মিছিলে না যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের কান ধরে উঠবস করালেন ছাত্রলীগ নেতা

নাটোরের বড়াইগ্রাম সরকারি অনার্স কলেজে একাদশ শ্রেণির নবাগত শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে ছাত্রলীগের বের করা মিছিলে না যাওয়ায় কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির তিন শিক্ষার্থী জুয়েল রানা, শহিদুল ইসলাম ও ইমনকে কান ধরে উঠবস করানোর অভিযোগ উঠেছে কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি শিপন আহমেদ ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে।
নবাগত শিক্ষার্থীদের সামনে তিনজনকে শ্রেণিকক্ষের মধ্যে পাঁচবার কান ধরে উঠবস করানোর পর ঠিকমতো কান না ধরায় ইমনকে আরও পাঁচবার কান ধরে উঠবস করতে বাধ্য করা হয়। নতুন করে ঝামেলায় পড়ার ভয়ে এসব বিষয়ে কোনো অভিযোগ করেননি নির্যাতিত এসব শিক্ষার্থী।
কলেজের একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী জানান, রোববার (৮ অক্টোবর) বড়াইগ্রাম সরকারি অনার্স কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া নবাগত শিক্ষার্থীদের ক্লাস উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়। সেদিন নতুন শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে মিছিল বের করে কলেজ ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের মিছিলে সাধারণ ছাত্রদের বাধ্যতামূলকভাবে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের রসায়ন ক্লাস চলায় শিক্ষার্থীরা মিছিলে যেতে পারেনি। মিছিল শেষে কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি শিপন আহমেদ ও তার অনুসারীরা এসে শ্রেণিকক্ষে জুয়েল রানা, শহিদুল ইসলাম ও ইমনকে বসে থাকতে দেখে মিছিলে না যাওয়ার কারণ জানতে চান। তিন শিক্ষার্থী ক্লাস থাকায় মিছিলে না যেতে পেরে তাদের কাছে ক্ষমা চান। কিন্তু ছাত্রলীগ সভাপতি শিপন আহমেদ ও তার অনুসারীরা ক্ষমা না করে তাদের পাঁচবার করে কান ধরে উঠবস করান। এ সময় ঠিকমতো কান না ধরার অভিযোগ এনে ইমনকে আরও পাঁচবার কান ধরে উঠবস করতে বাধ্য করা হয়। কান ধরে উঠবস করানোর এসব দৃশ্য অসংখ্য নবাগত শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলেও কেউ কোনো প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জুয়েল রানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, সেদিনের বিষয়ে (কান ধরে উঠবস) কথা বলে আর কষ্ট বাড়াতে চাই না। তবে নবাগত শিক্ষার্থীদের সামনে এমন কাণ্ড করায় খুব কষ্ট পেয়েছি।
জানা গেছে, গত বছরও একইভাবে নবাগতদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বের করা মিছিলে না যাওয়ার অভিযোগে সোহেল রানা নামের এক ছাত্রকে প্রকাশ্যে কলেজ মাঠে মারধর করেন কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি শিপন আহমেদ ও তার অনুসারীরা। এছাড়া তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে কলেজ ছাত্রলীগের এই নেতার বিরুদ্ধে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের কয়েকজন শিক্ষক ঢাকা পোস্টকে জানান, কলেজের বঙ্গবন্ধু কর্নারকে দলীয় কার্যালয় বানিয়ে সামনের বারান্দায় শিক্ষকদের চেয়ার নিয়ে এসে প্রকাশ্যে দিনের পর দিন কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কলেজ চলাকালীন আড্ডা দেন। দলীয় প্রতিটি অনুষ্ঠানের সকল ব্যয়ভার কলেজ প্রশাসনকে দিতে বাধ্য করেন। নিয়মিত তাদের দলীয় প্রোগ্রামের ব্যানার ও নাস্তার খরচ কলেজ বহন করায় সাধারণ শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ থাকলেও লাঞ্ছিত হওয়ার ভয়ে কেউ কোনো প্রতিবাদ করেন না।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি শিপন আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সেদিন (রোববার) কলেজে মিছিল হলেও তিনি বা তার সংগঠনের কেউ সাধারণ কোনো শিক্ষার্থীকে লাঞ্ছিত করেননি।
তিনি বলেন, ছাত্রলীগের রানিং সভাপতি হিসেবে বেশ কয়েক বছর ধরে কলেজ ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিয়ে আসছি। এ ধরনের কোনো ঘটনা কখনো ঘটেনি।
তবে শিক্ষার্থী লাঞ্ছিত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে ওই কলেজের শিক্ষক আমিনুল হক মতিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওই ঘটনার পর ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। তাদের সঙ্গে আজকে আমার কথা হয়েছে। তাদেরকে ভেঙে না পড়ার জন্য সাহস দিয়েছি।
শিক্ষক আমিনুল হক মতিন অভিযোগ করে বলেন, সম্প্রতি কলেজ ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সাধারণ শিক্ষার্থীদের নানাভাবে প্রভাবিত করছে। এতে কলেজের সুষ্ঠু পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে। আজকেও একটি ছেলেকে মারধর করেছে তারা। কলেজ ছাত্রলীগের এমন কর্মকাণ্ড আমরা আর কন্ট্রোল করতে পারছি না।
মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) বিকেলে এসব বিষয়ে জানতে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বাদশা উল্লাহর মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি বেশ কয়েক দিন যাবত ঢাকায় অবস্থান করছি। এমন কোনো ঘটনা কলেজের কেউ আমাকে জানায়নি। কলেজে গিয়ে খোঁজ নেব।
এ বিষয়ে নাটোর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ফরহাদ বিন আজিজ মোবাইল ফোনে ঢাকা পোস্টকে বলেন, এর আগেও তার বিরুদ্ধে বেশকিছু অভিযোগ এসেছে। তবে ছাত্রদের লাঞ্ছিত করার ঘটনাটি আপনার মাধ্যমে জানলাম।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সব সময় ছাত্রদের অধিকারের কথা বলে। সেখানে ছাত্রদের লাঞ্ছিত করার ঘটনাটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি এখন ঢাকায় আছি। নাটোরে ফিরেই ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত করবো। ঘটনার সত্যতা পেলে অপরাধী যেই হোক তার পদে থাকার অধিকার নেই।
এমজেইউ