ভালো বেতনে চাকরি করা রঞ্জিত এখন থাকেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে

এক সময় সবই ছিল। উচ্চ বেতনে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। সড়ক দুর্ঘটনায় তার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। প্রাণে বেঁচে গেলেও অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না রঞ্জিত ঘোষ উত্তম। সব হারিয়ে ভাগ্যের ফেরে আজ রঞ্জিতের ঠাঁই মিলেছে মাগুরার সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরে। সদর উপজেলার চাউলিয়া ইউনিয়নের শ্রীকুন্ডী গ্রামে ভূমিহীনদের জন্য বরাদ্দকৃত দুই কামরার একটি টিনের ঘরেই এখন তার সংসার।
তিনি বলেন, অসহায় মানুষের জন্য এই সহায়তা কত উপকারী তা আমি বুঝি। ৫ টাকা মানে এখন আমার কাছে ৫ বিলিয়ন।
রঞ্জিত ঘোষ বলেন, এমএসসি পাস করে ২০১২ সালে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের এক্সিকিউটিভ অফিসার হিসেবে যোগদান করেছিলাম। ২০১৪ সালে আমার মোটরসাইকেল ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। আমি একপাশ দিয়ে মোটরসাইকলে করে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ ট্রাক এসে আমাকে মেরে দেয়। দুর্ঘটনায় মাথার খুলি ফেটে যায়। পাসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই দুর্ঘটনায় আমার শরীরের ৬০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমি দেশের বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা নিয়েছি। উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতের কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেই। চিকিৎসার জন্য ৫০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।

তিনি বলেন, একাধিক অস্ত্রোপচার ও নানাবিধ ওষুধের প্রভাবে তিনি অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিক, হৃদপিণ্ডের মাংসপেশির ইনফেকশন, ফুসফুসের প্রদাহের ফলে শ্বাসকষ্টজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। শরীরে হরমোনাল পরিবর্তন দেখা দিলে মেলানিন উৎপাদন বন্ধ হয়ে ক্ষতের সৃষ্টি হয়ে সারা শরীরে সাদা ছোপ ছোপ দাগ দেখা দেয়। পায়ের হাড়ে ইনফেকশন দেখা দেওয়ায় এখন আর হাঁটতে বা দাঁড়াতে পারি না। বছরের পর বছর চিকিৎসা করতে গিয়ে পৈত্রিক ভিটা-বাড়ি বিক্রি, আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ধার-দেনা করে এখন রিক্ত-হস্ত। এ অবস্থায় ঢাকার হার্ট ফাউন্ডেশন থেকে তাকে লেজার থেরাপির মাধ্যমে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু এ চিকিৎসার জন্য কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা প্রয়োজন। যা এই মুহূর্তে সংগ্রহ করা তার দ্বারা একেবারেই অসম্ভব।
তিনি বলেন, মাগুরা জগডল বাজারে দুই কামরা বিশিষ্ট একটি ফার্মেসি ছিল, শেওলাডাঙ্গা গ্রামে নিজস্ব বাড়ি ছিলসহ সম্পদ ছিল। অসুস্থ হওয়ার পর চিকিৎসার জন্য সবই হারিয়েছি। এখন আমি নিঃস্ব। আমার কিছুই নেই।
রঞ্জিত বলেন, সব হারিয়ে আমরা যখন রাস্তায় ভিখারির মতো দ্বারে দ্বারে ঘুরছিলাম এ সময় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া এই ঘর আমাদের অন্তত রোদ-বৃষ্টি থেকে বাঁচাচ্ছে। কিন্তু দিন দিন শরীরের অবস্থা এমন হচ্ছে উন্নত চিকিৎসা না পেলে হয়তো অচিরেই আমার মৃত্যু হবে।
তিনি বলেন, আমার বাবা মারা গেছে। ছোট বোন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত। আর মা পাগল হয়ে গেছে। আমার ওপর নির্ভরশীল আমার পরিবার। কিন্তু এখন আমি ডায়াবেটিকস, হার্টের রোগসহ বহুমাত্রিক রোগে আক্রান্ত। যে কারণে কোনো কাজ করতে পারি না। আমার স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে আমি কোনোভাবে চলছি। একবেলা খেয়ে একবেলা না খেয়ে চলছি। তিনি সহৃদয় ব্যক্তিদের তার চিকিৎসার জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
মোহাম্মদ মিলন/ওএফ