নীলফামারীতে জাতীয় পতাকা অবমাননা, দায়সারা বক্তব্য প্রশাসনের

স্বাধীনতা দিবসের আনুষ্ঠানিকতায় আমরা যতটা আবেগি জাতীয় পতাকার সম্মান আর মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখতে ততটাই বেখেয়ালি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ হলেও লাখো শহিদের রক্তে ভেজা লাল সবুজের পতাকার যে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের নিদর্শন তা ভুলতে বসেছে খোদ সরকারি অফিসগুলো।
গতকাল শুক্রবার (২৬ মার্চ) মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে সকল সরকারি, বে-সরকারি ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের বিধান থাকলেও নীলফামারী কাস্টমস, ভ্যাট ও এক্সসাইজ বিভাগ, সদর উপজেলার ইটাখোলা ইউনিয়ন পরিষদ ও ইটাখোলা ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তার অফিসে পতাকা উত্তোলন করা হয়নি।
এছাড়াও সূর্যাস্তের সময় পতাকা নামানোর বিধান থাকলেও বিভিন্ন সরকারি, বে-সরকারি ভবন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উত্তোলন করা পতাকা নামানো হয়নি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নীলফামারী পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস, পৌর শহরের উত্তর হাড়োয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সার্কিট হাউস সংলগ্ন গ্রামীন ব্যাংকের ইটাখোলা শাখা কার্যালয়, নীলফামারী জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়, বড় বাজার সংলগ্ন এসিসিএফ ব্যাংক লিমিটেড এর নীলফামারী শাখা অফিস, নীলফামারী-সৈয়দপুর সড়কের যুব উন্নয়ন অফিস সংলগ্ন নীফামারী জেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের শাখা অফিসসহ বেশ কয়েকটি ব্যক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

স্বাধীনতা দিবসে পতাকা উত্তোলন না করার কারণ জানতে চাইলে ইটাখোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হাফিজুর রশিদ মঞ্জু জানান, গতকাল শুক্রবার বিকেলে প্রশাসনের মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি। আমার সচিব বলেছে তারা যথা নিয়মে পতাকা টাঙিয়েছিল। এখন আপনি ঠিক বলছেন, না তারা ঠিক বলছে তা এখন বলতে পারছি না। কারণ তখন আমি আমি জেলা প্রশাসনের অনুষ্ঠানে ছিলাম।
নীলফামারী কাস্টমস, ভ্যাট ও এক্সসাইজ কার্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নীলফামারী সদর সার্কেলের একজন কর্মকতা জানান, হয়তো পতাকা উত্তোলন করতে ভুলে গিয়েছিল। বিষয়টি আমার জানা নেই। উত্তোলন করলেও আগে নামিয়েছে সম্ভবত।
শুক্রবার রাত ৮টা ৩০ মিনিটে নীলফামারী পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় পতাকা নামানো হয়নি। পাশেই নির্বাহী প্রকৌশলী সকল কর্মকর্তার পরিবার নিয়ে র্যাফেল-ড্র এর অনুষ্ঠান পরিচালনা করছেন। পতাকা না নামানোর কারণ জানতে চাইলে নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন ঢাকা পোস্টকে জানান খেয়াল করা হয়নি। এখনই নামাচ্ছি।
রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে নীলফামারী পৌর শহরের ৩নং ওয়ার্ডের উত্তর হাড়োয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় পতাকা নামানো হয়নি। স্কুলের একটি কক্ষে প্রধান শিক্ষক মো. মুরাদ আলী কম্পিউটারে কাজ করছেন। পতাকা না নামনোর কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, পতাকা নামানোর বিষয়টা মাথায় ছিল না। মিসটেক হয়ে গেছে।
গতকাল বিকেলে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা বিধিমালার ব্যতয়ের বিষয়ে জানতে জেলা প্রশাসক এবং সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তারা রিসিভ করেননি। পরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আজহারুল ইসলামকে বিষয়টি সম্পর্কে জানালে দেখছি বলে সংযোগটি কেটে দেন তিনি।
এ ব্যাপারে নীলফামারী জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল ঢাকা পোস্টকে বলেন, যে পতাকার জন্য আমরা জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করেছি সেই পতাকার এমন অবমাননা মেনে নেয়া যায় না। প্রশাসনের উচিত তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা বিধিমালা অনুযায়ী যথাযত ব্যবস্থা নেয়া ।

শনিবার (২৭ মার্চ) জাতীয় পতাকা বিধিমালা লঙ্ঘনের বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকক (সার্বিক) মো.আজহারুল ইসলাম জানান, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে পতাকা বিধিমালা পরিপালনে একটি মনিটরিং কমিটি করা হয়েছিল। কী কারণে এমনটা হয়েছে তা দেখা হবে।
গতকাল বিকেলে বিষয়টি জানানোর পরেও ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণ অবহেলা নাকি উদাসীনতা এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি তিনি।
প্রসঙ্গত, জাতীয় পতাকা বিধিমালা-১৯৭২ (সংশোধিত ২০১০)- এ জাতীয় পতাকা ব্যবহারের বিধি-বিধান আছে। জাতীয় পতাকা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের নিদর্শন। তাই সব সরকারি ভবন, অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ভবনে সব কর্মদিবসে পতাকা উত্তোলনের বিধান রয়েছে। এছাড়াও স্বাধীনতা দিবসে দেশের সর্বত্র সরকারি-বেসরকারি ভবনসমূহে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের বিধান রয়েছে।
উক্ত বিধিমালার ৮ ধারার প্রথম উপ-ধারা অনুযায়ী শুধুমাত্র সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পতাকা উত্তোলিত থাকার বিধান কার্যকর আছে।
মাহমুদ আল হাসান রাফিন/এমএএস