আ.লীগ নেতা বড় মনিরের বিরুদ্ধে অন্তঃসত্ত্বা কিশোরীর মামলা

টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব গোলাম কিবরিয়া বড় মনিরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছে এক অন্তঃসত্ত্বা কিশোরী। গতকাল বুধবার (৫ এপ্রিল) রাতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ভুক্তভোগী ওই কিশোরী টাঙ্গাইল সদর থানায় মামলা করে। এতে বড় মনিরের স্ত্রী নিগার আফতাবকেও আসামি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে টাঙ্গাইল সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবু ছালাম মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
অভিযুক্ত গোলাম কিবরিয়া বড় মনির টাঙ্গাইল-২ (ভূঞাপুর-গোপালপুর) আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনিরের বড় ভাই।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ওই কিশোরীর বাবা-মা মারা গেছেন। জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে তার ভাইয়ের সঙ্গে ঝামেলার কারণে ওই কিশোরী টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব গোলাম কিবরিয়া বড় মনিরের কাছে সহযোগিতা চায়। বড় মনির তাকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে বাসায় ডেকে নেন। পরে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দেন। ওই কিশোরী তার প্রস্তাবে রাজি না হলে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন এবং মোবাইলে ছবি তুলে রাখেন। পরবর্তীতে তুলে রাখা ছবি দেখিয়ে বারবার তাকে ধর্ষণ করেন বড় মনির।
বর্তমানে ওই কিশোরী তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তার গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ দেন বড় মনির। কিন্তু সন্তান নষ্ট করতে রাজি না হওয়ায় গত ২৯ মার্চ রাত ৮টার দিকে বড় মনির তার শ্বশুরবাড়ি আদালতপাড়ায় তাকে তুলে নিয়ে যান। সেখানে গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। কিন্তু বাচ্চা নষ্ট করতে রাজি না হওয়ায় ওই বাসার একটি কক্ষে তাকে তালাবদ্ধ করে রাখেন। পরে তাকে সেখানে আবার ধর্ষণ করেন। সেখানে বড় মনিরের স্ত্রী তাকে মারপিট করেন। এতে ওই কিশোরী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রাত ৩টার দিকে বাসায় পৌঁছে দেন বড় মনির। তারপর থেকে তাকে নানা হুমকি দেওয়া হচ্ছে। শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ থাকার কারণে মামলা করতে বিলম্ব হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে ওই কিশোরী।
এদিকে মামলা দায়েরের পর বৃহস্পতিবার সকালে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ওই কিশোরীর মেডিকেল পরীক্ষা শেষে জবানবন্দির জন্য আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত গোলাম কিবরিয়া বড় মনিরের বক্তব্য নিতে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
টাঙ্গাইল সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবু ছালাম মিয়া জানান, গোলাম কিবরিয়া বড় মনিরের বিরুদ্ধে থানায় একটি ধর্ষণ মামলা করেছে এক কিশোরী। মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে। তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. খন্দকার সাদিকুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে মেয়েটিকে ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। তবে সোয়াপ টেস্ট পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। তবে মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
অভিজিৎ ঘোষ/আরএআর