খুমেক হাসপাতাল থেকে নবজাতক চুরি, ২৩ দিন পর উদ্ধার

খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের গেটের সামনে থেকে চুরি হওয়া নবজাতককে উদ্ধার করেছে পুলিশ। চুরি হওয়ার ২৩ দিন পর বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পার বিষ্ণুপুর গ্রাম থেকে নবজাতককে (ছেলে) উদ্ধার করা হয়।
সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমতাজুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে নড়াইলের কালিয়া থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তথ্য যাচাইয়ের জন্য নিঃসন্তান এক দম্পতিকে থানায় নিয়ে এসেছি। এই দম্পতি জানিয়েছেন, তারা ঢাকা থেকে শিশুটিকে কিনেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এর আগে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তারা কারাগারে রয়েছেন। তবে যে নারী নবজাতককে চুরি করেছিলেন তাকে এখনো গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
পরবর্তী করণীয় বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, শিশুটিকে বর্তমানে খুমেক হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) রাখা হয়েছে। সেখানে তার মা-ও রয়েছেন। এখন ওই শিশু ও তার বাবা-মায়ের ডিএনএ টেস্টের পর রিপোর্ট আদালতে প্রেরণ করা হবে। আদালত পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ জানুয়ারি সকালে রানিমা হাসপাতালে ভর্তি হন। দুপুরের দিকে তিনি সুস্থ বাচ্চা জন্ম দেন। বিকেল ৫টার দিকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। তারা ছাড়পত্র নিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের গেটে আসেন। এ সময় নবজাতকের বাবা তুরাব আলি ও আত্মীয়স্বজন অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করা নিয়ে কথা বলছিলেন। অতিরিক্ত ভাড়া চাওয়া নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সচালক ও রোগীর আত্মীয়স্বজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তা হাতাহাতি পর্যন্ত পৌঁছায়। নবজাতকটি তার খালা সোনিয়া বেগমের কোলে ছিল। হাতাহাতি ঠেকাতে তিনি কোলে থাকা নবজাতককে পাশের এক নারীর কাছে দেন। ওই নারী নবজাতককে নিয়ে কৌশলে চলে যায়। পরে পরিস্থিতি শান্ত হলে নবজাতককে নিতে গিয়ে দেখেন ওই নারী সেখানে নেই। পরে এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সিসিটিভি ফুটেজে মাস্ক পরিহিত এক নারীকে নবজাতকটিকে নিয়ে পালিয়ে যেতে দেখেন। এ ঘটনায় ২৫ জানুয়ারি নবজাতকের নানা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সোনাডাঙ্গা মডেল থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) তোফায়েল বলেন, নড়াইলের পার বিষ্ণুপুর গ্রামে একটি নবজাতক বিক্রি হয়েছে, এমন খবর পেয়ে সেখানে অভিযান চালানো হয়। পরে শিশুটিকে উদ্ধার করে খুলনায় আনা হয়েছে। বর্তমানে শিশুটি তার মা রানিমার কাছে রয়েছে। শিশুটির ডিএনএ টেস্ট করে নিশ্চিত হওয়ার পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তাদেরকে খুমেকের ওসিসিতে রাখা হয়েছে।
নবজাতকটির মা রানিমা বেগম দাবি করেন, এই শিশুটিই তার হারিয়ে যাওয়া ছেলে (নবজাতক)। জন্মের পর তিনি যেমন দেখেছিলেন এখনো তার সঙ্গে মিল রয়েছে। হারিয়ে যাওয়া ছেলেকে অক্ষত অবস্থায় পেয়ে তিনি খুব খুশি। এক মেয়ে হওয়ার ১৩ বছর পর ওই ছেলে শিশুটি জন্ম দিয়েছেন তিনি।
মোহাম্মদ মিলন/এমজেইউ