সরকার সমর্থকরা জনবান্ধব বললেও বাজেটে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি অন্যদের

Dhaka Post Desk

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা

০১ জুন ২০২৩, ১০:৩৬ পিএম


সরকার সমর্থকরা জনবান্ধব বললেও বাজেটে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি অন্যদের

বাজেট নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন খুলনার রাজনৈতিক, সামাজিক ও ব্যবসায়ী নেতারা। সরকার সমর্থকরা জনবান্ধব ও কৃষিবান্ধব বলে উল্লেখ করলেও অন্যরা প্রস্তাবিত বাজেটে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন।

নগরীর হরিনটানা এলাকার বাসিন্দা এস আলম বলেন, বাজেটে গরিবের কোনো উপকার হয় না। বরং বাজেট ঘোষণার পরপরই পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করে। আর সরকার যেসব পণ্যের দাম কমানোর ঘোষণা দেয় সেগুলো কমতে দেখা যায় না।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) খুলনা জেলা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কুদরত-ই খোদা বলেন, এবারের বাজেটের পরিমাণ অনেক বেশি। ভ্যাট কমানোর একটি দাবি ছিল। ভ্যাটের আওতা কমিয়ে আমাদের আয়করের আওতা বাড়ানো উচিত। দেশের ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষ আয়কর দেয় না। ফলে আয়কর বাড়ানো উচিত। আর ভ্যাট কমানো উচিত ছিল। কিন্তু ভ্যাট না কমিয়ে বাড়ানো হয়েছে। একজন রিকশাচালককেও ভ্যাট দিতে হচ্ছে। রিকশাচালককে মাসে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা ভ্যাট দিতে হয়। সাধারণ নাগরিকদের প্রত্যাশা ছিল কমবে, কিন্তু হয়নি।

তিনি বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমানো উচিৎ ছিল। বীজের উপর কর আরও কমানো উচিত ছিল। এবারও পরনির্ভরশীল বাজেট বেশি। আমাদের প্রত্যাশিত ও জনবান্ধব বাজেট হয়নি।

খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মো. বাবুল হাওলাদার বলেন, বাজেটে খুলনার শিল্প-কলকারখানা ও বিমানবন্দর চালুর বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। বলা হয়নি উপকূলীয় অঞ্চলের টেকসই বেড়িবাঁধের কথা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ এই বাজেটে লক্ষ্য করা যায়নি। পুঁজিবাদীদের যতো রকমের সুবিধা দেওয়া দরকার সেটা লক্ষ্য করা গেছে। এটিতে শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে। নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের জীবন-যাপন পদ্ধতি বিবেচনায় এই বাজেট নয়।

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয়ক কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, নতুন করে মেগাপ্রকল্প ছাড়া ঘাটতি বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। পদ্মাসেতু হওয়ার পরে আমাদের এই অঞ্চলে গ্যাস এবং বিমানবন্দর এই দুটি জরুরি। কিন্তু এই দুটির জন্য কোনো বরাদ্দ নেই। সরকার এটি কৃষি বান্ধব এবং দরিদ্রবন্ধু বাজেট বলছে। এটা বাস্তবায়ন যদি হয় নিঃসন্দেহে ভালো বাজেট। বাজেট বাস্তবায়নে সরকার কতোটা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারবে এটাই দেখার বিষয়। সবকিছু সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে যাচ্ছে। নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ কষ্টে দিন অতিবাহিত করছে। এই বাজেট বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জ হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক মো. মফিদুল ইসলাম টুটুল বলেন, এ বাজেট জনবান্ধব। বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ বাজেট আজকের জাতীয় সংসদে পেশ করা হয়েছে। আমি মনে করি এ বাজেট শিল্প-কৃষিবান্ধব। এ বাজেট ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারিত করবে। মুদ্রাস্ফীতি কমাবে। এ বাজেট নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিকে হ্রাস করবে। সাধারণ মানুষের কল্যাণে ব্যয় হবে। সোশ্যাল সেফটি নেটওয়ার্কের সংখ্যা এবং টাকার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় গরিব দুঃখী মানুষ এই বাজেট দ্বারা উপকৃত হবে। এ বাজেট পেশ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রীকে আমরাও ধন্যবাদ এবং অভিনন্দন জানাই।

খুলনা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি কাজি আমিনুল হক বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট দেশের ব্যবসা বাণিজ্যকে এক ধাপ এগিয়ে নেবে। বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির আয়কর সীমা সাড়ে ৩ লাখ টাকা, নারী ও বয়স্কদের আয়করসীমা ৪ লাখ টাকা করায় সাধারণ মানুষ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবে। এছাড়া ১৩৪টি পণ্যের সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব ও ১৫১টি পণ্যের রেগুলেটরি শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাবসহ ওষুধ, স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী ও প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে কর ছাড়ের মেয়াদ বৃদ্ধি করায় সাধারণ ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবে এবং পণ্যের দাম কমাতে ভূমিকা রাখবে।

তিনি বলেন, মাংস ও মাংসজাত পণ্য, মিষ্টি জাতীয় পণ্য, ক্যানসার ও ডায়াবেটিসের ওষুধ, ম্যালেরিয়া ও যক্ষ্মার চিকিৎসা, ধান ও আলু রোপনের মেশিন ও কৃষি যন্ত্রপাতি, পশুখাদ্য, সাবান ও শ্যাম্পুর দাম কমানোয় সব পেশার মানুষ এর সুফল পাবে। চেম্বার সভাপতি খানজাহান আলী বিমানবন্দর দ্রুত চালু করা ও খুলনায় গ্যাস সংযোগ প্রদানের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দের জোর দাবি জানান।

খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা বলেন, সরকার জনগণের প্রত্যাশিত বাজেট পেশ করেছে। এই সরকারকে আমরা অভিনন্দন জানাই। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে এতো বৃহৎ বাজেট এই প্রথম উপস্থাপন করা হয়েছে। এই জাতিকে এক উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের দ্বারপ্রান্তে নেওয়ার জন্য বাজেটটি এই সরকারপ্রধান প্রণয়ন করেছেন। দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ, আইটি সেক্টর ও কৃষি সেক্টরে যে অর্থ বরাদ্দ করেছেন, আমাদের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য উপযুক্ত বাজেট বলে আমরা বিশ্বাস করি।

এদিকে বাজেটকে স্বাগত জানিয়ে বৃহস্পতিবার (১ জুন) বিকেল সাড়ে ৫টায় নগরীতে আনন্দ মিছিল করেছেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।

মোহাম্মদ মিলন/এবিএস

Link copied