ভারতীয় ২ নাগরিকের মরদেহ নিয়ে বিপাকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ

অনুপ্রবেশের অভিযোগে শরীয়তপুরের পদ্মা সেতু এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হওয়া ভারতীয় দুই নাগরিক মৃত্যুবরণ করেন। তাদের মরদেহ হস্তান্তর করতে না পেরে বিপাকে পড়েছে শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
তাদের মধ্যে সতেন্দ্র কুমার নামে একজনের মরদেহ এ বছরের ১৮ জানুয়ারি ও বাবুল সিংয়ের মরদেহ ১৬ এপ্রিল থেকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের হিমাগারে রয়েছে।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালে কোনো হিমাগার নেই। সন্দেহজনক মরদেহ সুরতহাল করার জন্য হাসপাতালে আনা হলে কোনো সময় একদিন রাখার প্রয়োজন হয়। সেই মরদেহ রাখার জন্য হাসপাতালের মূল ভবনের নিচতলার একটি কক্ষে দুইটি ফ্রিজে ৮ জনের মরদেহ রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাসপাতালের জেনারেটর সক্ষমতা কম হওয়ায় ফ্রিজে জেনারেটরের সংযোগ দেওয়া যায়নি।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আব্দুস সোবহান ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাসপাতালে সুরতহালের জন্য আনা মরদেহ রাখার জন্য একটি কক্ষে দুটি হিমাগার রয়েছে। সর্বোচ্চ আটজনের মরদেহ রাখা যায় হিমাগারে। ভারতীয় দুজন নাগরিকের মরদেহ এখানে রেখেছেন কারাগার কর্তৃপক্ষ। মরদেহ সাধারণত মাইনাস চার ডিগ্রি থেকে শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখতে হয়। জেনারেটর ব্যবস্থা না থাকায় প্রচণ্ড তাপ ও ঝড়-বৃষ্টির কারণে, বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের জন্য মরদেহ পচনের আশঙ্কা রয়েছে। সুরতহালের মরদেহ রাখতে সমস্যা হবে এখন। হিমাগারের ফ্রিজে কিছুদিন পর পর সমস্যা দেখা দেয়। কিছুদিন আগেও ঢাকা থেকে টেকনিশিয়ান এনে ফ্রিজ ঠিক করতে হয়েছে। হিমাগারে মরদেহ রাখতে হলে প্রতিদিন এক হাজার পাঁচশ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হয়। কিন্তু কারাগার কর্তৃপক্ষ এ পর্যন্ত মাত্র ১ দিনের টাকা জমা দিয়েছে। বাজেট সঙ্কটের কারণে তারা টাকা দিতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন আমাদেরকে। যদিও কারাগার কর্তৃপক্ষ বাজেট প্রাপ্তি সাপেক্ষে টাকা পরিশোধ করবে তবুও হাসপাতালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অডিট হলে আমাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে।
শরীয়তপুর কারাগার সূত্রে জানা যায়, গত বছর পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্ত থেকে তাদেরকে আটক করেন সেনা সদস্যরা। এরপর অনুপ্রবেশ অভিযোগে জাজিরা থানার মামলায় গত জানুয়ারিতে মোট ৪৬ জন ভারতীয় নাগরিক শরীয়তপুর কারাগারে বন্দি ছিলেন। এর মধ্যে ২২ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে। দুজন মারা গেছেন। বাকি ২২ জন বর্তমানে শরীয়তপুর কারাগারে বন্দি রয়েছেন। ২২ জনের মধ্যে ১৮ জন পুরুষ ও ৪ জন নারী।
শরীয়তপুর কারাগারের ডেপুটি জেলার রাকিব শেখ ঢাকা পোস্টকে বলেন, অসুস্থতার কারণে এ বছরের ১৮ জানুয়ারি ভারতীয় নাগরিক সত্যেন্দ্র কুমার (৪০) কারাগারে ও বাক প্রতীবন্ধী বাবুল সিং শনিবার (১৫ এপ্রিল) রাতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। জাজিরা থানায় বাংলাদেশ প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় তাদের মরদেহ জেলা কারাগার কর্তৃপক্ষ বুঝে পায়। তাদের মরদেহ সদর হাসপাতালের হিমাগারে জেল পুলিশের পাহারায় রাখা হয়েছে। হিমাগারের বকেয়া বিলের হিসেব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে চেয়েছি। তারা হিসেব দিলে বাজেট পেয়ে বকেয়া পরিশোধ করা হবে। মৃত সত্যেন্দ্র কুমারের বাড়ি ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের মাথুরা জেলার চেয়ারপুর। বাবুল সিংয়ের ঠিকানা জানতে পারেনি কারা কর্তৃপক্ষ।
শরীয়তপুর জেলা কারাগারের ভারপ্রাপ্ত সুপার ও জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিট্রেট আব্দুর রহিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভারতীয় দুই বন্দীর মৃত্যু সংবাদ তাৎক্ষণিক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কারা শাখায় চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মরদেহ দুটি আপাতত সদর হাসপাতালে রাখার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। সুরতহাল শেষে দুই ভারতীয় নাগরিকের মরদেহ হাসপাতালের হিমাগারে রাখা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. পারভেজ হাসান বলেন, মরদেহ দুইটি ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের জন্য পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে। ভারতীয় নাগরিকদের মরদেহ ঢাকায় নেওয়ার জন্য আইজি প্রিজনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
আরকে