নোবেলদাতাদের চোখে ছানি থাকায় হাসিনা-মোদি নোবেল পাননি

উদ্দীপন বাংলাদেশ সোসাইটি ফর কালচারাল অ্যান্ড সোশ্যাল স্টাডিজ ও উত্তরবঙ্গ জাদুঘরের যৌথ আয়োজনে ছিটমহল বিনিময় ঐতিহাসিক মানবিক অর্জন শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় বক্তারা বলেন, নোবেল দাতাদের চোখে ছানি রয়েছে। সে কারণে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি শান্তিতে নোবেল পাননি।
মঙ্গলবার (১ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টায় কুড়িগ্রাম শেখ রাসেল অডিটোরিয়ামে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সভায় রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ।
তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের লাঞ্ছনা-বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে একটি রক্তপাতহীন ভূখণ্ড বিনিময় ও মানুষ বিনিময়ের ঘটনাটি বিরল হলেও, সেভাবে প্রচার করা হয়নি।
বিলুপ্ত বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সাবেক সেক্রেটারি গোলাম মোস্তফা বলেন, ১ আগস্টকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ছিটমহলমুক্ত দিবস হিসেবে পালন করা হোক।
পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ছিটমহলের মানুষের ভেতরের যে কথা তা ডকুমেন্টেশন করা দরকার। কারণ এই মানুষগুলো সারাজীবন থাকবেন না। র্যাডক্লিফ দেশ ভাগ করে একটি টিউমার রেখে গেছেন। দীর্ঘদিনের সংগ্রামের পর আপনারা টিউমারটি অপারেশন করতে পেরেছেন। এই টিউমারের ব্যথা ৬৮ বছর ধরে প্রজন্মের পর প্রজন্ম আপনারা ভোগ করে গেছেন। আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে বিচার চেয়ে আপনারা এর প্রতিকার করতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, ভারত-বাংলাদেশ চুক্তির ফলে যে বিশাল অর্জন হয়েছে, তার জন্য বিভিন্ন মহলের কাজ করা দরকার। এটি শেখ হাসিনা সরকারের বিশাল সাফল্য অথচ তিনি আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত হননি। এটি নিয়েও কাজ করা দরকার।
সাবেক সচিব ড. মিহির কান্তি মজুমদার বলেন, ছিটমহলগুলোর জন্য বাংলাদেশ সরকার অনেক কিছু করছেন। তাদের জন্য আরও কাজ করার সুযোগ রয়েছে। সেই কাজগুলো সবাই মিলে করা দরকার।
সভাপতির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট এসএম আব্রাহাম লিংকন বলেন, আগে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ছিল না। এখন ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ জ্বলছে, আলপথ এখন রাজপথ হয়েছে। আজকের ছিটমহল এবং আট বছর আগের ছিটমহলের মধ্যে বিশাল পার্থক্য হয়েছে। একসময় স্বাধীনতা বিরোধীরা গোলামি চুক্তি বলেছিল। অথচ এই চুক্তি ৫১ হাজার মানুষকে বন্দিদশা থেকে মুক্তি দিয়েছে। শোকাবহ আগস্টে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছিটমহলবাসীদের জীবনে আলোকবর্তিকা নিয়ে এসেছেন। নোবেল দাতাদের চোখে ছানি না থাকলে ছিটমহলের শান্তিপূর্ণ সমাধানের কারণে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি শান্তিতে নোবেল পেতেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, আগামী বছর থেকে এই ঐতিহাসিক দিনটিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হবে বলে আমি কথা দিচ্ছি। জনসংখ্যার বিষয়ে যেসব বিরোধ রয়েছে তা মিটিয়ে ফেলা হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উত্তরবঙ্গ জাদুঘর ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এসএম আব্রাহাম লিংকন। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ। আরও বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জাফর আলী, বিলুপ্ত বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সাবেক সভাপতি মইনুল হক, সেক্রেটারি গোলাম মোস্তফা, উদ্দীপনের নির্বাহী পরিচালক বিদ্যুৎ কুমার বসু, অনুপম রায়সহ আরও অনেকে।
২০১৫ সালের ১ আগস্ট দুই দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ও ভারতের ১৬২টি ছিটমহল বিনিময় হয়। এতে ৫১ হাজার ছিটমহলবাসী বন্দিদশা থেকে মুক্তি লাভ করেন। দীর্ঘদিন ধরে অমানবিক জীবনযাপনকারী ছিটমহলবাসীর উন্নয়নের পথ সুগম হয়। আর কয়েক বছরে বাংলাদেশি ছিটমহলগুলো অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটে।
কেএ
