ফুলকপির কেজিতে কৃষক পান ৫ টাকা, বাজারে দাম ২৫ টাকা
গত ২০ বছর ধরে ফুলকপির চাষাবাদ করেন পঞ্চাশোর্ধ্ব কৃষক আজামুল হক। চলতি বছরেও তিনি ৪ বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষাবাদ করেছেন। ফলন আসার প্রথম দিকে দাম কিছুটা ভালো পেলেও পরে তা কমে গেছে। এ বছর তাকে কেজি প্রতি ৫-৭ টাকা করে ফুলকপি বিক্রি করতে হয়েছে।
অথচ গত বছর তিনি ফুলকপি বিক্রি করেছেন ১২০০-১৩০০ টাকা মণ হিসেবে যা কেজি প্রতি ৪০ টাকারও বেশি ছিল। চলতি শীত মৌসুমে ২০০-৩০০ টাকা মণ দরে ফুলকপি বিক্রি করতে হয়েছে তাকে।
কৃষক আজামুল হকের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার মরিচাডাঙ্গা গ্রামে। মাঠে ফসলের জমিতে কথা হয় তার সঙ্গে। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, চলতি শীত মৌসুমে ৪ বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষাবাদ করে লোকসান হয়েছে ১৮ হাজার টাকা। তবে প্রথমদিকে ১০-১২ টাকা কেজি পেলেও বেশিরভাগ ফুলকপি বিক্রি করতে হয়েছে ৫-৭ টাকা কেজি দরে।
কৃষক আজামুল হক আরও বলেন, গত বছর আড়াই বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষাবাদ করে খরচ বাদ দিয়ে লাভ হয়েছিল প্রায় এক লাখ টাকার ওপরে। অথচ এবার ৪ বিঘাতে লেকসান ১৮ হাজার টাকা। খরচের টাকাও ওঠেনি ফুলকপি বিক্রি করে। এবার চাষাবাদ অনেক হয়েছে, তাই দামও অনেক কম।
সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের কৃষক সুমন আলী জানান, প্রতিবছরের মতো এই বছরেও ২ বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষাবাদ করেছিলাম। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও বাম্পার হয়েছিল। কিন্তু দাম বেশি না হওয়ায় দুই বিঘা ফুলকপি চাষাবাদ করে একটা টাকাও লাভ করতে পারিনি। শেষ মুহূর্তে কিছু ফুলকপি থাকা অবস্থায় জমিতে হালচাষ করে সেখানে ধান লাগিয়েছি।
কৃষক ইউসুফ আলী দুই জাতের আগাম ও শীতকালীন ফুলকপি চাষাবাদ করেছিলেন। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, প্রায় ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে ফুলকপির চাষাবাদ করি। এমনকি শুরুর দিকে ১-২ টাকা পিস হিসেবেও ফুলকপি বিক্রি করেছি। কিন্তু চলতি মৌসুমের মতো ক্ষতিগ্রস্ত হইনি কোনোদিন। অথচ আগাম জাতের এক বিঘা ফুলকপিতেই লাভ হয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা।
এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাইকারী বাজার পুরাতন বাজারে একই সময়ে ফুলকপি বিক্রি হতে দেখা গেছে ৮-১৩ টাকা কেজি দরে। সেখানকার পাইকারী ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম জানান, কৃষকদের কাছ থেকে আমরা কিনে নেই। পরে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করি। এতে কেজি প্রতি ফুলকপিতে ২-৩ টাকা লাভ করে আমাদেরকে বিক্রি করতে হয়।
অন্যদিকে খুচরা বাজারে ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকা কেজি দরে। নিউমার্কেট খুচরা বাজার ও ভ্রাম্যমাণ খুচরা বিক্রেতারা জানান, ১০-১৬ টাকায় কিনে তারা ২০-২৫ টাকায় ফুলকপি বিক্রি করছেন। খুচরা বিক্রেতা মাসুদ রানা বলেন, আমরা পাইকারি বাজার থেকে যেমন দামে কিনি, খুচরা বাজারে এর থেকে কয়েক টাকা লাভ করে বিক্রি করি। তবে এ বছর শীতকালীন ফুলকপির দাম একটু কম ছিল।
তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে চলতি মৌসুমে খুব বেশি ফুলকপির চাষাবাদ হয়নি বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। দাম বেশি পেতে কৃষকদের কৌশলী হতে ও বাজার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ধারণা রাখার পরামর্শ কৃষি বিভাগের। চলতি শীত মৌসুমে জেলায় ৯৪৫ হেক্টর জমিতে ফুলকপির চাষাবাদ হয়েছে বলে জানান কৃষি বিভাগ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, যেকোনো বছর ফসলের দাম বেশি পেলে কৃষকরা পরের বছর অধিক পরিমাণে তা চাষাবাদ করে থাকে। গত বছর ফুলকপির ভালো দাম ছিল। তবে এসব ক্ষেত্রে কৃষকদের কৌশলী হতে হবে। আগাম জাতের ফুলকপি চাষাবাদ করলে ভালো দাম পাওয়া যাবে।
তিনি আরও বলেন, অনেক সময় বিভিন্ন বীজ কোম্পানির লোকজনের প্ররোচনায় পড়ে কৃষকরা বিভ্রান্ত হয়ে ফসল চাষাবাদ করে থাকে। সেক্ষেত্রে কোনো ফসল কখন চাষাবাদ করলে ভালো দাম পাওয়া যাবে তা জানতে কৃষি বিভাগের স্থানীয় উপ-সহকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে চাষাবাদ করতে হবে। গত কয়েকদিন আগে আমি নিজেও ৬ টাকা কেজি হিসেবে ফুলকপি কিনেছি। কিন্তু এই কপি যখন মৌসুমের শুরুতে ছিল তখন বিক্রি হয়েছে ৮০-৯০ টাকা কেজি দরে। তাই একটা ফুলকপির ওজন দুই কেজি হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা না করে এক কেজি হওয়া মাত্রাই ভালো দাম পেলে তা বিক্রি করে দিতে হবে।
জাহাঙ্গীর আলম/আরকে