ভূমিহীনদের কাছে নদীর চর ‘বিক্রি’ নেতাদের, উচ্ছেদ প্রশাসনের

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের গড়াই নদীর চর অবৈধ দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠী ওই চরের জায়গা ভূমিহীনদের কাছে বিক্রি করেছিল বলে অভিযোগ উঠেছে।
তাদের অনেকেই আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কেউ আবার জনপ্রতিনিধিদের স্বজন। হরিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের জামাই জনি ও সাবেক ইউপি সদস্য নেদাই মেম্বারসহ অনেকের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে। এতে মাথা গোঁজার ঠাই হারিয়ে চরম বিপদে পড়েছেন অনেকে।
ভুক্তভোগী জেসমিন খাতুন বলেন, আমি স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য নেদাই মেম্বারকে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে নদীর চরে তিন কাঠা জমি নিয়েছিলাম। কিস্তি নিয়ে ঘর তুলেছিলাম। সেই ঘর অভিযানের মাধ্যমে উচ্ছেদ করা হয়েছে। আমার মতো টাকার বিনিময়ে চরের জমি অনেকেই নিয়েছে। আমার টাকা ফেরত চাই। যারা আমার কাছে থেকে টাকা নিয়েছে তাদের বিচার চাই।
ভুক্তভোগী মানিকের স্ত্রী মেঘলা খাতুন বলেন, আমি হরিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের জামাই জনির কাছ থেকে ৫৫ হাজার টাকা দিয়ে আড়াই কাঠা জমি দিয়েছে। জনির বাড়ি আমলাপাড়ায়। আমরা গরিব মানুষ। অনেক কষ্টে করে ৫৫ হাজার টাকা দিয়ে জমি নিয়েছিলাম। সমিতি থেকে কিস্তি তুলে ঘর করেছিলাম। প্রশাসন উচ্ছেদ করে দিয়েছে। আমরা টাকা ফেরত চাই। একই সঙ্গে প্রতারকদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
ভুক্তভোগীরা বলেন, হতদরিদ্র ও ভূমিহীনদের সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রতারণা করেছে। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নদীর চরের জমি বিক্রি করেছে। ওই জমি নিয়ে অনেকেই ঘর করেছেন। সেসব ঘর উচ্ছেদ করছে প্রশাসন। অনেকেই প্রতারক চক্রের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। আমরা জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
হাটশ হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান এম মুশতাক হোসেন মাসুদ বলেন, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে একটি চক্র লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে সরকারি জমি বিক্রি করেছে। এর পেছনে যেসব লোক জড়িত আছে তাদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনে প্রশাসনের কাছে একাধিকবার দরখাস্ত করেছি। কিন্তু কোনো প্রতিকার পায়নি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত নেদাই মেম্বার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি কারো কাছ থেকে টাকা নেইনি। টাকা নিয়েছে ছেলে-পেলে।
অভিযুক্ত জনি বলেন, এ বিষয়ে আমি ফোনে কোনো কথা বলতে রাজি নই। আপনার সঙ্গে সাক্ষাতে কথা বলতে চাই। আমি সুবিধামতো সময়ে আপনার সঙ্গে কথা বলব। এ কথা বলেই ফোন কল কেটে দেন জনি।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পার্থ প্রতীম শীলের নেতৃত্বে মঙ্গলবার উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। এসময় সহকারী কমিশনার (ভূমি) দবির উদ্দিনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সদর উপজেলা (ভূমি) কমিশনার দবির উদ্দিন বলেন, গৃহহীন বা আশ্রয়হীন মানুষের জন্য ঘর করে দিচ্ছে সরকার। তারা চাইলে সরকারের কাছে ঘরের জন্য আবেদন করতে পারেন। এছাড়া কেউ যদি টাকার বিনিময়ে এসব সরকারি জমিতে কারো কাছে বিক্রির বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পার্থ প্রতীম শীল বলেন, সরকারি সম্পত্তি অবৈধভাবে দখলে রাখার কোনো সুযোগ নেই। দখলের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
রাজু আহমেদ/আরকে