ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে ৪৯৫তম স্মারকলিপি জমা দিলেন হানিফ বাংলাদেশী
রাষ্ট্রের নানা অনিয়ম ও অসংগতির বিরুদ্ধে, জনগণের মৌলিক দাবি আদায়ের প্রত্যয় নিয়ে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত প্রতিবাদ জানিয়েছেন হানিফ বাংলাদেশী। তিনি বুধবার (২৫ জানুয়ারি) তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রশাসনে স্বাধীনতার ৫১ বছর ধরে চলমান দুর্নীতি দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ‘বদলে যাও বদলে দাও’ স্লোগানে ৪৯৫তম স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন।
এরই মধ্য দিয়ে শেষ হলো তার টানা ১৬০ কর্মদিবসে দেশের ৪৯৫টি উপজেলায় প্রতিবাদ কর্মসূচি।
জানা যায়, হানিফ বাংলাদেশি সর্বগ্রাসী ঘুষ, দুর্নীতি-দুঃশাসন ও অর্থপাচার এবং নৈতিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে দেশের ৬৪টি জেলা চার বার ঘুরে বেড়িয়েছেন। এবার দেশের ৪৯৫টি উপজেলা একবার ঘুরে ঘুষ-দুর্নীতি, দুঃশাসন ও অর্থপাচার এবং নৈতিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে জেলা-উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী কর্মকর্তাদের হাতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর জমা দিয়েছেন স্মারকলিপি। এটি তার ৪৯৫তম স্মারকলিপি ছিল।
তিনি গত বছর ৫ জুন কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা থেকে এই কর্মসূচি শুরু করেন। টানা ৮ মাসে প্রতিদিন ৩ উপজেলা প্রদক্ষিণ করে বুধবার সকালে উত্তরের জেলা হিমালয়কন্যা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় এসে তার কর্মসূচি সমাপ্ত হয়।
কর্মসূচি সম্পর্কে হানিফ বাংলাদেশি জানান, সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার সর্বক্ষেত্রে সামাজিক, পারিবারিক ও মানবিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় চলছে। ভোট, গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের ওপর হয়েছে নগ্ন হস্তক্ষেপ। হয়েছে ঘুষ-দুর্নীতি, অর্থ পাচার। চরম আকার ধারণ করেছে সামাজিক, মানবিক ও পারিবারিক মূল্যবোধের অবক্ষয়।
দেশের কৃষক উৎপাদনশীল, শ্রমিকরা পরিশ্রমী, ছাত্র যুবকেরা মেধাবী কিন্তু দুনীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদ, দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি আমলা, দুর্নীতিগ্রস্ত বড় বড় ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি টাকা বিদেশ পাচার করে আমাদের সকল অর্জনকে ব্যাহত করছে।
এত সম্ভাবনা থাকার পরেও দেশ যতটুকু এগিয়ে যাওয়ার কথা ততটুকু এগিয়ে যেতে পারছে না। দেশে অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন হচ্ছে কিন্তু মানবিক মূল্যবোধের পতন হচ্ছে। আশা করি সম্ভাবনাময় এই অগ্রযাত্রা এগিয়ে নিতে এবং চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে ঘুষ, দুর্নীতি ও অর্থপাচার বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা ও পাচারকৃত অর্থ ফেরত এনে যুবকদের মাঝে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে সহজ শর্তে ঋণ ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। ভোট গণতন্ত্র আইনের শাসনের মান উন্নয়নে আরও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে বাংলাদেশ বিশ্বে একটি আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।
হানিফ বাংলাদেশী আরও বলেন, আমি দেশের নানা অসঙ্গতি নিয়ে সব সময় প্রতিবাদ করে থাকি। এর আগেও ঢাকা শহরসহ দেশের জনবহুল স্থানে পাবলিক টয়লেট স্থাপনের আন্দোলন করেছি। ২০১৩-২০১৪ সালে দেশে যখন জ্বালাও-পোড়াও শুরু হয় তখন দুই নেতৃত্ব বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে ভোটাধিকারের দাবিতে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া হেঁটে পদযাত্রা করেছি, নির্বাচন কমিশনকে পঁচা আপেল দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছি। সংসদ ভবনের চার পাশে ১৬ বার প্রদক্ষিণ করে স্পিকারের বরাবর স্বারকলিপি দিয়েছি।
২০২০ সালে সর্বগ্রাসী দুর্নীতির বিরুদ্ধে ৬৪ জেলা প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসক অফিসে স্মারকলিপি দিয়েছি। ২০২০ সীমান্ত হত্যা বন্ধের দাবিতে ‘প্রতীকী লাশ’ নিয়ে পদযাত্রা করেছি। ২০২১ সালে দেশব্যাপী মার্চ ফর ডেমোক্রেসি গণতন্ত্রের জন্য গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করছি। বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের দাবিতে সংসদ ভবনের সামনে ঘণ্টা বাজিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছি। একই বছর নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নের দাবিতে মাথায় ভোটের বাক্স নিয়ে ৬৪ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি।
এসকে দোয়েল/আরকে