প্রতিদিন ৩ লাখ টাকার কাপড় বিক্রি হয় রেলপ্লাজার মার্কেটে

রাজবাড়ীতে শীতের প্রকোপ বাড়তে থাকায় চাহিদা বেড়েছে গরম কাপড়ের। বিত্তশালীরা অভিজাত বিপণি বিতান থেকে কেনাকাটা করলেও নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষেরা ছুটছে রাজবাড়ী জেলা শহরের ১নং রেলগেট এলাকায় রেললাইনের ওপর অস্থায়ীভাবে গড়ে ওঠা পুরাতন কাপড়ের মার্কেটে।
রেললাইনের ওপর অস্থায়ীভাবে গড়ে ওঠায় মার্কেটটি সবার কাছ রেলপ্লাজা নামে পরিচিত। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ৯ টা থেকে ১০টা পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ এই রেলপ্লাজা থেকে পুরাতন কাপড় কিনে থাকেন। এই পুরাতন কাপড়ের মার্কেটে প্রতিদিন প্রায় ৩ লাখ টাকার কাপড় বিক্রি হয় বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, মার্কেটটিতে ক্রেতাদের বেশ ভিড়। এই অস্থায়ী মার্কেটে মোট ৪২টি দোকান বসেছে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাকে মুখরিত পুরো এলাকা। যেখানে নিম্ন আয়ের মানুষের পাশাপাশি মধ্যবিত্তরাও এসেছে স্বল্প দামে গরম কাপড় কিনতে। রেললাইনের ওপর গড়ে ওঠা এসব দোকানে কোরিয়া, তাইওয়ান,জাপানসহ বিভিন্ন দেশের পুরাতন ব্লেজার, জ্যাকেট, সয়েটার টাউজার, মাফলার, টুপি, হুডি, ফুলহাতা গেঞ্জি, কম্বলসহ পুরুষ, মহিলাসহ ছোট বাচ্চাদের শীতবস্ত্র বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন এই রেলপ্লাজায় প্রায় তিন লাখ টাকার বেশি কাপড় বিক্রি হয় বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, প্রতি শীতের মৌসুমে অক্টোবর মাস থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত এই ৪ মাস চলে পুরাতন শীতের কাপড়ের বেচা-কেনা। ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুসারে, শীত মৌসুমে প্রতিটি দোকানে প্রতিদিন কমপক্ষে গড়ে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকার কাপড় বিক্রি হয়। সেই হিসেবে ৪২টি দোকানে প্রতিদিন প্রায় ৩ লাখ টাকার কাপড় বিক্রি হয়।
রেললাইনের ওপর গড়ে ওঠা পুরাতন মার্কেটে কাপড়ের ব্যবসা করেন মো.ইকবাল। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি দীর্ঘদিন যাবত শীত মৌসুমে এই রেলপ্লাজায় শীতের জামাকাপড় বিক্রি করি। এখানে সাধারণ নিম্নবিত্ত ও স্বল্প আয়ের লোকজন আসে। আবার মধ্যবিত্ত লোকেরাও আসেন। এখানে পুরাতন কাপড়ের পাশাপাশি এক্সপোর্ট কোয়ালিটির নতুন কাপড় বিক্রি হয়ে থাকে। কমদামি কাপড়গুলো ৫০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে, মাঝারি ধরনের গুলো ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা আর কিছু দামী কাপড় ও কম্বল ১ হাজার বা তার বেশি বিক্রি হয়ে থাকে।
আরেক ব্যবসায়ী মোতালেব মৃধা বলেন, কম টাকায় সাধ্যের মধ্যে শীতের কাপড় কিনতে এই রেলপ্লাজায় অনেকেই আসে। একটু শীত বাড়ায় আমাদের বেচাবিক্রিও ভালো হচ্ছে। দৈনিক গড়ে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকার জামাকাপড় বিক্রি হয়। কোনো কোনো দিন ১০ হাজার টাকা পার হয়ে যায় বেচাবিক্রি।
রেলপ্লাজার মার্কেটে কথা হয় সেলিম শেখ নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে। পেশায় তিনি প্রাণ আরএফএল কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি। রেলপ্লাজার একটি দোকানে তিনি শীতের জ্যাকেট দেখেছিলেন এ সময় ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি সামান্য টাকা বেতন পাই। দ্রব্যমূল্যের যে দাম সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হয়।এখানে এসেছি কম দামের মধ্যে একটা শীতের জ্যাকেট কিনতে। শপিং মল থেকে নতুন জ্যাকেট কেনার সাধ থাকলেও সাধ্য নেই। তাই বাধ্য হয়ে এই পুরাতন মার্কেটে এসেছি। তবে এখানে সব আইটেম পুরাতন নয়। এখানে কম দামের মধ্যে এক্সপোর্ট কোয়ালিটির ভালো জ্যাকেট পাওয়া যায়।
পেশায় নির্মাণ শ্রমিক নায়েব আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, শীতের মধ্যে সকালে কাজ করতে কষ্ট হয়। তাই কম দামে শীতের গরম জ্যাকেট কিনতে এখানে এসেছি। নতুন পোশাকের দোকানে একটি জ্যাকেট কিনতে গেলে হাজার টাকার বেশি প্রয়োজন। আর এখানে আমি মাত্র সাড়ে তিনশ টাকায় মোটা কাপড়ের টুপি আলা জ্যাকেট কিনতে পেরেছি।
রামকান্তপুর এলাকা থেকে শীতের সোয়েটার কিনতে রেলপ্লাজার মার্কেটে এসেছেন ফরিদা বেগম। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখানে কম দামে ভালো ভালো সোয়েটার পাওয়া যাচ্ছে। যাদের বাজেট কম তারা এখান থেকে কিনতে পারেন। আমি আমার জন্য ২০০ টাকা দিয়ে একটা সোয়েটার কিনেছি ও মেয়ের জন্য ২৫০ টাকা দিয়ে একটা জ্যাকেট কিনেছি।
রেলপ্লাজা মার্কেটে কাপড় সর্বরাহকারী মো. শাওন শেখ বলেন, এই রেলপ্লাজার পুরাতন কাপড়ের মার্কেটটি নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের কাছে অনেক জনপ্রিয়। এই মার্কেটের নাম পুরাতন কাপড়ের মার্কেট হলেও এখানে এক্সপোর্ট কোয়ালিটির নতুন জামাকাপড়ও পাওয়া যায়। তবে পুরাতন বলতে এখানে কারও কোনো ব্যবহৃত জামাকাপড় নেই। এখানকার কাপড় গার্মেন্টস গোডাউনে দীর্ঘ দিন পড়ে থাকা কাপড়। এছাড়া বিদেশি বায়ারদের থেকে রিজেক্ট হওয়া কাপড় বেশি।আমরা এই কাপড়গুলো কেজি দরে কিনে নিয়ে আসি।
মীর সামসুজ্জামান/আরকে