৬০ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগের প্রতিবাদে মেয়রের সংবাদ সম্মেলন

বগুড়া পৌরসভায় বিভিন্ন খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ৬০ কোটি টাকা আত্মসাতের সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মেয়র ও জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা।
শনিবার (২৬ আগস্ট) পৌনে ১২টার দিকে বগুড়া পৌরসভার সভা কক্ষে এই সংবাদ সম্মেলন করেন মেয়র রেজাউল করিম বাদশা। এ সময় পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা ও সকল ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে পৌর মেয়র দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। অভিযোগ প্রমাণ করতে পারলে নিজের পদ থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। এছাড়াও অভিযোগকারী এমএকে আজাদকে তিনি দালাল বলে উল্লেখ করেছেন।
এর আগে গত ৩ জুলাই পৌরসভার ঠিকাদার এমএকে আজাদ স্থানীয় সরকার, পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রীর কাছে লিখিত আকারে একটি অভিযোগ করেন। এর প্রেক্ষিতে বগুড়ার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (ডিডি এলজি) মাসুম আলী বেগকে সরেজমিন তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গত ১৭ আগস্ট স্থানীয় সরকার, পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের (পৌর-১ শাখা) উপসচিব আবদুর রহমানের স্বাক্ষরিত পত্রে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
লিখিত ওই অভিযোগে বলা হয়, স্থানীয় সরকার বিভাগের অনুমতি ছাড়া মেয়র পৌর ভবনের নকশা পরিবর্তন করে মিডল্যান্ড ব্যাংকের উপশাখা স্থাপন করেছেন। ওই ব্যাংক থেকে ৭৫ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে পৌরসভার গ্যারেজ ও ভবন ভেঙে ব্যাংকের উপশাখা স্থাপন করে পৌর সম্পদ বিনষ্ট করেছেন।
নিয়ম ভেঙ্গে কোনো টেন্ডার না দিয়ে পৌর মসজিদ বিল্ডিংয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ তলা নির্মাণকাজ প্রায় ৫০ লাখ টাকায় দিন হাজিরার মাধ্যমে করিয়েছেন। এ কাজটি করানো হয়েছে শহর পরিকল্পনাবিদ আল মেহেদী হাসানের মাধ্যমে। জন্ম নিবন্ধন করে দেওয়ার নামে পৌর নাগরিকদের কাছে আড়াই কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। গত দুই বছরে কাজ না করে রাজস্ব উন্নয়ন ও প্রকল্পের তহবিল থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকার বিল পরিশোধ করা হয়। পৌরসভার বাইরে ২৮ জন কাউন্সিলরের কোনো অফিস থাকার বিধান নেই। অথচ প্রতি বছর কাউন্সিলরদের গুদাম ভাড়ার নামে সাত লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। এর অর্ধেক মেয়র আত্মসাৎ করে থাকেন। এভাবে দুই বছরে দুই কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। গত আড়াই বছরে ভুয়া বিল ভাউচার টেন্ডার কোটেশন ডিপিএম ইত্যাদির মাধ্যমে প্রায় ২৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে।
এ ছাড়া স্থানীয় সরকার বিভাগের অনুমোদন না নিয়ে পৌরসভায় বিএনপির ১০ কর্মীকে মাস্টাররোলে নিয়োগ দেওয়া, কর্মচারীদের সেই এফডিআরের লভ্যাংশের টাকা উত্তোলনসহ নানা অনিয়মের কথা উল্লেখ করা হয় অভিযোগ পত্রে।
বগুড়া সদরে কৈগাড়ী এলাকার বাসিন্দা ও পৌরসভার ঠিকাদার এমএকে আজাদ প্রিন্স বলেন, বর্তমান মেয়র স্বাক্ষরিত পৌরসভার ট্রেড লাইন্সেকৃত আমার প্রতিষ্ঠানের নাম বগুড়া বিল্ডিং প্লানিং কনসালটেন্ট ও সাব সয়েল ইনভেস্টিগেশন। ফেব্রুয়ারিতে ইঞ্জিনিয়ার্স কর্মশালায় প্রথম হয়েছে আমার প্রতিষ্ঠান। আর আমার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম হাজী অ্যান্ড ব্রাদার্স। এটা ২০০৮ সালে লাইসেন্স করা। আর ২০১৮ অর্থবছরে এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে সাড়ে তিন লাখ টাকা কর দিয়েছি সরকারকে।
‘তাহলে আপনিই বলেন আমি ঠিকাদার হলাম না কীভাবে? আমাকে দালাল কীভাবে বলেন পৌর মেয়র? যেখানে মেয়র নিজেই আমার লাইসেন্সে স্বাক্ষর করেছেন।’
এমএকে আজাদ আরও বলেন, তিনি আমাকে অবাঞ্ছিত করার ঘোষণা দিয়েছেন এটাও তো ক্ষমতার অপব্যবহার। কারণ আমি একজন পৌর নাগরিক। তিনি তো আমাকে পৌরসভায় আসা বন্ধ করতে পারেন না। বরং তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে সেগুলো যাচাই করলেই সত্যতা বের হবে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মাসুম আলী বেগ বলেন, বগুড়া পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম বাদশার বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগে তদন্তের চিঠি এসেছে। অভিযোগগুলো যাচাই করে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
আসাফ-উদ-দৌলা নিওন/এএএ