খালিদের প্রতিষ্ঠানে অফিস শুরু ফজরে, শেষ জোহরে

বাংলাদেশ প্রচলিত অফিসের সময় সাধারণত সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে দেশে প্রথমবারের মতো কোনো প্রতিষ্ঠানে অফিস শুরু হয় ফজরের নামাজের পর ভোর সাড়ে ৫টায় আর জোহরের নামাজের জামাতের পর অর্থাৎ দুপুর ২টায় শেষ হয়। এমন ব্যতিক্রমী অফিস সময়সূচি মানা হয় যশোরের উদ্যোক্তা খালিদ হাসানের প্রতিষ্ঠান খালিদ আইটিতে। তার এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ ইতোমধ্যে গোটা এলাকায় ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
‘খালিদ আইটি’ যশোর শহরের মোল্লাপাড়া আমতলা মোড়ে একটি দ্বিতল ভবনের নিচ তলায় অবস্থিত একটি প্রতিষ্ঠান। ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু। প্রতিষ্ঠানের মালিক খালিদ হাসান চলতি মাসের ৫ তারিখে তার ফেসবুক প্রোফাইলে নিজ প্রতিষ্ঠানের সময়সূচি নিয়ে একটি পোস্ট দেন। যেখানে বলা হয়েছে, মে মাস থেকে আমাদের অফিস শুরু হবে ফজরের নামাজের জামাতের পর এবং চলবে জোহরের নামাজের পর এক থেকে দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত। এরপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যতিক্রমী এ বিষয়টি নিয়ে শুরু হয় নানারকম আলোচনা।
খালিদ হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি করোনাকালীন বাইরের কয়েকটি মুসলিম রাষ্ট্রে অবস্থানের সময় দেখেছি তাদের দেশে অফিস শুরু হয় ফজরের নামাজের পর এবং শেষ হয় জোহরের নামাজের পর। সেখান থেকেই মাথায় এই আইডিয়াটা আসে। এরপর দেশে ফিরে যখন নিজের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলি, তখন নিজের প্রতিষ্ঠানে এই অফিস সময়সূচি মেনে চলার চেষ্টা করি। আমাদের এই খালিদ আইটি প্রতিষ্ঠানে সবাই নিয়মিত জামাতে নামাজ আদায় করে। আর জামাতে নামাজ শেষেই না ঘুমিয়ে কাজ শুরু করি এবং দুপুরে জোহরের নামাজের পরপর কাজ শেষ করে ফেলি।
তিনি আরও বলেন, খালিদ আইটিতে সময়মতো নামাজ পড়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। শুধু তাই নয় নামাজের সময়সূচী সঠিকভাবে মেনে চললে কর্মচারীদের জন্য রয়েছে পুরস্কারের ব্যবস্থা।
বর্তমানে খালিদ হাসানের অফিসে ১১ জন কর্মী আছেন। বর্তমানে সবাই মুসলিম হলেও যোগ্যতানুসারে অন্যান্য ধর্মের মানুষও তার আইটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
উদ্যোক্তা খালিদ হাসান আরও বলেন, বর্তমান সময়ে অনেকেই এখন ব্যাংক-বিসিএসের মতো সরকারি চাকরির পেছনে কয়েকটা সার্টিফিকেট নিয়ে ছোটাছুটি করেন। আমি ছোটবেলা থেকেই ভিন্ন কিছু করার স্বপ্ন দেখেছি। একটা সময় ছিলো ক্লাস ফাইভে পড়ার সময় বৃত্তি গাইড কেনার মতো টাকা আমার হাতে ছিল না। আমি টাকা ধার করে গাইড কিনেছিলাম। এখন আমার কর্মীদের মাসিক বেতন-ভাতা দিয়েও মাস শেষে আমার লাখ-খানেক টাকা থাকে।
খালিদ আইটির বিজনেস ডেভলপমেন্ট ম্যানেজার (বিডিএম) শাহরিয়ার নাফিজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, 'আমরা ভোরে ফজরের নামাজের পর অফিসে আসি আর জোহরের নামাজ পর্যন্ত কাজ করি। এই অফিস সময়সূচিতে আমাদের কোনো সমস্যা হয় না। আমরা দিব্যি অফিস করে বিকালে বাসায় ফিরে নিজেদের পড়াশোনা, পরিবারকে সময় দিতে পারি এবং নিজেদের প্রয়োজনীয় কাজটা সেরে নিতে পারি।'
কন্টেন্ট রাইটার রোহান হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা এখানে যারা কাজ করি সবাই স্টুডেন্ট। আমরা যদি ৮টা থেকে ৫টা অফিস করতাম তাহলে আমাদের বাসায় ফিরে আর পড়াশোনায় মন বসতো না। কিন্তু আমরা এখানে যে অফিস সময়টা মেইনটেইন করতেছি, এটাতে আমাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। পড়াশোনাও ঠিকমতো করতে পারছি এবং নিজেরাই নিজেদের পড়াশোনার খরচ সামাল দিতে পারছি।
দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে চান এই তরুণ উদ্যোক্তা খালিদ হাসান। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে সামনের দিকে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তিনি।
এ্যান্টনি দাস অপু/আরকে