সুমনের রোলেড মিক্সড ফ্রুট আইসক্রিম, ৬ ঘণ্টায় ১৮ হাজার বিক্রি

তুরস্কের বিখ্যাত আইসক্রিম বিক্রেতা মেহমুদ ডিঙ্কের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে সবার। তার আইসক্রিম খেতে হলে অবশ্যই আপনাকে নাচতে হবে। কিন্তু বরিশালের সুমনের আইসক্রিম খেতে দোকানের সামনে দেহ দোলাতে হবে না বা ধোঁকায়ও পড়তে হবে না।
বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে মঞ্চের কাছেই তার দোকান। দু’জন সহযোগীসহ বিকেল চারটায় ভ্রাম্যমাণ দোকান খুলে রোলিং শুরু করে আইসক্রিম প্যানেলের। ব্যবসা শুরুর প্রথম সপ্তাহেই জনপ্রিয়তার তুঙ্গে।
মাত্র ৬ ঘণ্টায় প্রায় ১৮ হাজার টাকার হাতে বানানো আইসক্রিম বিক্রি করেন সুমন। কী নাম সেই আইক্রিমের?, জানালেন, ‘রোলেড মিক্সড ফ্রুট আইসক্রিম’। এর আগে হয়তো নাম শুনেছেন। তবে চেখে দেখার সুযোগ হয়নি। ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লির স্ট্রিটফুড হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়। সেখানেই চার বছর আইক্রিম বিক্রির অভিজ্ঞতা নিয়ে সুমন ফিরেছেন বরিশালে।

সুমন জানান, তার মূল বাড়ি খুলনায়। তবে ১৭ বছর ধরে রয়েছে বরিশালে ভাড়া বাসায়। এর মধ্যে ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ভারতের নয়া দিল্লিতে রোলেড মিক্সড ফ্রুট আইসক্রিম বিক্রি করেছেন। মাত্র সপ্তাহখানেক আগে তিনি বরিশালের এই স্থানে আইসক্রিমের দোকান খুলে বসেছেন।
সুমন জানালেন, বিকেল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কমপক্ষে ৩০০ পিস আইসক্রিম বিক্রি করেন। প্রতি পিসের মূল্য রাখেন ৬০ টাকা করে।
আইসক্রিম তৈরিতে ব্যবহার করেন দুধ, চিনি, কলা, পেপে, আঙুর, মোনাক্কা, আম, জাম, খাবার রঙসহ সব ধরনের সুস্বাদু ফল। প্রথমত একটি ফাপা (ভেতর খালি) ধাতব পাইপের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ বরফ প্রবেশ করানো হয়। সেই পাইপটির এক প্রান্তে বিশেষ পদ্ধতিতে আরেকটি ধাতব রড যুক্ত করে চাকতির মতো দ্রুতগতিতে ঘোরানো হয়। এ সময়ে পাইপটির ওপরে লেপে দেওয়া হয় বিভিন্ন ফল। তার ওপরে দেওয়া হয় ফুড কালার। এসবই ঘূর্ণায়মান অবস্থায় করতে হয়। যত দ্রুত ঘুরানো যায় ততই মিহি হয় আইসক্রিমটি। সব কাঁচামাল প্যানেলে লেপ্টে দেওয়া হলে এরপরে কতক্ষণ ঘুরিয়ে তা ছুরি দিয়ে চেছে কাপে পরিবেশন করা হয়।

সুমন বলেন, একটি আইসক্রিম প্যানেল তৈরি করতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। সবার আইসক্রিম তৈরির প্রক্রিয়াটি নতুন আর সুস্বাদু হওয়ায় বেশ চাহিদার সৃষ্টি করেছে। এমনও হয় ক্রেতাদের আইসক্রিম দিয়ে সামলাতে পারি না। আগামী দিনে ইচ্ছা আছে আরো নতুন নতুন ফলের সংযোজন করার।
দোকানের সামনে গিয়ে কথা হয় চাকতি ঘোরানোয় ব্যস্ত থাকা রাকিবের সঙ্গে। বলেন, যতক্ষণ দোকান খোলা থাকবে ততক্ষণ এই চাকতি ঘোরানোই আমার কাজ। একটু থামানো যায় না। খুব দ্রুত ঘোরাতে হয়। প্রথম প্রথম কষ্ট হলেও এখন সহ্য হয়ে গেছে। হাত ব্যথা করলেও রাতে ঘুমাতে কোনো কষ্ট হয় না।
রোলেড মিক্সড ফ্রুট আইসক্রিম খেতে আসা কেয়া বলেন, বরিশালে এই প্রথম দেখলাম রোলিং আইসক্রিম। তার হাতে বানানো আইসক্রিম খেলাম। খুব ইউনিক লেগেছে।

সাংবাদিক ও যুব সংগঠক ফিরোজ মোস্তফা বলেন, ফল সাজিয়ে একটা রোলারের মতো ঘুরিয়ে কি যেন নতুন কিছু তৈরি করছে। জানলাম এটি আইসক্রিম। খেয়ে দেখলাম চমৎকার লেগেছে। তবে যে দাম রাখা হচ্ছে, তা আমার কাছে বেশি মনে হয়েছে।
আরেক ক্রেতা শুভ বলেন, সাধারণত ক্যামিকেল দিয়ে ফ্লেভার তৈরি করে যে আইক্রিম আমরা দোকানে পাই। তার চেয়ে সুমনের মিক্স ফ্রুট আইসক্রিমটি ভালো মনে হয়েছে। এখানে সব ফলের আসল স্বাদ পাওয়া যায়।
এসএম