মুসল্লিতে পরিপূর্ণ ইজতেমার মাঠ

Dhaka Post Desk

জেলা প্রতিনিধি, গাজীপুর

১২ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:৫৭ পিএম


টঙ্গীতে বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) বাদ ফজর বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের জন্য প্রাথমিক আম বয়ান শুরু হয়েছে। মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ সমাবেশের মূল কার্যক্রম শুরু হবে আগামীকাল শুক্রবার বাদ ফজরের বয়ানের মধ্য দিয়ে। আর রোববার আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত চলবে তাবলীগের ৬ উসুলের বয়ান। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের বিশিষ্ট আলেমগণ বয়ান করবেন। মূল বয়ান বাংলাসহ বিভিন্ন ভাষা-ভাষীদের জন্য তরজমা (অনুবাদ) করা হবে।

বিশ্ব ইজতেমার আয়োজক কমিটির সদস্য প্রকৌশলী আব্দুন নূর জানান, দেশি-বিদেশি মুসল্লিরা আসতে শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে মুসল্লিতে পুরো ইতজেমা ময়দান পূর্ণ হয়ে গেছে। শুক্রবার থেকে মূল পর্ব শুরু হলেও বৃহস্পতিবার বাদ ফজর থেকেই শুরু হয় আম বয়ান।

ইজতেমার আয়োজক কমিটির আরেক সদস্য প্রকৌশলী মো. মাহফুজ বলেন, বিশ্ব ইজতেমার মূল পর্ব শুক্রবার থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বুধবার থেকেই দলে দলে মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে এসে অবস্থান নিয়েছেন। মুসল্লীর দল মাঠের ভেতরে ঢুকে নিজ নিজ জেলার খিত্তায় অবস্থান নিতে শুরু করেছেন। লাখ লাখ মুসল্লির উপস্থিতিতে ইজতেমা ময়দান প্রায় পূর্ণ হয়ে গেছে। বাস, ট্রাক, ট্রেন পায়ে হেঁটে টুপী-পাঞ্জাবী পরিহিত মুসল্লিরা টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে আসছেন। রোববার আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত মুসল্লিদের এ আগমন অব্যাহত থাকবে।

করোনার কারণে গত দুই বছর ইজতেমা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় এবার তাবলীগের এ মহাসম্মেলনে যোগ দিতে আগেভাগেই মুসল্লিরা মাঠে এসে উপস্থিত হচ্ছেন। ময়দানে আসা মুসল্লিদের জমিয়ে রাখতে বৃহস্পতিবার বাদ ফজর থেকে শুরু হয় প্রাথমিক আম বয়ান। ঈমান-আমলের এ বয়ান শুনতে ইজতেমা ময়দানের মুসল্লিরা মশগুল রয়েছেন।

প্রায় এক বর্গ কিলোমিটারের বিশাল মাঠটিকে বাঁশের খুঁটির ওপর চটের ছাউনির প্যান্ডেলে মুসল্লিদের বয়ান শোনার জন্য লাগানো হয়েছে বিশেষ ছাতা মাইক। লাগানো হয়েছে পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক বাতি। দেশের মুসল্লিদের জন্য জেলাওয়ারী আলাদা ৯১টি খিত্তা (ভাগ) করা হয়েছে। শীত উপেক্ষা করে মঙ্গলবার রাত থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে নির্ধারিত খিত্তায় এসে অবস্থান নিচ্ছেন।

টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় বিদেশি মুসল্লি যারা আসেন তাদের এয়ারপোর্টে ইজতেমা আয়োজকরা রিসিভ করে থাকেন। বিদেশি মুসল্লিরা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে ইজতেমায় আসতে পারেন সেজন্য ইমিগ্রেশন থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ময়মনসিংহের তারাকান্দা থেকে আসা রোকনুজ্জামান বলেন, ২১ সদস্য নিয়ে স্থানীয় একটি মসজিদ থেকে ইজতেমা মাঠে এসেছেন। এসে ফজরের নামাজ আদায় করে নিজ খিত্তায় অবস্থান নিয়েছেন। এখানে এসে আমিরের নির্দেশনা অনুযায়ী যার যার কাজ ভাগাভাগি করে নিয়েছেন।

দিনের যানজটসহ নানা দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে রাতেই রওনা দিয়েছিলেন এবং কোনো দুর্ভোগ ছাড়াই তারা পৌঁছাতে পেরেছেন বলে জানান তারা। এসে ফজরের নামাজের মধ্যে দিয়ে ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন।

