স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করলেন ৩১৫ চরমপন্থি

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন সিরাজগঞ্জ, পাবনা, বগুড়া, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী ও টাঙ্গাইলের বিভিন্ন চরমপন্থি সংগঠনের ৩১৫ জন নেতা ও সদস্য।
রোববার (২১ মে) দুপুরে সিরাজগঞ্জে র্যাব-১২-এর সদর দপ্তরে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আত্মসমর্পণকারীরা সবাই ৩টি দলের নেতা ও সদস্য। এ তিনটি দল হলো- পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি এমএল- লাল পতাকা, পূর্ববাংলা সর্বহারা পার্টি- এমবিআরএম ও পূর্ববাংলা সর্বহারা পার্টি- জনযুদ্ধ।
আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন আশির দশক থেকে এই এলাকার কয়েকটি জেলায় যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ থাকায় সর্বহারা ও চরমপন্থিরা ঘাঁটি তৈরি করে। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে ‘সন্ত্রাসের জীবন ছাড়ি, আলোকিত জীবন গড়ি’ স্লোগানে চরমপন্থিরা আলোর পথে ফিরে আসে। প্রধানমন্ত্রী তখন যেমন সবাইকে পুনর্বাসন করেছিলেন, তেমনি আজও এখানে আসার আগে তিনি আমাকে বলেছেন, যারা আত্মসমর্পণ করছেন তাদের সবাইকে আর্থিক সহযোগিতা থেকে শুরু করে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
তিনি বলেন, র্যাব নানাবিধ ভালো কাজ করে যাচ্ছে, তারা মানুষের আস্থা অর্জন করেছে। এজন্য চরমপন্থিরা আত্মসমর্পণের জন্য র্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, একসময় এই সাত জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে আতঙ্কের নাম ছিল চরমপন্থি। প্রতিদিনই চাঁদাবাজি, গুম, খুন, ডাকাতি, ছিনতাই ও অপহরণসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঘটনা ঘটত এসব এলাকায়। চরমপন্থিদের কারণে আতঙ্কে দিন কাটত সাধারণ মানুষের। তাই চরমপন্থি নেতা ও সদস্যদের অন্ধকার থেকে আলোতে ফেরাতে এমন আয়োজন করা হয়েছে।
এর আগে র্যাব-১২ এর কোম্পানি কমান্ডার আবুল হাশেম সবুজ জানান, চরমপন্থিদের আত্মসমর্পণ করে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য বিভিন্ন সময় সুযোগ করে দিয়েছে র্যাব। অপরাধের জীবন থেকে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে র্যাব ২০২০ সাল থেকে কার্যক্রম শুরু করে। বিভিন্ন সময় আর্থিক প্রণোদনা দিয়ে তাদের পাশে দাড়িয়েছে র্যাব। গরুর খামার, পোলট্রি ফার্ম, মাছ চাষ, চায়ের দোকান, ভ্যান-রিকশা ও সেলাই মেশিন কেনার জন্য তাদের অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়।
র্যাবের মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি এম খুরশীদ হোসেনের সভাপতিত্বে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেনজীর আহমেদ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, র্যাবের মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন, পুলিশ মহা-পরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, র্যাব-১২ অধিনায়ক অ্যাডিশনাল ডিআইজি মারুফ হোসেন, সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট কেএম হোসেন আলী হাসান, সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ তালুকদার, সিরাজগঞ্জ-১ (কাজিপুর) আসনের সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয়, সিরাজগঞ্জ-২ (সদর-কামারখন্দ) আসনের সংসদ সদস্য ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্না, সিরাজগঞ্জ-৩ (তাড়াশ-রায়গঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ডা. আব্দুল আজিজ, সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য তানভীর ইমাম, সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) আসনের সংসদ সদস্য মেরিনা জাহান কবিতা, সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমানসহ র্যাব ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
শুভ কুমার ঘোষ/এবিএস