অন্ধকার গলিতে আলোক-সুরের মূর্ছনা

‘যে ফোটে আঁধারে’। এক ব্যতিক্রমী আয়োজনের ব্যতিক্রম শিরোনাম। যে আয়োজন মুক্ত মানুষের জন্য নয়। আয়োজনটি যৌনপল্লির শৃঙ্খলিত মানুষের জন্য। যারা মুক্ত আকাশ দেখতে পারে না। পাশেই কোথাও জোরে সাউন্ড বেজে উঠলে আনমনে গায় গান। কখনো যেতে পারেন না কোনো গানের আসর কিংবা কনসার্টে।
যৌনপল্লির সেসব মানুষের জন্য এক ভিন্ন আয়োজন ‘যে ফোটে আঁধারে’। ভিন্ন আয়োজনের মঞ্চটিও সাজানো হয়েছিল ভিন্নতায়। লেখা ছিল মনকাড়া স্লোগান, ‘ফুল ফোটা সুন্দর, ঝরে যাওয়া সুন্দর, ভালোবাসা সুন্দর, বেঁচে থাকা সুন্দর, জীবন সুন্দর, মন সুন্দর, মম সুন্দর, ওরা সুন্দর, কান্না সুন্দর, হেসে ওঠা সুন্দর।’ নীল-সাদা রঙের লাইটিংয়ে সময় হয়ে উঠেছিল অভূত আনন্দের। মুক্ত পাখির মতো ডানা মেলে নেচেছে সকলেই। নিজেরাও গেয়েছে কণ্ঠ ছেড়ে।
শুক্রবার (২১ জুলাই) রাত ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত চলে এ আনন্দ আয়োজন। অনুষ্ঠান চলার সময় বাইরের কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি পল্লিতে। মঞ্চে কণ্ঠসুধায় মাতিয়ে তোলেন চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠের এসএমএস রাউন্ডে থাকা শিল্পী অনিরুদ্ধ শুভ, মিজান বাউলা, খাইরুল ইসলাম হীরক (হীরক সিঙ্গার), জাকারিয়া আফরিদ, ‘নয়াবাড়ি’ খ্যাত সাগর তালুকদার, আল আমিন, মাটির বাউল রায়হান ও ডিএইচ রনি। অনুষ্ঠান শুরুর আগে ফুলের তোড়া দিয়ে শিল্পীদের বরণ করে দেন যৌনপল্লির বাসিন্দারা।
ময়মনসিংহ নগরীর রমেশ সেন রোডে যৌন কর্মীদের বসবাস। অন্তত দুই শ বছরের পুরোনো এই পল্লিতে বর্তমানে ২২০ জন বাসিন্দা বসবাস করছেন। অন্ধকার গলিতে জীবন কাটানো মানুষদের জন্য সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘ছায়া মানব’ ও ‘পরম্পরা’। দুটি সংগঠনেরই উদ্যোক্তা ও অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করেন কবি এবং সংগঠক শামীম আশরাফ। আয়োজনে সহযোগিতায় ছিল যৌনকর্মীদের সংগঠন শুকতারা কল্যাণ সংঘ।

যৌনকর্মীরা জানান, তাদের বিনোদনের কথা ভেবে যারা এই আয়োজন করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। এছাড়া বিশেষ শ্রেণির মানুষের জন্য গান গাইতে পেরে শিল্পীরাও আনন্দিত। তারা বলেন, ভাগ্যের কারণে এরা সমাজ থেকে অবহেলিত পল্লির মানুষ। এই মানুষদের জন্য গান গাইতে পারাটা অনেক বড় পাওয়া।
আয়োজনের উদ্যোক্তা কবি শামীম আশরাফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই আয়োজন তাদের জন্যই যাদেরকে আমরা মানুষ বলতে দ্বিধা করি। তাদেরকে পতিতা বলি। তারা যেন কিছুটা সময় নিজেদেরকে উপভোগ করতে পারেন, বিভীষিকাময় সময় ভুলে থাকতে পারেন তাই এই আয়োজন। শিল্প-সংস্কৃতির নগরী ময়মনসিংহের কিছু তারুণ্যের শিল্পকে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়াস ছিল এটি। আমরা আরও স্বাস্থ্যসেবাসহ নানা আয়োজন করতে চাই। সচেতন মানুষ হিসেবে তারা যেন নিজেদেরকে নানাভাবে মেলে ধরতে পারে।
শুকতারা কল্যাণ সংঘের সভাপতি লাভলী হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এমন বড় ও সংগীতের আয়োজন এখানে এর আগে হয়নি। এ ধরনের আয়োজনে মেয়েরা খুব আনন্দিত ও উৎসাহিত হয়েছে।
উবায়দুল হক/এমজেইউ