ভোট ছাড়া চরবাসীকে কেউ চেনে না

‘ভোটটা পানু আর সব ভুলি গেনু। এরামই হয়। ভোট ছাড়া চরবাসীরে কেউ চেনে না। ভোটের সময় বুলে, আমরা এই কাজ করব, ওই কাজ করব। চর থেকে যখন ভোটটা পাবে, তখন সবাই আউট হয়ে যাবে। দুনিয়ার বুকে আর কাহুরি মুখ দেখা যাবে না। ওই পাঁচ বছর পরে অ্যাসি হাত-পা ধরি আবার ভোট লিবে। এরামই করে সবাই।’
এভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন চার খিদিরপুরের বাসিন্দা রুহুল আমিন। চর খিদিরপুর রাজশাহী পবা উপজেলার ৮ নম্বর হরিয়ান ইউনিয়ন পরিষদের অন্তর্গত এলাকা। আগামী ১৭ জুলাই হরিয়ান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট দেবেন এই চরের প্রায় ৪০০ ভোটার। দীর্ঘ একযুগ পর এখানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
রুহুল আমিন আরও বলেন, ‘চরে কেউ অ্যাসি দয়াশালী দেখায় না। তাদের কথা যে চরে থাকবে তাকে ভোট দিতে হবে। যারা ওই পাড়ে আছে তাদের ভোট দিলি আমার যদি বিপদ হয়, তখন তাকে কি করি পাব। উতো ঘরের দরজা বন্ধ করি থাকবে। বুলবে কুন চর ব্যাটা অ্যাসিছে।’
জানা গেছে, এই ৮ নম্বর হরিয়ান ইউনিয়নে নদীর ভাঙনে সীমানা জটিলতা নিয়ে এক যুগ নির্বাচন হয়নি। এবার সীমানা জটিলতা নিরসনের পরে নির্বাচন হতে চলেছে। নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দ শেষে প্রার্থীরা ঘুরছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। নানান প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন ভোটারদের।
বিদ্যুৎহীন এই চর খিদিরপুরে নৌকাই একমাত্র যোগাযোগের মধ্যেম। যেটি নদী পারাপারে ব্যবহার হয়। রাতে গর্ভবতী ও অসুস্থ রোগী নিয়ে নদী পাড় হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে যেতে পড়তে হয় নানান বিড়ম্বনায়। গভীর রাতে ঘাটে নৌকা পাওয়া গেলেও মাঝি পাওয়া কষ্টকর হয়ে যায়। জরুরি প্রয়োজনে চরবাসীর জন্য সার্বক্ষণিক নৌকার ব্যবস্থা কোনো জনপ্রতিনিধিই করেননি। ভোটারদের অভিযোগ ভোটের পরে জনপ্রতিনিদের আর দেখা মেলে না।
তবে মো. সহিদুল নামের একজন মেম্বার প্রার্থী খিদিরপুর চরবাসির জরুরি প্রয়োজনে নৌকা অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালুর কথা জানিয়ে বলেন, ‘আমি প্রথম নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি। এই চরের মানুষের জন্য কিছু করতে চাই। চরবাসী আমার দিকে তাকালে আমি নৌকা অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু করব। যাতে করে রাতবিরাতে অসুস্থ মানুষ নদী পাড় হয়ে রাজশাহী মেডিকেলে (রামেক) যেতে পারে। সবেচেয়ে বেশি সমস্যা হয় গর্ভবতী মায়েদের। ঘাটে রোগী নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয় পার হওয়ার জন্য। আশা করছি এই সমস্যা আর থাকবে না।’
চরবাসীর সঙ্গে জনপ্রতিনিধিদের যোগাযোগের বিষয়ে খিদিরপুরের বাসিন্দা পান্না বেগম বলেন, এলাকার জনপ্রতিনিধি হলে আমাদের ভালো হবে। বিপদে আমরা কাউকে পাশে পাব। তারা আমাদের সহযোগিতা করবে। আর নদীর ওই পাড়ে জনপ্রনিধি হলে আমাদের যোগাযোগে সমস্যা হয়।
পবা উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটার্নিং অফিসার শহিদুল ইসলাম প্রামাণিক বলেন, আগামী ১৭ জুলাই ৯ ওয়ার্ডের ৯টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। চেয়ারম্যান পদে ১০ জন ও সংরক্ষিত আসনে সদস্য পদে ১৯ জন এবং সাধারণ আসনে সদস্য পদে ৫৫ জন। মোট ৮৪ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। হরিয়ান ইউনিয়ন পরিষদের মোট ভোটার সংখ্যা ১৯ হাজার ৫২৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ হাজার ৮৫০ জন ও নারী ভোটার ৯ হাজার ৬৭৮ জন।
শাহিনুল আশিক/আরকে