ইজতেমায় অংশ নিতে জামায়াত হয়ে এসেছেন সেলিম মিয়া। তিনি জানান, তীব্র শীত উপেক্ষা করে তারা ১৭ জনের সদস্য ইজতেমা মাঠে পৌঁছেছেন।

জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান জানান, গাজীপুর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট টিম কাজ করবে। ইজতেমা ময়দান ও আশেপাশের এলাকালায় বিশুদ্ধ খাবার সরবরাহ নিশ্চিত করতে এবং ছিনতাই-পকেটমারসহ নানা অপরাধ কার্যকলাপ রুখতে টহল টিম ও মোবাইল কোর্ট কাজ করবে, থাকবে পর্যাপ্ত ওয়াচ টাওয়ার ও সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ। প্রতিদিন কয়েকভাগে ভাগ হয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হবে। 

যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, প্রতিবার বিশ্ব ইজতেমায় তুরাগতীরে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দেয়। তাই এবার আরও দুইটি নলকুপ স্থাপন করা হয়েছে। আধুনিক পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা ছাড়াও মুসল্লিদের চিকিৎসা সেবা দিতে শহীদ আহসান উল্লাহ্ জেনারেল হাসপাতালে ১৮টি আধুনিক বেড উপহার দেন তিনি। 

শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, স্বাস্থ্য বিভাগের সেবা কার্যক্রম প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। মুসল্লিদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করণে স্বাস্থ্য বিভাগ ৫টি ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এখান থেকে ২৪ঘন্টা মুসল্লিদের বিনামূল্যে ওষুধ ও চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হবে। এসব ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ছাড়াও টঙ্গী হাসপাতালে ডায়রিয়া, অ্যাজমা, ট্রমা, বক্ষব্যাধি, ডায়রিয়া, ডেঙ্গু, নাক-কান-গলা, চক্ষু ও বার্ন ইউনিটের কার্যক্রম চলবে। এজন্য পর্যাপ্ত কেবিন ও বেড বাড়ানো হয়েছে। ইজতেমা উপলক্ষে টঙ্গীর এ হাসপাতালে ৭টি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল মোতায়েন থাকবে। এছাড়া বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের তরফ থেকেও মেডিকেল ক্যাম্প বিনামূল্যে চিকিৎসা দেবে। চিকিৎসা বিভাগ ছাড়াও বিদ্যুৎ, ফায়ার সার্ভিস সার্বক্ষণিক সেবাদান অব্যাহত রাখবে। ইজতেমা উপলক্ষে বিশেষ ট্রেন ও বিআরটিসির স্পেশাল বাস চলাচল করবে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আলমগীর মিয়া জানান, ৩১টি টয়লেট বিল্ডিংয়ে এক সঙ্গে ৯ হাজার মুসল্লি তাদের প্রসাব-পায়খানার কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন। বিআরটিসি এবং বাংলাদেশ রেলওয়ে ইজতেমার মুসল্লিদের আনা নেওয়ায় বিশেষ বাস ট্রেন সার্ভিসের ব্যবস্থা নিয়েছে। ইজতেমা ময়দানের পশ্চিম পাশে তুরাগ নদীর ওপর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ৫টি ভাসমান সেতু নির্মাণ করেছে মুসল্লিদের পারাপারের জন্য।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দুই পর্বে পোশাকে, সাদা পোশাকে পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকবেন  ১০ হাজার সদস্য। গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুুলিশ বিভাগ ১৪টি কন্ট্রোলরুম তৈরি করেছে। র‍্যাবের কন্ট্রোল রুম থাকবে, ডিএমপি তার এলাকায় কন্ট্রোল রুম খুলেছে, ওয়াচ টাওয়ার, রুটটফ ডিউটিসহ সিআইডি, নৌপুলিশ, অবজারভারভেশন টিম থাকবে, র‍্যাবের হেলিকপ্টার টহল থাকবে। ডগ স্কোয়াড টিম, মোবাইল পেট্টোল টিম, বোম ডিস্পোজাল টিম থাকবে।

ইজতেমার দুই পর্বেই বিভিন্ন স্থান থেকে মুসল্লিদের নিয়ে আসা গাড়ির নির্ধারিত পার্কিং ও মোনাজাতের আগের দিন শনিবার রাত থেকে মোনাজাতের দিন পর্যন্ত বিশেষ ট্রাফিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

শিহাব খান/আরকে 

টাইমলাইন

Link copied