ট্রেনে অনিয়মের প্রতিবাদ করায় যাত্রীকে পেটালো পুলিশ
ট্রেনে অনিয়মের প্রতিবাদ করায় মোহাম্মদ করিম বাদশা নামে এক যাত্রীকে নির্যাতন ও হত্যার হুমকির অভিযোগ পাওয়া গেছে রেলওয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে। গত বৃহস্পতিবার ( ১৮ মে) দিবাগত রাতে ঢাকা থেকে পঞ্চগড়গামী দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনে এ ঘটনা ঘটে।
তবে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা যাত্রীকে চড়থাপ্পড় দিয়েছেন বলে স্বীকার করলেও অন্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ভুক্তভোগী মোহাম্মদ করিম বাদশা বলেন, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকা থেকে দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনে ঠাকুরগাঁওয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হই। ট্রেন চলার কিছুক্ষণ পর রেলওয়ের একজন পুলিশ আমার আসনের মাঝে ফাঁকা জায়গায় একটি চেয়ার দিয়ে আরেকজনকে বসতে দেন। নিয়মবহির্ভূতভাবে ওই যাত্রী বসার বিষয়টি ছবিসহ রেলওয়ের একটি ফেসবুক ফ্যান গ্রুপে পোস্ট দিই। এর ৩০ মিনিট পর রেলওয়ে পুলিশের এএসআই শহিদুল ইসলাম আমাকে জোরপূর্বক ধরে পাশের একটি বগির ক্যান্টিনে নিয়ে যায়। পরে তিনি পোস্ট করা ছবিগুলো ডিলিট করে দিতে বলেন। কেনও ডিলিট করতে হবে জানতে চাইলে তিনি ফোনটি কেড়ে নিয়ে ধারণকৃত ছবি ও পোস্ট করা ছবিগুলো ডিলিট করে দেন। এরপর শহিদুলসহ ৫-৬ জন পুলিশ ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করতে থাকে। প্রচণ্ড মারধরের একপর্যায়ে জ্ঞান হারানোর উপক্রম হলে তারা ছেড়ে দেন। পরে পুলিশের ওই সদস্যরা ফোনটি আছাড় দিয়ে ভেঙে হাতে ধরিয়ে দেন। এরপর রাতভর মানসিক নির্যাতন করা হয়।
এএসআই শহিদুল আমার সিটে বার বার আসেন আর বলেন, ট্রেনের ভেতরের পুরো ঘটনাটি এখানে সীমাবদ্ধ থাকবে। ট্রেন থেকে নেমে বা ট্রেনে থাকাকালীন অন্য কাউকে কিছু ফোনে বলা যাবে না। যদি বলেন তাহলে ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়া হবে। এভাবে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে চলে যায়। এর ৩০ মিনিট পর আবারও শহিদুল নামে ওই পুলিশ কর্মকর্তা আসেন। এবার তিনি বলেন, ‘ট্রেন থেকে নামার পরও কাউকে কিছু বলা যাবে না, যদি বলেন যে কোনো এক থানায় মাদকের মামলা দিয়ে চালান করে দেব।’
মোহাম্মদ করিম বাদশা বলেন, পুরো সময় ওই পুলিশ সদস্যরা আমাকে নজরবন্দি করে রাখেন। এমনকি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাথরুম পর্যন্ত গেলেও তাদের কাছে নানা ধরনের কৈফিয়ত দিতে হয়েছে। বাথরুমে যাওয়া পর্যন্ত তারা সঙ্গে থাকেন। পরে ভোর ৫টায় দিনাজপুরের পাবর্তীপুর স্টেশনে ট্রেন বিরতি দিলে ওই পুলিশ সদস্যরা আমার নাম-ঠিকানা ও ফোন নম্বর লিখে নেন। পরে হুমকি দিয়ে বলেন- বেশি বাড়াবাড়ি করলে একদম যাবজ্জীবন দণ্ডের ব্যবস্থা করে ফেলবো। এ কথা বলে তারা চলে যান।
পরে ট্রেন থেকে নেমে এ বিষয়ে অভিযোগ জানাতে ঠাকুরগাঁও সদর থানায় গেলে সেখানকার দায়িত্বরত ডিউপি অফিসার আমাকে রংপুর বিভাগীয় রেলওয়ে পুলিশ কর্মকর্তার কার্যালয়ে অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন। এ ঘটনায় আমি ও আমার পরিবার এখনো আতঙ্কে রয়েছি।
অভিযোগের বিষয়ে দিনাজপুরের পাবর্তীপুর জিআরপি থানার এএসআই শহিদুল ইসলাম বলেন, একটি প্লাস্টিকের চেয়ারে আমরা পালাক্রমে চারজন পুলিশ বসি। ওই চেয়ারে পূর্বপরিচিত ঠাকুরগাঁওয়ের এক যাত্রীকে বসতে দেয়। পরে করিম বাদশা নামে ওই ব্যক্তি কয়েকটি ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট দেন। বিষয়টি আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দেখে আমার ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে করিম নামে ওই ব্যক্তিকে রেলওয়ে ক্যান্টিনে নিয়ে গিয়ে মাথায় কয়েকটা থাপ্পড় দিয়ে ছেড়ে দিয়েছি। অন্য অভিযোগগুলো সঠিক নয়।
পার্বতীপুর রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম নুরুল ইসলাম বলেন, আমি বিষয়টি শুনলাম। এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেব।
আরএআর