ফেনী পলিটেকনিকের অধ্যক্ষের অপসারণ দাবিতে সড়ক অবরোধ

অধ্যক্ষের অপসারণসহ ৮ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। রোববার (১৬ জুলাই) রাতে সড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
ক্যাম্পাস থেকে একটি মিছিল নিয়ে ফটকের সামনে পরশুরাম-ছাগলনাইয়া আঞ্চলিক সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করে রাখেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের অবরোধে প্রায় এক ঘণ্টা সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। এতে ভোগান্তিতে পড়েন চালক ও যাত্রীরা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে শিক্ষার্থীদের থেকে বাড়তি টিউশন ফি আদায় করছে কলেজ প্রশাসন। এছাড়াও শিক্ষক সংকট নিরসন, টিউশন বাণিজ্য বন্ধ, কলেজ ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন অনিয়ম বন্ধে কলেজ অধ্যক্ষের অপসারণসহ মোট ৮ দফা দাবিতে এ আন্দোলন করা হচ্ছে।
মো. তুহিন নামে আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থী জানান, ফরম পূরণের সময় ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাড়তি ফি আদায় করছে কলেজ প্রশাসন। এছাড়াও উন্নয়ন ফি নামে অনেকগুলো খাত উল্লেখ করে ফি আদায় করলেও কোনো উন্নয়ন কাজ করা হয় না। কলেজ ছাত্রাবাসের কোনো কিছু নষ্ট হলে আবাসিক ছাত্রদের নিজেদের টাকায় তা মেরামত করতে হয়।
আন্দোলনরত আরেক শিক্ষার্থী বলেন, কলেজের ২য় শিফটের শিক্ষক সংকট দীর্ঘদিনের। বিভিন্ন সময় আন্দোলন করেও কোনো সমাধান হয়নি। এছাড়া কলেজের কয়েকজন শিক্ষক সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করেন। কলেজে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা এসে আবাসিক শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না। কলেজের এসব অনিয়ম-দুর্নীতি দেখেও না দেখার ভান করেন কলেজ অধ্যক্ষ। তাই কলেজ অধ্যক্ষের অপসারণ চাই।
এদিকে আন্দোলনের বিষয়টিকে পরিকল্পিত বলছেন ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী প্রদীপ্ত খীসা। তিনি বলেন, রোববার পরীক্ষা চলাকালীন হল থেকে ডেকে নিয়ে দীপ্ত দাস নামে এক পরীক্ষার্থীকে মারধর করায় ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাত্রলীগের সভাপতিসহ দায়িত্বশীলদের ডেকে কারণ জানতে চাওয়া হয়েছে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উল্টো কলেজ প্রশাসনের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীদের লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে।
অধ্যক্ষ বলেন, ছাত্রদের আন্দোলনের বিষয়ে কিছুই জানতাম না। তারা আমাকে জানায়নি। যেহেতু এখন তাদের দাবিগুলো সম্পর্কে জেনেছি তদন্ত করে অবশ্যই প্রতিকারসহ যথাযথ ব্যবস্থা নেব।
তিনি আরও বলেন, আমি সরকারি চাকরি করি। কোনো অপরাধে আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে আপত্তি নেই। কিন্তু আজকের ঘটনা পরিকল্পিত মনে হচ্ছে। এখানের ছাত্র সংগঠনের সদস্যদের অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা না দিলে তারা এমন হট্টগোল করে। শিক্ষার পরিবেশকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে।
প্রকৌশলী প্রদীপ্ত খীসা বলেন, ১৪৪ ধারা চলাকালীন রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা নেতারা পরীক্ষার হলে প্রবেশের অনুমতি চায়। পরীক্ষার কক্ষে মোবাইল নিয়ে আসতে চায়, রাতের বেলায় কোনো কারণ ছাড়া মেয়েদের আবাসিক হোস্টেলের আশপাশে ঘুরাঘুরি করে। এসব বিষয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে গেলেই তারা আন্দোলনে নেমে পড়ে।
এদিকে আন্দোলনের খবর পেয়ে সেখানে উপস্থিত হন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তোফায়েল আহমেদ তপু এবং সাধারণ সম্পাদক নূর করিম জাবেদ।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, এ দুই ছাত্রলীগ নেতা তাদের গায়ে হাত তুলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে সরে যেতে বাধ্য করেছে।
আরএআর