স্বতন্ত্র প্রার্থীর এজেন্টকে কেন্দ্রে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ

বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম উপজেলা) ও বগুড়া-৬ (সদর উপজেলা) আসনের উপনির্বাচনে ভোট সকাল থেকে শুরু হয়েছে। বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৮টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। এই দুই সংসদীয় আসনে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হচ্ছে।
অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মান্নান আকন্দ অভিযোগ করেছেন তার এজেন্টকে কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি এবং ভোটকেন্দ্র দখল করে রেখেছে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা। ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি খুবই কম।
বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে মোট প্রার্থী ১১ জন। বগুড়া ৪ আসনের ৯ জন প্রার্থী। এর মধ্যেই দুই আসনেই ব্যাপক আলোচিত প্রার্থী ইউটিউবার আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম তার নিজ ভোট কেন্দ্র এরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোট দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী রাগেবুল আহসান রিপু শহরের শিববাটি হাসনা জাহান স্কুল কেন্দ্রে এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মান্নান আকন্দ জুবলি ইন্সটিউট কেন্দ্রে ভোট প্রদান করেছেন।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্র জানা গেছে, বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ২৮ হাজার ৪৬৯। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১১২টি। আর ভোটকক্ষের সংখ্যা ৭৭৭টি। এর মধ্যে অস্থায়ী কক্ষ থাকবে ৪২টি। এই আসনে মোট প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ১১২ জন ও সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ৭৭৭ এবং পোলিং অফিসার থাকবে ১ হাজার ৫৫৪ জন কর্মকর্তা কাজ করছেন।
বগুড়া-৬ (সদর) আসনে মোট ভোটার রয়েছেন ৪ লাখ ১০ হাজার ৭৪৩ জন। ভোটকেন্দ্র ১৪৩টি ও কক্ষ ১ হাজার ১৭টি। এ আসনে ১৪৩ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ১ হাজার ১৭ সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও ২ হাজার ৩৪ জন পোলিং কর্মকর্তা নির্বাচনের ভোটগ্রহণের দায়িত্ব পালন করছেন ।
গোয়েন্দা শাখার সূত্র জানা গেছে, বগুড়ার দুই আসনের ২৫৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৫৮টিকেই ঝুঁকিপূর্ণ (অধিক গুরুত্বপূর্ণ) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যার মধ্যে বগুড়া-৬ সদর আসনে মোট ১৪৩টির মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের সংখ্যা ৭৯টি। বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনেও মোট ১১২টির মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ৭৯টি।
দুই আসনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বগুড়া-৪-এর কাহালু উপজেলার ভোটকেন্দ্রগুলো। ওই উপজেলায় ৬৩টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৫৬টিই ঝুঁকিপূর্ণ। ওই আসনের নন্দীগ্রাম উপজেলার ৪৯টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ২৩টি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অন্যদিকে বগুড়া-৬ সদর আসনে ১৪৩টি কেন্দ্রের মধ্যে সাধারণ কেন্দ্র ৬৪টি। বাকি ৭৯টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ।
বগুড়া-৬ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মান্নান আকন্দ অভিযোগে করেছেন, সদর উপজেলার রাজাপুর, নামজা কেন্দ্রে তার এজেন্টকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি ও বগুড়া কলেজ এবং শাখারিয়া ভোটকেন্দ্র আওয়ামী লীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীরা দখল করে নিয়েছে।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী রাগেবুল আহসান জানান, ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হয়েছে। ভোটারদের উপস্থিতি ভালো, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটারদের উপস্থিতি আরও বাড়বে। স্বতন্ত্র প্রার্থী মান্নানের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, কোথাও কোন এমন ঘটনা ঘটেনি। আপনারা সব কেন্দ্র ঘুরে দেখেন, কোনো কেন্দ্র কেউ দখলে নেয়নি।
বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ চক্রবত্তী জানান, বগুড়ার দুটি আসনের সকাল থেকে শান্তিপূনভাবে ভোটগ্রহন শুরু হয়েছে। ভোটারদের শান্তিপুণ ভোট প্রদানের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। এছাড়াও র্যাব-পুলিশ ও বিজিবির টহল দিচ্ছে।
বগুড়া জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, দুই আসনের উপনির্বাচনে ভোট সকাল ৮টা থেকে শান্তিপুনভাবে শুরু হয়েছে। সকাল ৯টা পযন্ত কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। নিবাচনের ভোটকেন্দ্র ও ভোটারদের নিরাপত্তার জন্য ৩ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ৩৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন। পাশাপাশি মোতায়ন রয়েছে ১৬ প্লাটুন বিজিবি। এছাড়াও ভোটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সাড়ে ৪ হাজার নিরাপত্তা কর্মী কাজ করছেন।
তিনি আরও জানান, ভোটারদের জন্য ভোটকেন্দ্রের বাইরে ও নির্বাচনী এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশের স্ট্রাকিং ফোর্স ও বিজিবি সদস্যরা টহল দেবে। কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা নির্বাচনের সুষ্ঠু পরি্বেশ বিঘ্নিত করতে পারবে না। গত এক ঘণ্টায় কোনো প্রার্থী অভিযোগ করেনি।
আলমগীর হোসেন/আরকে