কাউনিয়া খালপাড় সড়কের অর্ধলাখ বাসিন্দা ভোগান্তিতে

বরিশাল সিটি করপোরেশনের জনগুরুত্বপূর্ণ কাউনিয়া খালপাড় সড়কের সংস্কার কাজ শেষ না হওয়ায় সীমাহীন ভোগান্তিতে রয়েছে হাজার হাজার বাসিন্দা। বিগত এক দশকেও সড়কটি সংস্কার করেনি নগর কর্তৃপক্ষ। তবে সাদিক আব্দুল্লাহ পরিষদ ভোটের আগে হঠাৎ করে দেড় কিলোমিটার সড়ক সংস্কারে হাত দিয়ে সড়কটি খুঁড়ে কাজ শেষ না করায় ভোগান্তির সৃষ্টি করেছে এই সড়ক।
স্থানীয়রা বলছেন, ভোটার টানতে হঠাৎ করেই এই সড়কের কাজে হাত দিয়েছিল তারা। তবে মনোনয়ন হারানোয় শেষ করানোর তাগিদ অনুভব করেনি সাদিকের পরিষদ।
যদিও সিটি করপোরেশন থেকে জানানো হয়েছে, প্রকল্প মেয়াদের ১৬৭ দিনে ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ১৩ দিনে ৫০ ভাগ শেষ করা যেতে পারে। কিন্তু তা হবে কীনা সেসব বিষয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর জানিয়েছে, নগর ভবনের নিজস্ব অর্থায়নে সড়ক পুনঃনির্মাণে হাত দেওয়া হয় চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি। পাঁচ কোটি টাকার বেশি ব্যয় নির্ধারিত এই প্রকল্প বাস্তবায়নের শেষ তারিখ ছিল ২১ জুলাই। সড়ক সংস্কারের বরাদ্দ পান মহানগর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণ্যিজ্য বিষয়ক সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুলের মেসার্স. মাহিমা এন্টারপ্রাইজ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সিটি করপোরেশনের ১নং ওয়ার্ডের মরকখোলার পোল থেকে শুরু করে নথুল্লাবাদ পর্যন্ত পুরো সড়কটি খুঁড়ে বালু ও ইটের খোয়া ফেলে রাখা হয়েছে। সড়কটির পাশে জেলখালের পশ্চিমাংশে পাইলিং দেওয়া হয়েছে। আর পুরো সড়কে বালি ফেলে ওই পাইলিং ধরে রাখার জন্য অন্য পাশে রড দিয়ে টানা দেওয়া হয়েছে। এতে করে সড়কটিতে এখন রডগুলো বালুর উপরে জেগে আছে। রডে গাড়ির চাকা আর মানুষ চলতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে প্রায় প্রতিদিন। অন্যদিকে, একটু বৃষ্টি হলেই সড়কটিতে পানি জমাট বাঁধে। এতে বালু, খোয়া, লোহার রড আর কাঁদায় একাকার হয়ে চলাচলে পুরোপুরি অযোগ্য হয়ে পড়ে।
স্থানীয় বাসিন্দা রুবেল হাওলাদার বলেন, সাদিক আব্দুল্লাহ ভোটের আগে শহরের অনেক এলাকার সড়ক সংস্কারে কাজ শুরু করেন। আমাদের কাউনিয়া খালপাড় সড়কেও তিনি কাজ ধরেন। কিন্তু তিনি মনোনয়ন না পাওয়ার পর থেকেই কাজ বন্ধ। নতুন কেউ এই সড়কের কাজ করবেন কিনা তা নিয়েও দুশ্চিন্তা আছে। তবে পশ্চিম কাউনিয়ার ও আশপাশের কমপক্ষে পঞ্চাশ হাজার মানুষের জন্য সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ।
আকন বেপারি বলেন, গত দশ বছরেও কাউনিয়া খালপাড় সড়কের কাজ কেউ করেনি। আরেকবার মেরামতের জন্য ইটের খোঁয়া বিছানোর কাজ শুরু হওয়ার পরেও সেই কাজ থেমে গেছিল। দীর্ঘদিন ধরেই অযত্নে সড়কটি। আমরা কষ্ট করে চলাচল করতাম। সড়কের কাজ শুরু করে এখন আবার ফেলে রাখা হয়েছে। এজন্য আমরা যে কি পরিমাণ ভোগান্তিতে আছি তা বলা মুশকিল।
চা দোকানি শোয়েব বলেন, বছরের শুরুতে কাজ শুরু হয়। তবে সিটি নির্বাচনের আগে থেকেই বন্ধ। কয়েক দিন আগে একজন গর্ভবতী নারী রডে বেঁধে পরে গেছে। এরপর আমার দোকানের সামনেই একটি হলুদ অটো কাত হয়ে পরে গেছে। সড়কে বালু ফেলার পরেও বড় বড় গর্তের মতো হয়ে আছে। যেই করুক, আমাদের খালপাড় সড়কটি দ্রুত সংস্কারের দাবি জানাই।
একই এলাকার বাসিন্দা মিন্টু হাওলাদার বলেন, এই রাস্তাডা আগের মেয়র শওকত হোসেন হিরন থাকতেই এই অবস্থা ছিল। কয়দিন আগে দেখলাম খোয়া হালাইছে। এখন কাজ বন্ধ। এহন মানসের দুর্ভোগ, রাস্তা দিয়া গাড়ি উলডি খাইয়া পড়ে। যানবাহনের ক্ষতি, আশপাশের মাইনসের ধুলাবালিতে ক্ষতি হয়। মোগো দাবি, রাস্তাডা যেন দ্রুত মেরামত কইরা দেয়।
সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল বাশার জানান, এখন পর্যন্ত ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ যেন দ্রুত শেষ করা হয় সেজন্য তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আশা করছি বাকি ১৩ দিনে বাকি কাজ সম্পন্ন করা হবে।
এই কর্মকর্তা বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং ঈদুল আজহার কারণে কাজ বন্ধ ছিল।
আর নির্মাণ প্রতিষ্ঠান মহিমা এন্টারপ্রাইজের স্বত্তাধিকারী মহানগর আওয়ামী লীগের শিল্প বাণিজ্য সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুলের মুঠোফোনে কলা করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/এমএএস