গাইবান্ধায় কালবৈশাখী ঝড়ে ৮ জনের মৃত্যু, আহত ৩০

গাইবান্ধার সদর, সুন্দরগঞ্জ, পলাশবাড়ী, ফুলছড়ি ও সাদুল্লাপুরে কালবৈশাখী ঝড়ে তিন নারী ও এক শিশুসহ আটজনের মৃত্যু হয়েছে। গাইবান্ধা সদর উপজেলা ছাড়াও বাকি ছয় উপজেলায় গাছের নিচে ও বাড়িঘরের নিচে চাপা পড়ে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন।
আহত ব্যক্তিদের গাইবান্ধা জেলা হাসপাতাল ছাড়াও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে গুরুত্বর আহত আটজনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
রোববার (৪ এপ্রিল) বেলা তিনটার দিকে গাইবান্ধার বিভিন্ন উপজেলার ওপর দিয়ে এ কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক আবদুল মতিন। তিনি জানান, হঠাৎ শুরু হওয়া ঝড়ে বিভিন্ন স্থানে ঘরবাড়ি-গাছপালা ভেঙে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বিভিন্ন সড়কে ভেঙে পড়া গাছ অপসারণে কাজ করছেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারেননি।
ঝড়ে নিহতরা হলেন পলাশবাড়ী উপজেলার বেতকাপা ইউনিয়নের মোস্তাফুর গ্রামের গোফফার রহমান, ডাকেরপাড়া গ্রামের জাহানারা বেগম ও মনোহরপুর ইউনিয়নের কুমেদপুর গ্রামের মমতা বেগম (৫৫)। সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়নের দোয়ারা গ্রামের ছোলায়মান মিয়ার স্ত্রী ময়না বেগম (৪০)। ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের কাতলামারি গ্রামের বিটুল মিয়ার স্ত্রী শিমুলী আক্তার (২৭)। সাদুল্লাপুর উপজেলায় আব্দুস সালাম সর্দার নামে এক ব্যক্তি ঝড়-আতঙ্কে মারা গেছেন।
এরপর সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঝড়ে আহত হওয়ার পর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দুজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানোর পথে দুজনের মৃত্যু হয়। তারা হলেন সদর উপজেলার তিনগাছের তল এলাকার হিরু মিয়ার শিশুসন্তান মনির মিয়া (৫) ও ফুলছড়ি উপজেলার এরেন্ডাবাড়ি গ্রামের হারিস উদ্দিন (৩৫)।
এদিকে গাইবান্ধার সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলায় বৈশাখী ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রচণ্ড গতির বাতাসে কাঁচা-পাকা ঘর ভেঙে পড়াসহ উড়ে গেছে টিনের চালা। এ ছাড়া আমের মুকুল, লিচু ও আমন ধানসহ বিভিন্ন জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোথাও কোথাও গাছ ভেঙে সড়কের ওপরে পড়ায় যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার খবরও পাওয়া গেছে।
এর আগে রোববার বিকেল পৌনে চারটা পর্যন্ত থেমে থেমে চলে ঝোড়ো হাওয়া। সঙ্গে ছিল দমকা বাতাস। সেই সঙ্গে কোনো কোনো এলাকায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাতের খবরও পাওয়া গেছে। বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ায় বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, গাইবান্ধা সদর উপজেলার স্টেশন রোড, ট্রাফিক মোড়, বাংলাবাজারসহ শহরের বিভিন্ন রাস্তাঘাট ও পাড়া মহল্লায় অনেক কাঁচা-পাকা ঘর ভেঙে পড়েছে। বসতবাড়ি ছাড়াও বিভিন্ন সড়কের দুই পাশের ছোট-বড় বেশ কিছু গাছপালা উপড়ে পড়েছে। স্থানীয় হাসেমবাজার এলাকায় একটি বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে বিদ্যুৎ-সংযোগ বন্ধ হয়ে আছে।
একই অবস্থা দেখা গেছে সাদুল্লাপুর উপজেলায়ও। ঝোড়ো বাতাস আর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির কারণে উপজেলা শহর, কাজিবাড়ি, জয়েনপুর, জামুডাঙ্গাসহ বিভিন্ন গ্রামের অসংখ্য কাঁচা ঘরবাড়ি আর গাছপালা সড়কে উপড়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আবদুল মতিন ঢাকা পোস্টকে জানান, হঠাৎ বয়ে যাওয়া দমকা হাওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় বাড়িঘর ও গাছপালা ভেঙে পড়াসহ ধানের জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ঝড়ে নিহত প্রত্যেক পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে।
রিপন আকন্দ/এনএ/জেএস