লাইফ জ্যাকেট ছাড়াই স্পিডবোটে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রী পারাপার

লাইফ জ্যাকেটসহ নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি ব্যবহার না করেই রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও পাবনার কাজিরহাট নৌপথে পদ্মা ও যমুনা নদীতে স্পিডবোটে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা হচ্ছে। প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শত শত যাত্রী উত্তাল নদী পাড়ি দিচ্ছেন। ফলে যেকোনো সময় ঘটে যেতে পারে প্রাণহানির মতো বড় দুর্ঘটনা।
ঘাট সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দৌলতদিয়া থেকে কাজিরহাট প্রায় ৩৫ কিলোমিটার নৌপথ পাড়ি দিতে সময় লাগে ৩০ মিনিট। তাই দৌলতদিয়া থেকে পাবনা ও সিরাজগঞ্জ যাতায়াতে দ্রুত সময়ের মধ্যে পৌঁছাতে স্পিডবোটে যাত্রীদের আগ্রহ বেশি।
দৌলতদিয়া থেকে পাবনার কাজিরহাট পর্যন্ত জনপ্রতি ৩০০ টাকা ভাড়া আদায় করা হয়। দৌলতদিয়ার মালিকানাধীন ৬টি এবং কাজিরহাটের মালিকানাধীন আরো ৬টিসহ মোট ১২টি স্পিডবোট চলাচল করে। প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত যাত্রী পারাপার করা হয়।

অভিযোগ রয়েছে, অদক্ষ চালক দিয়ে স্পিডবোট চালানোয় দুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েছে। প্রত্যেক বোটে ১২ জন যাত্রী বহনের কথা থাকলেও ২০ থেকে ২২ জন যাত্রী বহন করে থাকেন। যাত্রীদের বাধ্যতামূলক নিরাপত্তা জ্যাকেট বা লাইফ জ্যাকেট পড়ার কথা থাকলেও তা যাত্রীদের মাঝে সরবরাহ করা হয় না। এতে করে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে।
সরেজমিনে দৌলতদিয়া লঞ্চ ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, সকাল ১০টার দিকে পাবনার কাজিরহাট থেকে ‘এসপিবি রোমান’ নামে একটি স্পিডবোট ১৬ জন যাত্রী নিয়ে ঘাটে ভিড়ে। সেই স্পিডবোটে ১৪ জন পুরুষ, এক নারী ও এক শিশু ছিল। যদিও স্পিডবোটের ধারণক্ষমতা ১২ জন।
যাত্রীদের অভিযোগ, স্পিডবোটের চালক লাইফ জ্যাকেটের ব্যবস্থা না রাখায় বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই তারা পদ্মা পার হচ্ছেন।
ঢাকা থেকে আসা সিরাজগঞ্জগামী যাত্রী শহিদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন পর নদীপথে সিরাজগঞ্জে ব্যবসায়িক কাজে যাচ্ছি। বেশ ভালো লাগছে। তবে নদী পথে ঝুঁকিও আছে। ছোট একটি বোটে মালামালসহ ১৮-২২ জন যাত্রী তুলছে। আবার যাত্রীদের লাইফ জ্যাকেটও দেওয়া হচ্ছে না। বেশ ভয় আর ঝুঁকি নিয়েই নদীপথ পাড়ি দিচ্ছি।
ফারজানা নামের নারী যাত্রী বলেন, নতুন নতুন যখন আসতাম তখন কিছুটা ভয় কাজ করতো। এখন মাঝে মধ্যে আসা যাওয়া করায় ভয় অনেকটা কেটে গেছে। লাইফ জ্যাকেট পড়েছিলেন কি না জানতে চাইলে বলেন, জ্যাকেট পড়ার কথা বলেছিল, কিন্তু পড়িনি।
নদীপথের আরেক যাত্রী সিরাজুল ইসলাম বলেন, সময় বাঁচাতে নদীপথ দিয়ে যাত্রা করছি। নদী পথে না গেলে ঢাকা পৌঁছাতে স্বাভাবিক সময়ের অনেক সময় বেশী লাগে। তবে স্পিডবোটের মাধ্যমে নদী পারাপারে অনেক ঝুঁকি আছে।
স্পিডবোট চালক মো. বকুল বলেন, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) নৌপরিবহণ অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষক এসে আরিচা ঘাটে আমাদের পরীক্ষা নিলে প্রায় ১১০ জনের মতো পাস করি। আমাদের প্রশিক্ষণের সার্টিফিকেইট আছে। এ কারণে বোট চালাতে আমাদের কোন সমস্যা নাই।

স্পিডবোটের অন্য চালক বলেন, ‘প্রতিটি স্পিডবোটের চালককে বোট ছাড়ার আগে যাত্রীদের লাইফ জ্যাকেট পরিয়ে নেওয়ার জন্য বারবার বলা হয়। অনেক সময় যাত্রীরা গরমের কারণে লাইফ জ্যাকেট না পরে হাতে নিয়ে বসে থাকেন। তাদের লাইফ জ্যাকেট পড়ার অনুরোধ করলেও তারা মানেন না। আমরা আমাদের দিক থেকে চেষ্টা করে থাকি। যাত্রীরা যদি কথা না শুনে আমরা আর কি করতে পারি?
দৌলতদিয়া ঘাটের দায়িত্বরত ব্যবস্থাপক তোতা খান বলেন, সকালে হঠাৎ করে যাত্রীর চাপ কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় ১৮ জন করে পার হয়েছে। যাত্রীদের মাঝে লাইফ জ্যাকেট সরবরাহ করা প্রসঙ্গে বলেন, লাইফ জ্যাকেট দিলেও অনেকে পড়তে চাই না।
দৌলতদিয়া নৌপুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জে এম সিরাজুল কবির মোবাইল ফোনে জানান, দৌলতদিয়া ঘাটে বিআইডব্লিউটিএ’র যারা আছেন তাদের আমি বিষয়টি জানিয়েছি। ঘটনাস্থলে গিয়ে স্পিডবোট চালকদের সতর্ক করেছি, কেউ যাতে লাইভ জ্যাকেট ছাড়া নদী পার না হয়। যদি লাইভ জ্যাকেট ছাড়া কেউ পার হয় তাহলে আমরা মালিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিআইডব্লিউটিএ’র আরিচা কার্যালয়ের ট্র্যাফিক পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেন ও আফতাব হোসেন বলেন, স্পিডবোট চালক ও ঘাট ব্যবস্থাপককে বার বার সতর্ক করা হয়েছে। লাইফ জ্যাকেট সরবরাহ করাসহ প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি নিয়ে যাত্রী বহন করতে বলা হয়েছে। এরপরও আদেশ অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মীর সামসুজ্জামান/এএএ