সরকারি শিশু পরিবারের পুকুরে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু
হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পড়ে আছে নিথর ২টি মরদেহ। কোনো কান্নাকাটি নেই। যেন এখানে কিছুই হয়নি। সবকিছু স্বাভাবিক চলছে। মরদেহ দুটি শরীয়তপুর সরকারি শিশু পরিবারের (বালক) সোহেল বয়াতি (১০) ও সাদেকুল ইসলামের (১১)। সরকারি শিশু পরিবারের পুকুরে গোসল করতে গিয়ে তাদের মৃত্যু হয়েছে।
বুধবার (১১ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় সকলের অগোচরে শরীয়তপুরের সরকারি শিশু পরিবার বালক কেন্দ্রের পুকুরে এই ঘটনা ঘটেছে।
নিহত সোহেল বয়াতি শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার বুড়িরহাট এলাকার গংগেসকাঠি গ্রামের মৃত আলী আহমেদ বয়াতির ছেলে। নিহত সাদেকুল ইসলাম পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলার চরইকুল গ্রামের মৃত মাহমুদুল ইসলামের ছেলে।
সরকারি শিশু পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সকালে প্রতিদিনের মতো শিশুরা স্কুলে যায়। সাদেকুল ইসলাম ও সোহেল বয়াতি এখনও স্কুলে ভর্তি না হওয়ায় বালক কেন্দ্রেই ছিল। দুপুরে তারা পুকুরে গোসল করতে গিয়ে পানিতে ডুবে যায়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শিশু পরিবারের সহকারী সুপার আব্দুল মান্নান হাওলাদার ওই শিশুদের খোঁজ করতে গিয়ে দেখেন পুকুর পাড়ে তাদের পোশাক ও সাবান পরে রয়েছে। পরে শিশু পরিবারের ভেতরে অস্থায়ী শ্রমিক ও বাবুর্চির সহযোগিতায় তাদের মরদেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
শিশু পরিবারের অফিস সহায়ক চয়ন বিশ্বাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুই বাচ্চাকে না পেয়ে আমরা তাকে খোঁজ করি। পরে পুকুর থেকে তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
হাসপাতাল করিডোরে কথা হয় সোহেল বয়াতির মামাতো বোন মাকসুদা বেগমের সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, সোহেলের আপন বলতে কেউ নেই। সরকারি শিশু পরিবারে বড় হচ্ছিল সে। হাসপাতালে মরদেহ দেখার কেউ নাই। কান্না করারও কেউ নাই। আমি খবর পেয়ে এসেছি।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসক মানসুরা ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, পানিতে পড়ে মৃত্যু হয়েছে এমন দুই বালকের মরদেহ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। যেহেতু তাদের অপঘাতে মৃত্যু হয়েছে, সেহেতু আমরা তাদের পরিবারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছি। তাদের পরিবারের কেউ এখনো সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেনি।
শিশু পরিবারের সহকারী সুপার আব্দুল মান্নান হাওলাদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি অফিসে কাজ করছিলাম। হঠাৎ করে সাদেকুল ও সোহেলকে দেখতে না পেয়ে খোঁজ করি। পরে তাদেরকে পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় অফিসের অন্যান্য স্টাফরা কোথায় ছিল তা জানি না। তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। শিশু পরিবারের সিসি ক্যামেরাগুলো নষ্ট রয়েছে বর্তমানে।
পালং মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। আইনি প্রক্রিয়ায় মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।
সাইফুল ইসলাম সাইফ রুদাদ/এএএ