শত বছরেও পাকা হয়নি সড়ক, ৪ গ্রামে লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া

Dhaka Post Desk

জেলা প্রতিনিধি, নোয়াখালী 

০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০:৫২ এএম


‘আমার বয়স ৭০ থেকে ৭২ বছর হবে। ছোটবেলা থেকেই রাস্তাটি কাঁচা দেখে আসছি। কাঁদামাটিতে এখনো চলাফেরা করছি। ঝড় বৃষ্টি হলে ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলে যেতে পারে না। আমরা মসজিদে যেতে পারি না। এমনকি ভালো বিয়ের সম্বন্ধ আসলেও তা আর হয় না। এই রাস্তার পরের অনেক রাস্তা পাকা হয়ে গেছে কিন্তু এই রাস্তা পাকা হয়নি।’ শত বছরেও ৫ কিলোমিটার সড়ক পাকা না হওয়ায় এভাবেই নিজেদের দুর্ভোগ-দুর্দশার কথা বলছিলেন নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার বুড়িরচর ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুল আউয়াল। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাতিয়া উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের উত্তর সাগরিয়া, পশ্চিম সাগরিয়া, জোরখালী ও গুল্লাখালী গ্রামের ওপর দিয়ে যাওয়া ৫ কিলোমিটারের হাজী মোয়াজ্জেম হোসেন সড়ক দিয়ে প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াত। প্রধান সড়কের সঙ্গে যোগাযোগের এই একমাত্র সড়কটিতে ৪ গ্রামের মানুষের বসবাস। এলাকার একমাত্র সড়কটি সংস্কার না করায় শহর থেকে এই এলাকার মানুষ প্রায় বিচ্ছিন্ন। তাই যাতায়াত, শিক্ষা ও রোগী পরিবহনে ভীষণ সমস্যা হয়। 

সরেজমিনে দেখা যায়, পাকা সড়কের অভাবে চার গ্রামের মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। যাতায়াতের এই সমস্যার কারণে উত্তর সাগরিয়া, পশ্চিম সাগরিয়া, জোরখালী ও গুল্লাখালী এই চার গ্রাম উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত রয়েছে। উপজেলার বেশ কিছু এলাকায় সড়ক উন্নয়নকাজ দৃশ্যমান হলেও এখনো এমন বেশ কিছু গ্রাম রয়ে গেছে, যেখানে পাকা রাস্তার অভাবে লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া।

dhakapost

৯০ বছরের বৃদ্ধ নুর আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছোটবেলা থেকে কাঁচা রাস্তায় চলেছি। এখনো চলতে হচ্ছে। আমার বয়স ৯০ বছরের ওপরে। একটা পাকা রাস্তা হলে খুব উপকার হতো।

ষাটোর্ধ বৃদ্ধ শাহ আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, হইবো হইবো বলে কিন্তু এই রাস্তা হয় না। সব এলাকার রাস্তা হয় কিন্তু আমাদের রাস্তা হয় না। বৃষ্টি-বর্ষায় কাঁদামাটিতে আমাদের জীবন শেষ। হাট-বাজারে যেতে পারি না। বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারে না। মসজিদে যেতে পারি না। এই কষ্ট কাউকে বুঝানো যাবে না।

বৃদ্ধা হালিমা খাতুন (৪০) ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের অনেক অসুবিধা হয়। ডেলিভারি রোগী নেওয়া যায় না। এক হাটু লোদ (কাদা) থাকে। রাত বিরাতে হাসপাতালে নেওয়া যায় না। বাচ্চা-কাচ্চা স্কুল-মাদরাসায় যেতে পারে না।

তাব্বাসুম সুলতানা (১৬) নামের দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই রাস্তাটা এই এলাকার মানুষের জন্য একটা অভিশাপ। বিশেষ করে যারা স্কুলে যায় তাদের ক্ষেত্রে খুবই খারাপ প্রভাব পড়ে। স্কুলে নিয়মিত ক্লাস করতে পারে না। একটা পোশাক নষ্ট হলে দুইটা পোশাক কেনার মতো সামর্থ্য অনেক দরিদ্র পরিবারের নেই। নিয়মিত স্কুলে না গেলে ফলাফলের ওপর প্রভাব পড়ে। 

নুর নাহার (৪০) নামের আরেক বাসিন্দা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভোট আসলে বলে রাস্তা হবে কিন্তু ভোট শেষ হলে আর খবর থাকে না। খুব কষ্ট করে এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। সামন্য বৃষ্টি হলেই কাদা পানিতে চলাচল করা যায় না। যুদ্ধ করে চলাচল করতে হয়।

শাহনাজ নামের এক বাসিন্দা ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই রাস্তা দিয়ে চার গ্রামের এক থেকে দেড় লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াত। রাস্তার বয়স একশো থেকে দেড়শো বছর। অনেক রাস্তা হয়ে গেছে কিন্তু এই রাস্তা টা হচ্ছেনা। অনেক নেতা এই সড়ক দিয়ে চলাচল করে। আমরা বোধহয় আওয়ামী লীগ করি বলে পাকা রাস্তাটা পাব না। আমরা প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ করছি খুব শীঘ্রই যেন এই রাস্তাটা পাকা করে দেওয়া হয়।

বুড়িরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই রাস্তাটির জন্য আমাদের সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদাউস মহোদয়ের কাছে বলেছি। সড়কের অভাবে মানুষের খুব দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আশপাশের অনেক রাস্তা পাকা হয়েছে কিন্তু বিশাল মানুষের চলাফেরার সড়কটি পাকা হচ্ছে না। সংসদ সদস্য মহোদয় যদি একটু চেষ্টা করতেন তাহলে আমাদের জন্য খুব উপকার হত।

হাতিয়া উপজেলার প্রকৌশলী (এলজিইডি) মো. সাজ্জাদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাস্তাটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে এ রাস্তা এখনো প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হয়নি। প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হলে তখন হয়তো রাস্তাটি করা সম্ভব হতে পারে। সামনে কোনো প্রকল্প আসলে আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সড়কটি পাকা করব।

হাসিব আল আমিন/আরকে 

Link copied