বগুড়ায় ডিবি হেফাজতে আইনজীবীর সহকারীর মৃত্যুতে তদন্ত কমিটি

বগুড়া জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) হেফাজতে আইনজীবীর সহকারী হাবিবুর রহমানের মৃত্যুর ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পুলিশ। কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্তের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে জেলা পুলিশ।
বুধবার (৪ অক্টোবর) দুপুরে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) স্নিগ্ধ আখতার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। স্নিগ্ধ আখতারকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। বাকি দুজন হলেন- সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরাফত ইসলাম ও জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা (ডিএসবি) পরিদর্শক জি এম শামসুন নূর।
এদিন বেলা সাড়ে ১২টার দিকে হাবিবুর রহমানের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে বাড়ি নিয়ে যান স্বজনরা। এর আগে মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) রাত পৌনে ৯টার দিকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাবিবুর রহমান মারা যান। ওই দিন সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে শহরের জজকোর্ট চত্বর থেকে একটি হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে তাকে আটক করে ডিবি পুলিশ।
হাবিবুর রহমান শাজাহানপুরের রানীরহাট চকজোড়া গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে এবং বগুড়া জজকোর্টের আইনজীবী মো. মঞ্জুরুল হকের সহকারী (মোহরার) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আইনজীবী মঞ্জুরুল হক তার আপন মামা। এছাড়া তিনি (হাবিবুর রহমান) জেলা আইনজীবীর সহকারী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, প্রায় দশ বছর আগে শাজাহানপুরের জোড়া তালপুকুর এলাকায় বিপুল নামের এক কিশোরকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। সেই হত্যার চার্জশিটভুক্ত আসামি ছিলেন হাবিবুর রহমান। ওই হত্যার ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন তার সৎ মা খুকু বেগম। কিছুদিন পরেই খুকি বেগমের সাক্ষ্যের তারিখ ছিল। কিন্তু গত ২ আগস্ট খুকি বেগমকে হত্যা করা হয়। ৪ আগস্ট তার বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার হয়। তবে ৮৫ বছরের এই বৃদ্ধার দুটি পা নিখোঁজ ছিল। একটি পা পাশের একটি পুকুরে পাওয়া যায়। আরেকটি পা একই এলাকার একটি বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ওই বাড়ির এক নারীকে সন্দেহভাজন হিসেবে নিয়ে এলে তখন হাবিবুরের নাম উঠে আসে। ওই তথ্যের ভিত্তিতে হাবিবুর রহমানকে আটক করা হয়। কিন্তু ওই নারীকে সামনে আনা হলেই অসুস্থ হয়ে পড়েন হাবিবুর রহমান। এরপর হাসপাতালে নেওয়া হলে রাতে তিনি মারা যান।
হাবিবুর রহমানের স্বজন ও সহকর্মীরা জানান, গতকাল সন্ধ্যায় কোর্ট থেকে বের হওয়ার সময় সাদা পোশাকে কয়েকজন হাবিবুর রহমানকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে হাবিবুরের মামা মঞ্জুরুল হক খবর পেয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন ডিবি পুলিশ তাকে আটক করেছে। পরবর্তীতে রাতে খবর পান যে হাবিবুর মারা গেছেন।
স্বজনদের অভিযোগ, ডিবি পুলিশ হাবিবুরকে কোর্ট চত্বর থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্নিগ্ধ আখতার ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাবিবুরকে পুলিশ কোনো নির্যাতন করেনি। তারপরও এ ঘটনায় আমাকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। হাবিবুরের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের কোনো গাফিলতি থাকলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এমজেইউ