পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত হলো টিউলিপ উদ্যান
পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হলো পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার দর্জিপাড়ার টিউলিপ উদ্যান। শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) দুপুরে দর্জিপাড়ায় ফিতা কেটে টিউলিপ বাগান পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ইএসডিও) নির্বাহী পরিচালক ড. মুহম্মদ শহীদ উজ জামান এবং ইএসডিওর পরিচালক (প্রশাসন) ড. সেলিমা আখতার। এখন থেকে দর্শনার্থীরা বাগানে প্রবেশ করে দেখতে পারবেন অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর ভিনদেশি টিউলিপের বাগান।
তেঁতুলিয়ার দর্জিপাড়া গ্রামটি এখন ‘টিউলিপ গ্রাম’ হয়ে উঠেছে। হয়ে উঠেছে একখণ্ড নেদারল্যান্ডস। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ইএসডিও) উদ্যোগে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন-পিকেএসএফের অর্থায়নে এবার দুই একর জমিতে ২০জন প্রান্তিক উদ্যোক্তা আবাদ করছেন শীত প্রধান দেশের নজরকাড়া টিউলিপ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গতবারের তুলনায় এবারও ভিনদেশি টিউলিপ পর্যটকদের মুগ্ধতা কাড়বে। অর্থনীতিতেও লাভবান হবেন প্রান্তিক চাষিরা।
দুপুরে বাগানে গিয়ে দেখা যায়, দুই একর জমিতে লাগানো টিউলিপের বীজ অঙ্কুরোদগম হয়ে ডালাপালা গজিয়েছে। আর মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে গাছ বেড়ে কলি ফুটে ফুলে পরিপূর্ণতা পেতে শুরু করবে। এবার ১০ প্রজাতির বেশ কয়েকটি রঙয়ের টিউলিপের বীজ বপন করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে অ্যান্টার্কটিকা (সাদা), ডেনমার্ক (কমলা ছায়া), লালিবেলা (লাল), ডাচ সূর্যোদয় (হলুদ), স্ট্রং গোল্ড (হলুদ), জান্টুপিঙ্ক (গোলাপী), হোয়াইট মার্ভেল (সাদা), মিস্টিক ভ্যান ইজক (গোলাপী), হ্যাপি জেনারেশন (সাদা লাল শেড) ও গোল্ডেন টিকিট (হলুদ)। এসব টিউলিপের সৌন্দর্যে তেঁতুলিয়া হয়ে উঠবে এক খণ্ড নেদারল্যান্ড। রঙে রঙে ছড়িয়ে দেবে সৌন্দর্য।
অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা সাদেকুল ইসলাম নামে এক পর্যটক বলেন, নেদারল্যান্ডের টিউলিপ চাষ হচ্ছে এ অঞ্চলে। প্রথমবারের পর দ্বিতীয়বারের মতো টিউলিপ চাষ এ অঞ্চলকে যেমন পর্যটন অঞ্চল হিসেবে সমৃদ্ধ করছে, তেমনি পর্যটন কেন্দ্রিক অর্থনীতির সমৃদ্ধি ঘটছে। যদিও টিউলিপ এখনো ফুটেনি, তবে আমার মতো পর্যটকরা শুনে অনেকে আসতে শুরু করেছেন।
মুর্শিদা খাতুন, মনোয়ারা খাতুন, আয়েশা সিদ্দিকাসহ কয়েকজন নারী উদ্যোক্তা জানান, গত বছর প্রথমবারের মতো আমরা প্রান্তিক ৮ জন নারী মিলে এ অঞ্চলে নেদারল্যান্ডের রাজকীয় টিউলিপ ফুটিয়ে ছিলাম। এ অঞ্চলে টিউলিপ চাষ করে আমরা যেমন সফল হয়েছিলাম তেমনি আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছিলাম। এছাড়া টিউলিপ ফুল দেখতে এ অঞ্চলে প্রচুর পর্যটকের সমাগম ঘটেছিল। আশা করছি এবারও টিউলিপ দৃষ্টি নন্দন সৌন্দর্য ও হাসিতে মুগ্ধ করবে।
