আর কলম খাবেন না সেই মোতালেব, সুস্থ হয়ে ছাড়লেন হাসপাতাল

সিরাজগঞ্জে বিনা অপারেশনে দুই দফায় পেট থেকে ২৩টি কলম বের করা সেই মানসিক রোগী মোতালেব সোমবার (১২ জুন) চিকিৎসা শেষ করে হাসপাতাল ছেড়েছেন। হাসপাতাল ছাড়ার সময় তিনি আর কখনও কলম খাবেন না বলে প্রতিজ্ঞা করেন। এ সময় তাকে ফুল দিয়ে শুভকামনা জানান চিকিৎসকরা। বিনা অস্ত্রোপচারে দুই দফায় এন্ডোস্কপির মাধ্যমে তার পেট থেকে কলমগুলো বের করা হয়।
হাসপাতাল ছাড়ার সময় মোতালেব বলেন, আমি আর কোনো দিন কলম খাব না। অনেক দিন আগে একটা কলম খেয়েছিলাম। কিন্তু সেই কলম আর বের হয় না। তাই ভাবলাম আরেকটা খাইলে মনে হয় বের হবে। কিন্তু সেটাও বের হয় না। তাই এক এক করে অনেকগুলো কলম খেয়ে ফেলেছি। আমি পেটের ব্যথায় অনেক কষ্ট করেছি। আজ আমি সুস্থ। আর কোনো দিন এ সব খাব না।
বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ও এন্ডোস্কোপি করা চিকিৎসক ডা. জাহিদুল ইসলাম ও কনসালটেন্ট ডা. আমিনুল ইসলাম খান।
এর আগে গত ২৫ ও ২৯ মে সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে তার পেট থেকে এন্ডোস্কপির মাধ্যমে কলমগুলো বের করে আনেন চিকিৎসকরা।
আরও পড়ুন: বিনা অপারেশনে যুবকের পেট থেকে ১৫টি কলম বের করলেন চিকিৎসক
ভুক্তভোগী রোগী মোতালেব হোসেন সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার খুকনি আটার দাগ গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন। মোতালেব ৪-৫ বছর ধরে বিভিন্ন সময়ে এসব কলম আস্ত গিলে খেয়েছেন বলে চিকিৎসকদের ধারণা। পরে বিনা অস্ত্রোপচারে দুই দফায় এন্ডোস্কপির মাধ্যমে তার পেট থেকে ২৩টি কলম বের করেন চিকিৎসকরা।
শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. জাহিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুইবারের প্রচেষ্টায় এন্ডোস্কপির মাধ্যমে তার পেট থেকে ২৩টি কলম বের করা হয়। বাংলাদেশে এমন সাফল্য এটাই প্রথম। আমরা অত্যাধুনিক ভিডিও এন্ডোস্কপি মেশিনের মাধ্যমে এবং আমাদের দক্ষতা দ্বারা অপারেশন ছাড়াই মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের পেট থেকে কলমগুলো বের করে আনতে সক্ষম হয়েছি।
হাসপাতালটির কনসালটেন্ট ডা. আমিনুল ইসলাম খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, রোগী প্রথমে পেটে ব্যথা নিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হন। পরে মেডিসিন ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা এক্স-রে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম করে পেটের সমস্যা শনাক্ত করতে পারছিলেন না। পরে কনসালটেন্ট হিসেবে রোগীকে আমার কাছে পাঠানো হয়।
তিনি আরও বলেন, পরীক্ষা নিরীক্ষার পর পেটে এতগুলো কলম দেখে প্রথমে চমকে যাই। কলমগুলো একে একে পাকস্থলীতে সেট হয়ে গিয়েছিল। পরে তার পেট থেকে দুদফায় ২৩টি কলম বের করা হয়। এখন রোগী ভালো আছেন। ২০ দিন তাকে হাসপাতালে রাখার পর আজ দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে রিলিজ দেওয়া হয়েছে।
মোতালেবের মা লাইলী বেগম বলেন, এক বছর ধরে আমার ছেলে পেটের ব্যথায় ভুগছিল। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করার পরও সে সুস্থ হয়নি। তখন সে খেতে পারত না, খালি বমি করত। এ কারণে তাকে হাসপাতালে আনা হয়। ১২ বছর ধরে আমার ছেলে মানসিক রোগী। সে কলমগুলো না বুঝেই খেয়ে ফেলেছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ ও ২৯ মে দেশে প্রথমবারের মতো অপারেশন ছাড়াই এন্ডোস্কোপির মাধ্যমে এক যুবকের পেটের ভেতর থেকে ২৩টি আস্ত কলম বের করেন চিকিৎসকরা। এই অসম্ভবকে সম্ভব করেন সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের এক দল চিকিৎসক।
শুভ কুমার ঘোষ/আরকে