এক মাস না পেরোতেই মরছে অনুদানের গবাদিপশু

নীলফামারীর ডিমলায় সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় গবাদি পশু বিতরণের এক মাস যেতে না যেতেই অন্তত ৫০টি প্রাণী মারা গেছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন উপকারভোগীরা। তাদের অভিযোগ, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার যোগসাজশে প্রকল্পের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান শর্তাবলী লংঘন করে অত্যন্ত রুগ্ন ও কঙ্কালসার গবাদি পশু বিতরণ করছেন।
জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী চরাঞ্চলে বসবাস করা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য হ্রাস ও জীবনমান উন্নয়নে প্রাণিসম্পদ বিভাগ এই সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প নেয়। এর আওতায় সম্প্রতি ডিমলায় ২০টি পরিবারকে ১টি করে গরু, ৪২টি পরিবারকে ঘরসহ ৩টি করে ভেড়া, ৪২টি পরিবারকে ২টি করে ছাগল ও ৬২টি পরিবারকে মুরগি পালনের ঘর দেওয়া হয়। পর্যায়ক্রমে উপজেলার ৪৫০ উপকারভোগী এ সহায়তা পাবেন। ইতোমধ্যে বিতরণ করা গরু- ছাগল উপকারভোগীরা বাড়িতে নিতে না নিতেই মরতে শুরু করেছে।
অভিযোগ রয়েছে, প্রতিটি উপকারভোগী পরিবারকে সর্বনিম্ন ১২০ কেজি ওজনের গরু দেওয়ার কথা থাকলেও ৫০-৬০ কেজি ওজনের ছোট ও রোগাক্রান্ত বাছুর দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ৭ কেজির জায়গায় ৩-৪ কেজির ভেড়া ও ৮ কেজির জায়গায় ২-৪ কেজির ছাগল মিলেছে। একাধিক সচ্ছল ব্যক্তিও অনুদানের পশু পেয়েছেন।
উপকারভোগীরা জানান, প্রকল্পে দেওয়া গবাদিপশুগুলো অত্যন্ত রুগ্ন ও কঙ্কালসার ছিল। সরকারি বরাদ্দের অর্ধেক দামেও কেনা হয়নি এসব গবাদি পশুগুলো। তাদের নিজ বাড়িতে এসব গবাদি পশু নেওয়ার পর অনেকগুলোই অসুস্থ হয়ে পড়ে। আবার অনেকের মারাও গেছে।
উপকারভোগী ও চর প্রকল্পের মাঠকর্মী সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্প এলাকার পূর্ব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি, ঝুনাগাছ চাপানী, খালিশা চাপানি ইউনিয়ন ও ছিটমহল এলাকায় অন্তত ৪০টি অনুদানের ছাগল-ভেড়া মারা গেছে। উল্লেখ্য এসব গবাদিপশু বিতরণ করা হয়েছিল এপ্রিল ও মে মাসের শেষের দিকে। বিতরণের এক মাসের মধ্যে এ সকল প্রাণী মারা গেলে নতুন প্রাণী সরবরাহ করার নিয়ম থাকলেও দুই মাস পেরিয়ে গেলেও মাত্র ৪জন উপকারভোগীকে নতুন প্রাণী সরবরাহ করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
চর-প্রকল্পের মাঠকর্মীরা জানান, এসব গবাদি পশুর মৃত্যুর সব তালিকা তারা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন।
উপজেলার গয়াবাড়ি ইউনিয়নের ঠাটারি পাড়া গ্রামের উপকারভোগী স্বপ্না বেগম বলেন, আমাকে যে ২টা ছাগল দেওয়া হয়েছিল তার ওজন ২ কেজির বেশি হবে না। অসুস্থ ছাগল ২টা বাড়িতে নিয়ে আসার ১০ দিনের মধ্যে মারা গেছে। অফিসের লোকজনকে জানালেও আমাকে আর অন্য কোন ছাগল দেয়নি।
একই এলাকার সোনালি বেগমের ২টি ছাগল, ছকিনা ও আমিনুর রহমানের ১টি করে ভেড়ার মৃত্যু হয়েছে।
সোনালি বেগম বলেন, যে ছাগল ও ভেড়া দেওয়া হয়েছে তার ওজন ২ থেকে ৩ কেজির বেশি হবে না। পরে জানতে পারলাম আমাদের দেওয়ার জন্য সর্বনিম্ন ৮ কেজি ওজনের গবাদি পশু বরাদ্দ রয়েছে। আমাদের সহজ সরল পেয়ে ঠকিয়েছে। আমরাও মৃত গবাদি পশুর বদলি পাইনি।
একই এলাকার একাধিক উপকারভোগী জানান, উপজেলা প্রানী সম্পদ অফিসে লালন-পালন বিষয়ক কর্মশালায় তাদেরকে বলা হয়েছিল ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা মুল্যের উন্নত জাতের গরু দেওয়া হবে। প্রতিটি গরু সর্বনিম্ন ১২০ কেজি ওজনের হবে। কিন্তু তাদের দেওয়া হয়েছে কম ওজনের রুগ্ন ও কঙ্কালসার দেশীয় জাতের গরু। যার বাজার মূল্য হবে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকার বেশি হবে না। ছোট আকারের এসব গরুর বয়সও অনেক বেশি। এসব গরু লালন পালন করে তাদের লাভ হবে না।
তারা আরও জানান, দামের সঙ্গে বিতরণকৃত গবাদি পশুর সামঞ্জস্য না পাওয়ায় অধিকাংশ উপকারভোগী সেগুলো নিতেও চাননি। এ নিয়ে উপকারভোগীদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজনের সঙ্গে অনেক দেন দরবার করে এসব গবাদি পশু নিতে বাধ্য করা হয়।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মদন কুমার বলেন, দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী গবাদি পশুগুলোর ওজন কম থাকায় বিতরণ কার্যক্রম স্থগিত করেছিলেন। পরে উপকারভোগীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কম ওজনের গরু বিতরণ করা হয়েছে। ছাগল ও ভেড়া বিতরণের সময় প্রকল্পের পরিচালক ডা. নন্দ দুলাল উপস্থিত ছিলেন। ছোট হলে উপকারভোগীরা তখন অভিযোগ করেনি কেন? এছাড়া জীবন্ত পশুর ওজন কম না বেশি ও মৃত্যু হতে পারে। এটা স্বাভাবিক বিষয়।
শরিফুল ইসলাম/আরকে