‘সরকারি কাজ এই নিয়মে হয় না, তোমার টাকা তুমি নিয়ে নিও’

Dhaka Post Desk

জেলা প্রতিনিধি, নোয়াখালী 

২৬ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮:০২ পিএম


‘সরকারি কাজ এই নিয়মে হয় না, তোমার টাকা তুমি নিয়ে নিও’

নোয়াখালী সদর উপজেলায় ‘বীর নিবাস’ নির্মাণে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলামের পরিবারের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নেওয়ার একটি অডিও রেকর্ড পাওয়া গেছে। ৩ মিনিট ২৩ সেকেন্ডের ওই অডিওতে ৪-৫ দিনের মধ্যে সেই টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলতে শোনা যায় ঠিকাদার মো. রাসেলকে।

এই বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলামের নাতি ইকবাল হোসেন ও ঠিকাদার মো. রাসেলের মধ্যে মুঠোফোনে হওয়া কথোপকথন তুলে ধরা হলো-

মুক্তিযোদ্ধার নাতি ইকবাল হোসেন : আপনি যেহেতু আমাদের বাড়তি সুবিধা দেননি তাহলে আমাদের দেওয়া ৩০ হাজার টাকা দিয়ে দেন।

ঠিকাদার রাসেল : সরকারি কাজ এ নিয়মে হয় না, তোমার টাকা তুমি নিয়ে নিও।

ইকবাল হোসেন : কোন নিয়মে হয়?
ঠিকাদার রাসেল : তুমি কাজ করবা তো? আমি দেখমু। আজকে যে ডিস্টার্ব করেছো, আমাদের কোনো ভুল হইসে? তুমিই বলো ঢালাই, ইট, বালু, অফিস-আদালত কোনটাতে ভুল পাইসো?

ইকবাল হোসেন : আমি ভুল পাইসি। আচ্ছা যাক, আপনি আমার ওই ৩০ হাজার টাকা দিয়ে দেন। এখন আপনি বলেন, কবে টাকা দেবেন? এ ঘরে থেকে মানুষ মরলে ঘরের দরকার নেই।
ঠিকাদার রাসেল : ৪-৫ দিন পর নিয়ে নিও। আমি তারিখ দিতে পারব না। তুমি কাজ করাই নিবা তো, তাহলে পিআইওর (প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা) কাছ থেকে শুনে আইসো।

ইকবাল হোসেন : সেটা পরের হিসাব। করাইলে করাব, নইলে আমার ঘরের দরকার নেই।
ঠিকাদার রাসেল : তোমার যদি কাজ করতে হয় এখন থেকে তুমি ইঞ্জিনিয়ার বা সাইটের কাউকে ডিস্টার্ব করতে পারবা না। কোনো মালামাল নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে পারবা না।

ইকবাল হোসেন : ঠিক আছে।
ঠিকাদার রাসেল : আমার মনে হয় এখানে সাংঘর্ষিক অবস্থা তৈরি হবে। তবে সাংঘর্ষিক নয়, আমি এখানে কাজ করতে আসছি।

তবে ওই অডিওর বিষয়টি অস্বীকার করে মেসার্স রাসেল ট্রেডার্সের সত্ত্বাধিকারী ঠিকাদার মো. রাসেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, টাকা নেওয়ার কোনো প্রমাণ নেই। অডিওটি আমি শুনিনি। আমাকে দিয়েন তাহলে শুনে দেখব এটা আমার কি না। আর আমার বিরুদ্ধে তদন্ত করে দেখেন আমি কোনো অন্যায় করেছি কি না।

এ বিষয়ে ইকবাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, টাকা দেওয়ার বিষয়ে আমাদের কাছে প্রমাণ আছে। এছাড়া আমাদের হুমকি দেওয়া হয়েছে। আমরা এখনো ঘরবন্দী হয়ে আছি। আশা করি বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও পড়ুন : বীর নিবাস নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ করায় বিপদে মুক্তিযোদ্ধার পরিবার

এই বিষয়ে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে জান্নাতুল ফেরদাউস ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার বাবা শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলামকে একটি ঘর উপহার দিয়েছেন। সেই ঘরের কাজ ভালোভাবে করবেন বলে ঠিকাদার রাসেল আমার কাছে এক লাখ টাকা দাবি করেন। আমি ৬০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলি। প্রথমে ৩০ হাজার টাকা দিয়েছি এবং বাকি টাকা ছাদ ঢালাইয়ের পর দেওয়ার কথা। কিন্তু তিনি নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করায় আমার সন্তান অভিযোগ করায় তিনি আমাদের দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। ফলে ভয়ে আমরা কেউ বাড়ি থেকে বের হই না। এ বিষয়ে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হবে। তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। ঠিকাদারের কাজের আদেশ বাতিল করা হবে।

হাসিব আল আমিন/এমজেইউ 

Link copied