মোহামেডান ক্লাব গুঁড়িয়ে দেয়ার ২ দিন পর মেয়রের দুঃখ প্রকাশ

বরিশালের মোহামেডান স্পোটিং ক্লাব ভেঙে ফেলার দুদিন পরে দুঃখ প্রকাশ করেছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। সেই সঙ্গে ক্লাবটি ভেঙে ফেলার প্রয়োজনীয়তা এবং পরবর্তী পরিকল্পনা নিয়েও কথা বলেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) রাতে মেয়রের ফেসবুক পেইজ থেকে ৫৮ মিনিট ৮ সেকেন্ডের লাইভে ৩৫ মিনিট ৯ সেকেন্ডে তিনি স্পোটিং ক্লাবটি নিয়ে কথা বলা শুরু করেন এবং ১১ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডে এ বিষয়ে তার বক্তব্য তুলে ধরেন। ক্লাবটি ভেঙে ফেলার আলোচনা সৃষ্টির দুদিন পরে এ নিয়ে মুখ খুললেন নগর প্রশাসন।
সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, মোহামেডান স্পোটিং ক্লাবতো আর ধ্বংস করা হয়নি। এটি ঐতিহ্যবাহী এবং নিবন্ধিত ক্লাব। তবে বরিশালের মোহামেডান ক্লাবের মাঠ নেই। সর্বশেষ জাতীয় পার্টির সময়ে খেলার আয়োজন করেছিল। মোহামেডান স্পোটিং ক্লাব নিয়ে সংশয়ের কোনো কারন নেই। এই ক্লাব আমাদের শ্রদ্ধার জায়গা। আমি বরিশালের সমমনা নেতাদের সঙ্গে আলাপ করেই কাজটি (ক্লাব গুড়িয়ে দেওয়া) করেছিলাম। কেউ মনঃক্ষুণ্ন হয়ে থাকলে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
তিনি বলেন, মোহামেডান স্পোটিং ক্লাবতো নিবন্ধিত ক্লাব। এখানকার বিল্ডিংটিতো আর মোহামেডান ক্লাব না। মোহামেডান ক্লাব ভেঙে দিয়েছি মানেতো এই ক্লাব বরিশাল সিটি করপোরেশনের বাইরের কোন ক্লাব নয়। প্রতিটি স্থাপনা আমরা পরিকল্পিতভাবে সাজানোর চেষ্টা করছি। যেহেতু বঙ্গবন্ধু অডিটোরিয়ামের সামনে শিশুরা খেলবে, আমি চাইছি বঙ্গবন্ধু অডিটোরিয়ামের সামনে শিশু পার্ক করে দিতে।
‘বঙ্গবন্ধু অডিটোরিয়াম এবং শহীদ মিনার এলাকার পরিবেশ সমুন্নত রাখতে ক্লাবটি দৃষ্টিকটু। দরকার হলে মোহামেডান স্পোটিং ক্লাবকে বঙ্গবন্ধু অডিটোরিয়ামের ভিতরে জায়গা দেওয়া হবে।’
ওই এলাকার গুরুত্ব তুলে ধরে মেয়র বলেন, এখানে বঙ্গবন্ধু অডিটোরিয়াম এবং জাতির জনকের হাতে উদ্বোধন করা শহীদ মিনার রয়েছে। এখানে বরিশালের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বছর ব্যাপী অনুষ্ঠান হয়। এই দুটি প্রতিষ্ঠান একটি কম্পাউন্ডে করা হয়েছে। সাংস্কৃতিক এবং শিশুদের সংগঠনের সাথে আলাপ করেই বঙ্গবন্ধু অডিটোরিয়ামে তাদের নিয়ে আসা হচ্ছে।
সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, বরিশালের নাগরিক ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করে এবং এই শহরের যারা সুশীল ব্যক্তি রয়েছেন সবাই একই কথা বলেছেন। আমি মোহামেডান স্পোটিং ক্লাবের পরিবেশ নিয়ে কিছু বলতে চাই না। মোহামেডান ক্লাব ভেঙে সরিয়ে দিয়েছি তা নয়, অবশ্যই তাদের পুর্নবাসন এবং জায়গা দেওয়া হবে। যে কাজগুলো করছি তাতে কাউকেই উচ্ছেদ করে রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়নি। পরিকল্পিতভাবে শহরটিকে এগিয়ে নিতে হলে সুসংগঠিতভাবে কাজ করতে হবে।
রাতের আঁধারে ভাঙার বিষয়ে উল্লেখ করে বলেন, সিটি করপোরেশন এই শহরের নাগরিকদের জন্য যেকোনো সময়, যেকোনো স্থান অধিগ্রহণ করার এখতিয়ার রাখে।
ক্লাব ভাঙায় তর্ক-বির্তকের কিছু নেই উল্লেখ করে বলেন, এসব ছোট বিষয়। অনেকে অনেক ইতিহাসের কথা বলেছেন। ইতিহাস আমরাও জানি, কারা কী ছিলেন? বিষয় সেটি না, বিষয় হচ্ছে আমরা সামনে এগিয়ে যাচ্ছি।
প্রসঙ্গত, ১৯৪২ সালে জেলা পরিষদের ৩০ শতাংশ জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত মোহামেডান স্পোটিং ক্লাব কার্যালয় গত মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) মাঝরাতে বুলডোজার দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় সিটি করপোরেশন। এ সময়ে সিটি করপোরেশনের কোনো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সেখানে ছিলেন না বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী ব্যবসায়ী এবং ক্লাব সদস্যরা। তবে একজন কাউন্সিলরের নেতৃত্বে ক্লাবটি ভেঙে ফেলা হয়। ক্লাব গুঁড়িয়ে দেওয়ার বিষয়ে সিটি করপোরেশন পূর্বে থেকে কোনো নোটিশ দেয়নি বলে জানিয়েছেন ক্লাবের সাবেক সভাপতি শফিকুল আলম গুলজার ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আহসান কবির হাসান। তারা জানান, ক্ষমতার অপব্যবহার করে নগর ভবন কর্তৃপক্ষ একটি ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া ক্লাবকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরকে