বিএনপির সভায় হাতাহাতি-চেয়ার ভাঙচুর, সভা পণ্ড

ফরিদপুরে তিনটি উপজেলার স্থগিত কমিটির সদস্যদের নিয়ে সভা করায় এবং জেলা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন সদস্যকে আমন্ত্রণ না জানানোয় জেলা বিএনপির একাংশের প্রতিবাদে সভায় হট্টগোলের সৃষ্টি হয়েছে। এ সময় হাতাহাতি ও চেয়ারসহ আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়। ফলে একপর্যায়ে সভাটি পণ্ড হয়ে যায়।
বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শহরের ফরিদ শাহ সড়কের মনা প্লাজার চারতলায় অবস্থিত জেলা বিএনপির কার্যালয়ে সভা চলাকালীন এ ঘটনা ঘটে।
জেলা বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে বিএনপির ১০ দফা দাবির সমর্থনে পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এ কর্মসূচিকে সামনে রেখে জেলা সদরে বিএনপি কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। এতে জেলা বিএনপির পাশাপাশি বাকি ৯টি উপজেলার বিএনপির পাঁচজন করে নেতা উপস্থিত ছিলেন।
গত ২৯ জানুয়ারি আলফাডাঙ্গা উপজেলা ও পৌরসভা, সদরপুর উপজেলা ও পৌরসভা এবং ভাঙ্গা পৌরসভা গঠিত আহ্বায়ক কমিটি স্থগিত করা হয়। কেন্দ্রীয় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স এ চিঠিতে স্বাক্ষর করেন। চিঠি দেওয়া হয় জেলা কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবকে।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জুলফিকার হোসেন ওরফে জুয়েল বলেন, ওই সভায় তাকেসহ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আফজাল হোসেন ওরফে পলাশ, খন্দকার ফজলুল হক ওরফে টুলু ও দেলোয়ার হোসেন ওরফে দিলাকে আমন্ত্রণ না জানালেও ঢাকা থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে স্থগিত করা আলফাডাঙ্গা, ভাঙ্গা ও সদপুরের বিলুপ্ত করা পাঁচটি কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, এ খবর শুনে তিনি ওই সভায় গিয়ে দলের আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেস আলী ও সদস্য সচিব এ কে কিবরিয়ার কাছে এর ব্যাখ্যা চান। এক পর্যায়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেছ আলী ধমক দিয়ে তাকে বলেন, ‘সংগঠন কীভাবে চলবে তা তোমাদের কাছ থেকে শিখতে হবে নাকি?’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, এরপর সভায় হট্টোগোল শুরু হয়ে যায় এবং নেতাকর্মীরা চেয়ারসহ আসবাবপত্র ভাঙচুর করা শুরু করেন। ঘটে হাতাহাতির ঘটনাও। ওই সময় বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত নেতারা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন এবং এক পর্যায়ে সভাটি পণ্ড হয়ে যায়।
জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এ কে কিবরিয়া ওরফে স্বপন বলেন, ২৫ তারিখের কর্মসূচি পালনের জন্য বুধবার বিকেলে দলীয় কার্যালয়ে একটি প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। স্থগিত কমিটির সদস্যদের আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়ে তিনি বলেন, এটি ছিল একটি রুটিন ওয়ার্ক এজন্য তাদের ডাকা হয়েছিল। জেলা বিএনপির গুরত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতাকে না ডাকার বিষয়ে তিনি বলেন, কমিটির অনেককে জানানো হয়েছে, অনেকে নাও জানতে পারেন। কেউ দাওয়াত না পেলে তা তিনি বলতেই পারেন। আবার অনেকে ফরিদপুরে ছিলেন না বলেও হয়ত আসতে পারেন নি।
তবে সভায় হট্টোগোলের কথা স্বীকার করলেও ভাঙচুর ও সভা পণ্ড হওয়ার দাবি নাকচ করে দেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এ কে কিবরিয়া।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেছ আলী ওরফে ইছা দাবি করে বলেন, জেলা বিএনপির সভায় কোনো গোলযোগ হয়নি। তবে রাজনৈতিক দলের দলীয় সভায় একটু হৈচৈ হতেই পারে। তিনি বলেন, সভায় চেয়ার ভাংচুরের কোন ঘটনা ঘটেনি এবং সন্ধ্যার পর সভার কাজ সুষ্ঠু ভাবেই সমাপ্ত হয়েছে।
এদিকে ওই হট্টগোলের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। হট্টোগোল ও চেয়ার ভাঙচুরের ওই ভিডিওর বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোদাররেছ আলী বলেন, ওই ভিডিও আজকের নয়। বর্তমানে এডিটিং করে অনেক কিছু বলা যায়। কোন সময়ের ভিডিও কোন সময়ের ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
জহির হোসেন/আরকে