মেলার নামে চলছে র‌্যাফেল ড্র, হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা

Dhaka Post Desk

জেলা প্রতিনিধি, কুষ্টিয়া

০৮ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:০৩ এএম


মেলার নামে চলছে র‌্যাফেল ড্র, হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর ও কুমারখালী উপজেলায় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা মেলার নামে অবৈধ র‌্যাফেল ড্রয়ের আয়োজন করেছে। মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, টিভি, ফ্রিজসহ নানা রকম পুরস্কারের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দৌলতপুর ও কুমারখালী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি হচ্ছে র‍্যাফেল ড্রয়ের টিকিট।

লোভে পড়ে গ্রামের নিরীহ মানুষজন কিনছেন এসব টিকিট। মেলার আয়োজক ও র‌্যাফেল ড্র সংশ্লিষ্টরা এভাবে প্রতিদিন মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

গত সোমবার (২ জানুয়ারি) কুমারখালী উপজেলার পান্টি ইউনিয়নের পান্টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে এই মেলা শুরু হয়েছে। মেলার আয়োজক পান্টি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামিউর রহমান সুমন মিয়া। মেলা উদ্বোধনের পর দিন থেকেই শুরু হয়েছে র‌্যাফেল ড্রয়ের টিকেট বিক্রি।

অপরদিকে গত বুধবার (৪ জানুয়ারি) জেলার দৌলতপুর উপজেলার শীতলাইপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন মাঠে মেলা শুরু হয়। এরপর থেকে শুরু হয়েছে টিকিট বিক্রি। মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি যুবলীগ নেতা বখতিয়ার রহমান বাচ্চু। দুই উপজেলায় শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদ আয়োজিত বিজয় মেলাটি চলবে মাসব্যাপী।

জানা গেছে, কুমারখালী ও দৌলতপুরে বিজয় দিবস উপলক্ষে বিজয় মেলা বসেছে। মেলার মাঠে র‌্যাফেল ড্রয়ের মঞ্চে সাজিয়ে রাখা হয়েছে টিভি, ফ্রিজ, মোটরসাইকেলসহ নানা পুরস্কার। মেলার মাঠ দুটিতে মাইকে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এই মঞ্চের সামনেই টেবিল-চেয়ার পেতে র‌্যাফেল ড্রয়ের টিকিট বিক্রি করছেন একাধিক বিক্রেতা। এখান থেকে টিকিট কিনছে শিক্ষার্থী, শিশুসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। 

এছাড়াও শতাধিক গাড়িতে ৩০০-৪০০টি করে টিকিট নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও গ্রামে গ্রামে ঘুরে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার টিকিট বিক্রি হচ্ছে। লোভে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন অনেকেই। 

স্থানীয়রা জানান, স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে  মেলার নামে চলছে অবৈধ র‌্যাফেল ড্র। রাজনৈতিক দলের নেতারা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। জুয়া ও অশ্লীল নৃত্যের প্রস্তুতি চলছে। দ্রুত এসব বন্ধ করা না হলে মানুষ ক্ষতির শিকার হবে। যুব সমাজ নষ্ট হবে। এলাকায় অপরাধ বাড়বে।

জানা গেছে, মেলা উদ্বোধনের পর দিন থেকেই শুরু হয় র‌্যাফেল ড্রয়ের টিকেট বিক্রি। মেলার গেট ছাড়াও শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে চেয়ার-টেবিল বসিয়ে ২০ টাকা মূল্যের টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অটোরিকশা যোগে ঘুরে ঘুরে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। সারাদিন টিকিট বিক্রি শেষে রাত সাড়ে ১০টার দিকে মেলা চত্বরে র‌্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হয়।

মোটরসাইকেল-প্রাইভেটকারসহ আকর্ষণীয় পুরস্কার ঘোষণা করায় নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন টিকিট কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। রিকশাচালক ছাড়াও দিনমজুর শ্রেণির লোকজন যা আয় করছেন সেই টাকায় বাড়ির বাজার না করে র‌্যাফেল ড্রয়ের টিকিট কিনে বাড়ি ফিরছেন। আবার অনেকেই মোটরসাইকেল পুরস্কার পাওয়ার আশায় লোভ সামলাতে না পেরে অবৈধ এই র‌্যাফেল ড্রয়ে আসক্ত হয়ে পড়ছেন।

এ বিষয়ে কুমারখালীর মেলার আয়োজক পান্টি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামিউর রহমান সুমন মিয়া কথা বলতে রাজি হননি। 

dhakapost

দৌলতপুরের মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি যুবলীগ নেতা বখতিয়ার রহমান বাচ্চু বলেন, বিজয়ের মাসে মেলা করার কথা থাকলেও আমরা সঠিক সময়ে সেটি পারিনি, অবশেষে শুরু হয়েছে, সুশৃঙ্খলভাবে মেলা চলছে। নাগরদোলা, সার্কাস, জাদু, র‍্যাফেল ড্রসহ বসেছে হরেক রকমের খাবার ও খেলনার দোকান।

এ বিষয়ে দৌলতপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান এবং কুমারখালী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোহসীন হোসাইন ঢাকা পোস্টকে বলেন, মেলায় অবৈধভাবে কোনো কিছুর আয়োজন করা হয়েছে কি-না তা খোঁজ নিয়ে দেখছি। র‌্যাফেল ড্র চালানোর কোনো অনুমোদন নেই।  অবৈধভাবে কোনো কিছু করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

এ ব্যাপারে কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিতান কুমার মন্ডল ঢাকা পোস্টকে বলেন, র‌্যাফেল ড্র চালানোর বিষয়টি আমার জানা ছিল না। দ্রুতই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল জব্বার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। এ ব্যাপারে ওসির সঙ্গে কথা হয়েছে। মেলার নামে অবৈধ কিছু মেনে নেওয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মেলার আয়োজকরা আমাদের ইমেজ নষ্ট করতে পারেন না। দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

রাজু আহমেদ/আরএআর

Link copied