আত্মহত্যা করা এসআইয়ের দাফন সম্পন্ন, পরিবারের দাবি হত্যা

পাবনার আতাইকুলা থানার ছাদে নিজের পিস্তল মাথায় ঠেকিয়ে আত্মহত্যা করা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হাসান আলীর দাফন সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার (২২ মার্চ) যশোরের কেশবপুর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গায় গ্রামে জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্তানে তাকে দাফন করা হয়। তবে হাসান আলী আত্মহত্যা করেছেন দাবি করলেও তার শোকাহত বাবা দাবি করেছেন, আত্মহত্যা নয়, তার ছেলে হাসানকে হত্যা করা হয়েছে।
হাসান আলী কেশবপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের ভ্যানচালক জব্বার আলীর ছেলে। ৩৭তম আউটসাইট ক্যাডেট হিসেবে গত বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। তিনি এ বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি পাবনার আতাইকুলায় থানায় উপপরিদর্শক হিসেবে যোগদান করেন।
কেশবপুর উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আলা ঢাকা পোস্টকে জানান, হাসান আলীর মরদেহ তার কর্মস্থল পাবনার আতাইকুলা থানা থেকে রোববার রাত তিনটার দিকে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়। এ সময় মরদেহ ঘিরে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। ওই রাতেই শত শত মানুষ তাকে একনজর দেখতে তার বাড়িতে ভিড় জমায়।
এ সময় আত্মীয়স্বজন প্রতিবেশী কান্নায় ভেঙে পড়ে। সোমবার সকাল ১০টার দিকে বাড়ির পাশেই হাসান আলীর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। জানাজায় উপস্থিত ছিলেন কেশবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসীম উদ্দীনসহ এলাকার বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে হাসানের মা-বাবা শোকে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন।
হাসান আলীর বাবা জব্বার আলী ঢাকা পোস্টকে মুঠোফোনে বলেন, আমার এক মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ে মুক্তা খাতুনের বিয়ে হয়েছে পাইকগাছার কয়রা উপজেলায়। অভাবের সংসারে অনেক কষ্ট করে ছেলেকে মানুষ করেছি। অত্যন্ত মেধাবী হওয়ায় এলাকাবাসীর সহযোগিতায় তার লেখাপড়া শেষ করে সে। কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া করে নিজের যোগ্যতায় পুলিশের এসআই পদে চাকরি পায়। ট্রেনিং শেষে গত বছর পাবনার আতাইকুলা থানায় যোগ দেয়। হাসান খুব চাপা স্বভাবের ছিল। মানসিকভাবে অনেক চাপ নিলেও সে কখনো কাউকে কিছু বলত না। কয়েক দিন ধরে তার কিছুটা মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছিল।
মুঠোফোনে জব্বার আলী আরও বলেন, বুধবার হাসান তার সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বলেন। হাসান তাকে জানান, ৪১তম বিসিএস পরীক্ষা দিতে শুক্রবার খুলনায় আসবেন। কিন্তু থানার ওসি তাকে ছুটি দেবেন না। এ নিয়ে ওসির সঙ্গে হাসানের বাগবিতণ্ডা হয়। বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার জন্য থানা কর্তৃপক্ষ তাকে ছুটি না দেওয়ায় তিনি ক্ষুব্ধ ছিলেন। আমার ছেলে আত্মহত্যা করতে পারে না। হাচানকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন বাবা জব্বার আলী। এ ঘটনায় পরিবার প্রধানমন্ত্রী ও পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) কাছে সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
এই বিষয়ে কেশবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসীম উদ্দীনের ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি।
উল্লেখ্য, রোববার সকালে পাবনার আতাইকুলা থানার ছাদে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসান আলীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি থানার ব্যারাকের একটি কক্ষে থাকতেন। শনিবার রাতে খাবার খেয়ে ব্যারাকে ঘুমাতে যান। রাত দেড়টার দিকে মুঠোফোনে কথা বলার জন্য কক্ষ থেকে বের হন। এরপর থেকে তার আর খোঁজ ছিল না।
রোববার সকালে তিনি থানার ডিউটি অফিসারের দায়িত্বে ছিলেন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তাকে থানায় দেখতে না পেয়ে সহকর্মীরা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। একপর্যায়ে থানার ছাদে গিয়ে মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসান আলীর লাশ মেলে। এ সময় তার ব্যবহৃত পিস্তলটি হাতেই ছিল। রোববার বাদ এশা পাবনা পুলিশ লাইন্স মাঠে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে ওই রাতেই পরিবারের লোকজনের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে অ্যাম্বুলেন্সে যশোরের কেশবপুরে নিয়ে আসে।
জাহিদ হাসান/এনএ