‘গরু হ্যালেই লাখ ট্যাকার নিচে দাম বুলা য্যাচ্ছে না’

‘কিন্নি আলারা (ক্রেতারা) চ্যাচ্ছে (চাচ্ছে) যে দাম কম হোক, কমে হবি (হবে)। আর যারা ব্যাচপে (বিক্রেতা) তারা বুলছে (বলছে) যে দাম কম হ্যাচ্ছে (হচ্ছে)। আরও বেশি দাম হলে হ্যালোনি (হলে ভালো হয়)। এই তো হলো সমস্যা। হাটে চ্যার (চার) মণের গরু ১ লাখ ২০ থেকে ৩০ হাজার ট্যাকা। গরু হ্যালেই এক লাখ ট্যাকার (টাকার) নিচে দাম বুলা য্যাচ্ছে না। কিনলে লাখ ট্যাকার উপরে য্যাতে (যেতে) হবে। এক লাখ, ড্যার দেড় লাখ, আড়াই লাখ টাকা দাম। মুটামুটি হলেই দুই লাখ-আড়াই লাখ ট্যাকা দাম।’
শনিবার (২৪ জুন) দুপুরে রাজশাহীর বানেশ্বর হাটে কোরবানির গরু কিনতে আসা দুর্গাপুর উপজেলার সাইবাই গ্রামের শামসুল ইসলাম এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন।
তিনি জানান, হাটে ছোট ও মাঝারি গরুর দাম বেশি। বড় গরুর ক্রেতা তুলনামূলক কম। তবে বিক্রি হচ্ছে মোটামুটি। মাঝারি গরু বেশি বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি গরুর প্রতি চাহিদা বেশিরভাগ মানুষের। আর অনেকেই একা কোরবানি দেবেন। তারা আবার ছোট গরুগুলো কিনছেন।
এদিকে কোরবানির ঈদের মাত্র চারদিন বাকি। শেষ সময়ে জমে উঠেছে রাজশাহীর পশুর হাট। শনিবার বানেশ্বরের সাপ্তাহিক হাট বার। বানেশ্বর কলেজ মাঠে বসেছে গরুর হাট। এই হাটে দূর-দূরান্ত থেকে এসেছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।
দুপুরে বানেশ্বর পশুর হাটে গিয়ে দেখা গেছে, দূর-দূরান্ত থেকে নসিমন, করিমন ও ভটভটি বোঝাই গরু নিয়ে আসছেন মালিক, খামারি ও ব্যাপারীরা। দুপুর ২টার পরে হাটে জমে পশু কেনাবেচা। তবে বরাবরই ক্রেতাদের অভিযোগ বিক্রেতারা দাম কমাচ্ছেন না। তবে বিক্রেতাদের দাবি- গো খাদ্যের দাম বেশি। ফলে গরু লালন-পালনে তাদের তুলনামূলক বেশি টাকা খরচ হয়েছে।
কোরবানির গরু বিকি্রে করতে আসা মো. সালাউদ্দিন বলেন, সব কিছুর দাম বেশি। একটা গরুকে লালন-পালন করতে সব কিছুই কিনে খাওয়াতে হচ্ছে মালিককে। ফলে খরচ বেশি হচ্ছে। কিন্তু গরুর সঠিক দাম চাইলেও ক্রেতারা নারাজ হচ্ছেন। তারা গরুর দিকেই দেখছেন। গরুটা যে কি খেয়ে এত বড় হলো সেটা তারা দেখছেন না। আমার গরুর মাংস হবে কমপক্ষে ৪ মণ। দাম চেয়েছি ১ লাখ ৩৫ হাজার। আর ক্রেতারা বলছে ১ লাখ ১৫ হাজার। বিক্রি করিনি, দেখি আর কত দাম উঠে।
কোরবানির গরু কিনতে আসা মামুন-উর-রশিদ বলেন, হাটে কোরবানির পশু তুলনামূলক ভালোই রয়েছে। তবে বিক্রেতারা গরুর দাম বেশি চাচ্ছেন। হাট ঘুরে বুঝলাম, বড় গরুর চেয়ে ছোট গরুর দাম বেশি। যেমন তেমন গরু হলেই এক লাখ টাকার বেশি দাম চাচ্ছেন বিক্রেতারা। একটু চোখে লাগা গরু হলে দেড় লাখ টাকা দাম চাচ্ছে। এতো দাম চাচ্ছে যাতে দাম বলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, আর চাবেই না কেন। বাজারে সব কিছুর দাম বেশি। একজন মালিক মাসের পর মাস বাড়িতে একটা গরু লালন-পালন করে কোরবানির উপযোগী করে গড়ে তোলেন। তারাও তো দুই পয়সা লাভের আসায় পরিশ্রম করেছেন। হাটে তিন মণের গরু হলে দাম চাচ্ছে ১ লাখ ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা। দারদাম করলে এক লাখ ১০ হাজারের নিচে আসছে না। গরুর মালিকরা দাম কমাতে চাচ্ছেন না। হাটে গরুর তুলনামূলক দাম বেশি মনে হচ্ছে।
আরিফুল ইসলাম নামে অপর এক ক্রেতা বলেন, আমরা পাঁচজন মিলে কোরবানি দেব। আমাদের টার্গেট সাড়ে তিন থেকে চার মণের গরু কেনা। এই ধরনের গরুর দাম লাগবে ১ লাখ ১০ থেকে ২০ হাজার। কিন্তু হাটে এসে দেখেছি তার চেয়ে বেশি দাম চাওয়া হচ্ছে গরুর। হাটে সাড়ে তিন থেকে চার মণের গরুর দাম চাওয়া হচ্ছে ১ লাখ ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা।
বানেশ্বর পশুর হাটের ইজারাদার আবুল কালাম আজাদ বলেন, কোরবানি ঈদের মাত্র চারদিন বাকি আছে। আগামী মঙ্গলবারও বানেশ্বরে পশুর হাট বসবে। আজকে তুলনামূলক ভালো কেনাবেচা হয়েছে। হাটে ক্রেতা-বিক্রেতা যেন জাল টাকা লেনদেনে প্রতারিত না হন সেজন্য জাল টাকা শনাক্তকরণ বুথ বসানো হয়েছে। একই সঙ্গে একজন পশু চিকিৎসকও রাখা হয়েছে।
শাহিনুল আশিক/আরএআর