পা দিয়ে লিখে এইচএসসি পাস করা জসিম পেলেন ৬০ হাজার টাকা

দুই হাত না থাকায় শুধু পা দিয়ে লিখে এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করেছেন ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার জসিম মাতুব্বর (২০)। সেই হার না মানা জসিমকে ৬০ হাজার টাকার আর্থিক সহায়তা দিয়েছে নগরকান্দা উপজেলা প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সোয়া ১২টার দিকে উপজেলা কার্যালয়ে নিজ কক্ষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মঈনুল হক ও নগরকান্দা উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান সরদার এ টাকা জসিমের হাতে তুলে দেন।
শারীরিক প্রতিবন্ধী জসিম উপজেলার তালমা ইউনিয়নের কদমতলী গ্রামের কৃষক মো. হানিফ মাতুব্বর ও গৃহিনী তছিরন বেগম দম্পতির ছেলে। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে জসিম সবার বড়। জন্মের পর থেকে তার দুটি হাত না থাকলেও জীবনসংগ্রামে কখনো থেমে থাকেননি তিনি। বুধবার প্রকাশিত এইচএসসি পরীক্ষার ফলে জানা যায়, তিনি বাণিজ্য শাখা থেকে জিপিএ-৪.২৯ পেয়ে পাস করেছেন। এর আগে একইভাবে জসিম পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হয়েছে।
জসিম মাতুব্বর বলেন, পা দিয়ে লিখে এইচএসসি পাস করার খবর পেয়ে ইউএনও স্যার আমাকে তার অফিসে ডেকে নিয়ে প্রথমে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। পরে আমাকে নগদ ৬০ হাজার টাকা দিয়েছেন। এই টাকা দিয়ে তিনি পেঁয়াজের জমি বন্ধক রাখবেন। সেই জমিতে সফল ফলিয়ে যা আয় হবে, তা দিয়ে পড়ালেখার খরচ চালাব। এটা আমার জন্য পরম পাওয়া।
তিনি বলেন, আমার বাবা একজন কৃষক। তাই পড়ালেখার পাশাপাশি জীবিকার তাগিদে নগরকান্দা বাজারের মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটে মনা টেলিকমে মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ করি। দুই হাত না থাকা সত্ত্বেও দোকানের মালিক সোহাগ ভাই (সোহাগ শেখ) আমাকে কাজ শিখিয়েছেন।আমি পুরোপুরি কাজ শিখে নিজে আয় করতে পারছি। আমি সকলের কাছে দোয়া চাই। আমি যেন পড়াশুনা শেষ করে একটি সরকারি চাকরি পাই।
মনা টেলিকমের মালিক সোহাগ শেখ বলেন, প্রতিবন্ধী জসিমকে দেখে প্রথমে আমার অনেক মায়া লাগছিল। পরে তাকে আমার দোকানে মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ শিখতে বলি। এতে সে রাজি হলে তাকে আমি কাজ শিখিয়ে দেই। বর্তমানে জসিম পা দিয়েই দক্ষতার সঙ্গে মোবাইল সার্ভিসিং কাজ করে। পাশাপাশি কম্পিউটারের কিছু কাজও পারে। সেই সঙ্গে পড়ালেখাও চালিয়ে যাচ্ছে।
নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মঈনুল হক বলেন, অদম্য মেধাবী জসিমের এইচএসসি পরীক্ষায় সফলতার গল্প আমি সংবাদ মাধ্যমে শুনে তাকে অফিসে ডেকে এনে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছি, মিষ্টি খাইয়েছি। আর্থিক অভাবের কারণে এই মেধাবীর উচ্চশিক্ষা যাতে থমকে না যায়, সেজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে এককালীন আর্থিক শিক্ষা সহায়তা দিয়েছি।
জহির হোসেন/আরকে