুর্বল হয়ে গেছে। যদিও আল্লাহর অশেষ রহমতে আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার ফলে অনেকটা ভালো হয়েছে। কিন্তু মাকড়শার জালের মতো আইনের অনেক ফাঁকফোকর থাকে, মামলায় তার নাম-ঠিকানা না আসায় আমি হতবাক। তবে আশা করব চার্জশিটে যেন এসব ফাঁকফোকর না রাখা হয়। না হলে ভুক্তভোগী পরিবারটি ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হতে পারে।
প্রসঙ্গত, গত ১৪ ডিসেম্বর বরুড়ার ভাউকসার ইউনিয়নের গজারিয়া এলাকায় খালার বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে প্রথমে ধর্ষণ এবং পরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করা হয় ওই শিশুকে। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় অভিযুক্ত জসীমকে আটক করে পুলিশে দেন স্থানীয়রা। ঘাতক জসীম গজারিয়া এলাকার মৃত মনোহর আলীর ছেলে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে পুলিশের কাছে দায় স্বীকার করেন জসীম। পরে আদালতে তোলা হলে আদালতেও ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। জসীম বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
আরিফ আজগর/আরএআর