ইএসডিও’র পরিচালক (প্রশাসন) ড.সেলিমা আখতার বলেন, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন-পিকেএসএফের আর্থিক সহযোগিতায় আমরা প্রথম গত বছর এ অঞ্চলে আটজন নারী উদ্যোক্তাদের পরিশ্রমে টিউলিপ ফুটিয়ে সফল হয়েছিলাম। টিউলিপ চাষে নারীরাই কাজ করেছে। তারা টিউলিপ ফুটিয়ে পর্যটকদের আকর্ষণ করতে পেরেছে। এবার আরও বেশি নারী সম্পৃক্ত হয়েছে। পাশাপাশি পুরুষরাও যুক্ত হয়েছে। নারীদের পাশাপাশি তাদের স্বামীরাও আমাদের সঙ্গে সম্মেলিতভাবে কাজ করছে। এবার ১০ প্রজাতির টিউলিপ চাষ করা হচ্ছে। এখানে নারীরা যারা কাজ করছে, তাদের হাতে টিউলিপ ফুটে পর্যটকদের আকৃষ্ট করবে ও মুগ্ধ করবে। ইনশাআল্লাহ আমরা আরও সুন্দরভাবে এগিয়ে যাব। নারীরা বিভিন্নভাবে এ কাজে যুক্ত হবে এবং পর্যটনে যেসব বিষয় আছে সেসবেও তারা যুক্ত হয়ে টিউলিপের পর্যটন গড়ে তুলবে।
ইএসডিও’র নির্বাহী পরিচালক ড. মুহম্মদ শহীদ উজ জামান জানান, উত্তরাঞ্চলের পর্যটন শিল্প উন্নয়নে ইকো ট্যুরিজম গড়তে টিউলিপের চাষ শুরু করেছি। দেশের উত্তরের তেঁতুলিয়া একটি সমৃদ্ধ জনপদ। উত্তরাঞ্চলের এটি ট্যুরিজমের বড় পয়েন্টে পরিণত হয়েছে। আমরা জানি যে, এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। সমতলের চা বাগান এখানে অনন্য বৈশিষ্ট তৈরি করেছে। ইএসডিও’র উদ্যোগে পিকেএসএফের সহায়তায় বিগত সময় থেকে বাংলাদেশের একটি উদাহরণ হিসেবে তেঁতুলিয়ার শারিয়াল-দর্জিপাড়া এলাকার ৮ জন কৃষাণী সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছিল। প্রথমবারের মতো খামার পর্যায়ে টিউলিপ উৎপাদন করে প্রমাণ করেছে বাংলাদেশের নারীরা যেকোনো ধরণের উদ্ভাবনে কতোটা সক্ষম। এজন্য তাদেরকে অভিনন্দন ও সারাদেশ জুড়ে মিডিয়ার মাধ্যমে এটি যে সাড়া পড়েছে তার আলোকে এ বছরে এ উদ্যোগটিকে আরও বড় আকারে বিস্তৃত করা হয়েছে। ২০ জন নারী যুক্ত হয়েছে এ টিউলিপ চাষের সঙ্গে। এখানে এক লাখ টিউলিপ বপন করা হয়েছে। এখন অঙ্করোদগম হয়েছে। আগামী দু-সপ্তাহের মধ্যে ১০ ধরণের টিউলিপে রঙিন হয়ে যাবে তেঁতুলিয়ার এই অঞ্চল। বাংলাদেশের উদ্ভাবন উজ্জ্বলতর একটি অবস্থান তৈরি করবে।
তিনি আরও জানান, পর্যটকদের জন্য নূন্যতম টিকেটের ব্যবস্থা রয়েছে। টিকেট কেটে তারা টিউলিপ বাগান দেখতে পাবেন। এতে করে কৃষাণীরা যেমন উপকৃত হবে তেমনি একইভাবে উদ্যোগটি স্থায়িত্ব হবে। এবছর যারা বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসবেন, তাদের জন্য আমাদের কৃষাণ-কৃষাণী ভাই-বোনেরা পর্যটকদের স্বাগত জানানোর জন্য যে সুবিধাগুলো আগে ছিল না, তা এবার করা হয়েছে। টিউলিপ দেখতে আসা পর্যটকদের জন্য থাকছে আবাসন ব্যবস্থা, স্যানিটেশন ব্যবস্থা, দেশীয় লাফা শাকের ঝোল, শিতলের ভর্তা, হাঁসের মাংস, ভাত, দেশী মুরগি, নিরাপদ সবজি, গাভীর খাটি দুধ ও দইসহ সব সুস্বাদু খাবারের ব্যবস্থা।
প্রসঙ্গত, শীত প্রধান অঞ্চলের টিউলিপ ফুল। যার বৈজ্ঞানিক নাম ‘টিউলিপা’। যা অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফুল উৎপাদনকারী উদ্ভিদ। এটি বাগানে কিংবা কাট ফ্লাওয়ার হিসেবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করা হয়। ফুলদানীতে সাজিয়ে রাখার জন্য এর আবেদন অনন্য। বর্ষজীবী ও কন্দযুক্ত প্রজাতির এ গাছটি লিলিয়াসিয়ে পরিবারভূক্ত উদ্ভিদ। টিউলিপের প্রায় ১৫০ প্রজাতি এবং এদের অসংখ্য সংকর রয়েছে। বিভিন্ন ধরণের হাইব্রিডসহ টিউলিপের সকল প্রজাতিকেই সাধারণভাবে টিউলিপ নামে ডাকা হয়। টিউলিপ মূলত বর্ষজীবী ও শীত প্রধান দেশের বসন্তকালীন ফুল হিসেবে পরিচিত।
এসকে দোয়েল/আরকে