‘চাল-ডাল কিনতেই টাকা শেষ, ভালো ইফতার-সেহরি খামু কেমনে’

‘সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনি শেষে মাত্র ২০০ টাকা পাই। এই টাকায় চাল কিনব, না তরকারি কিনব। মাংস তো চোখেই দেখি না, মাছও জুটে না। চাল-সবজি কিনতেই টাকা থাকে না, সেখানে ভালো ইফতার পামু কই আর ভালো তরকারি দিয়ে সেহরি খামু কেমনে?’
এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার আমিরন, পারভীন ও সূর্যবানুসহ কয়েকজন নারী শ্রমিক।
এই নারী শ্রমিকরা একটি চা-বাগানে কাজ করেন। দিন শেষে হাজিরা জুটে ১৭০ থেকে ২০০ টাকা। এই টাকায় চাল কিনলে সবজি কেনার টাকা হয় না। বাজারে চোখের সামনে মাছ-মাংস ভাসলেও টাকার অভাবে কেনা সম্ভব হয় না। সাড়ে সাত শ টাকা কেজি গরুর মাংস, আড়াই শ গ্রাম মাংস কিনতে গেলেও লাগে দুই শ টাকা। পোল্ট্রি মুরগির দামও অনেক। কেনার সাধ্য নেই। তাই কেউ শুঁটকি, কেউ আলু-বেগুন ভর্তা দিয়ে ভাত খেয়ে রোজা রাখছেন।
রোববার (২৬ মার্চ) এই অসহায় শ্রমিকদের নিয়ে ইফতারের আয়োজন করেছিলেন সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শিশুস্বর্গের প্রতিষ্ঠাতা কবীর আকন্দ। প্রতি রমজানে এরকম অসহায় মানুষদের হাসি ফুটাতে ইফতার, খাদ্যসামগ্রী উপহার, ঈদ উপহারসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে থাকেন তিনি।
পারভীন ও সূর্যবানু বলেন, এরকম ইফতার ভাগ্যে মিলে না। খুব তৃপ্তি নিয়ে ইফতার করলাম। টাকা-পয়সা নেই, তাই ভালো কিছু দিয়ে ইফতার ও সেহরি খেতে পারি না।
আমিরন বলেন, ‘আজ বেগুন ভর্তা ও লাউ-এর তরকারি দিয়ে ভাত খাইয়া রোজা রাখছি। মাছ-মাংস তো চোখেই দেখি না এক ঈদ ছাড়া। ইফতারও ভালোভাবে করতে পারি না। পান্তা ভাত খাইয়াও ইফতার করতে হয়।’
কবির আকন্দ বলেন, সীমান্তের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রতিদিন এই অসহায় শ্রমিকরা মাত্র ১৭০ থেকে ২০০ টাকা হাজিরায় চা-বাগানে কাজ করেন। এই টাকা দিয়ে চাল কিনতে গেলে বাকি খরচের টাকা থাকে না। রমজান মাসে আশা থাকে ভালো কিছু দিয়ে সেহরি খেয়ে রোজা রাখার, ভালো খাবার দিয়ে ইফতারি করার। কিন্তু সেই ভাগ্য তাদের নেই। এদের কারো সেহরি খেতে হয় ভর্তা কিংবা শুঁটকি দিয়ে। আর ইফতারি করতে হয় পান্তা ভাত দিয়ে। আমরা শিশুস্বর্গের পক্ষ থেকে চেষ্টা করছি, তাদের নিয়ে ইফতার করার। সামনে এসব অসহায় মানুষদের ঈদের নতুন জামা, সেমাই-চিনি দিয়ে পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। বিশেষ করে প্রতি ঈদেই আমরা এ অঞ্চলের অসহায়, অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নতুন জামা দিয়ে হাসি ফুটানোর চেষ্টা করি।
এদিকে বেশ কিছু আশ্রয়ণ প্রকল্পে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ভূমি-গৃহহীন হয়ে যারা আশ্রয়ণ প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়েছেন আয়-রোজগারের অভাবে তাদের জীবনও কাটছে অভাবে। বাজারের ঊর্ধ্বগতির কারণে তাদের ভাগ্যে মিলছে না আমিষ জাতীয় খাবার। পবিত্র রমজানে অভাবের কারণে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তাদের। তারা সরকারের সহযোগিতা চান।
এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহাগ চন্দ্র সাহা ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন পর্যন্ত এরকম কোনো খবর পাইনি। নিম্নবিত্ত ও গরিব পরিবারের মাঝে ইতোমধ্যে ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডাব্লিউবি) বিতরণ করা হয়েছে। তাছাড়া ঈদের পূর্বে গরিব পরিবারের মধ্যে ভিজিএফ বিতরণ করা হবে। একইসঙ্গে নয় হাজার পরিবারের মধ্যে টিসিবির পণ্য বিতরণ করা হচ্ছে। খোলা বাজারে ওএমএস-এর চাল বিতরণের কার্যক্রম চলমান আছে। পাশাপাশি খাদ্য অধিদপ্তরের আওতায় গরিব পরিবারের মধ্যে ১৫ টাকা কেজি চাল বিতরণ চলছে। তাই পবিত্র রমজানে গরিব বা নিম্নবিত্ত পরিবারের সমস্যা থাকার কথা না। এরপরও আমাদের কাছে কেউ সাহায্য চাইলে বা ৩৩৩-এর মাধ্যমে যোগাযোগ করলে আমরা সহায়তা করবো।
এসকে দোয়েল/এমজেইউ