ছেলে ব্যারিস্টার হওয়ায় ২ হাজার গ্রামবাসীকে খাওয়ালেন বাবা-মা

ছেলে লন্ডনের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যারিস্টারি পাস করায় ২ হাজার গ্রামবাসীকে বিরিয়ানি ও পায়েস খাইয়ে আপ্যায়ন করেছেন বাবা- মা।
শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে শরীয়তপুর সদর উপজেলার পালং ইউনিয়নের চাঁদসার গ্রামে সংবর্ধনা, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। দোয়া ও মিলাদ মাহফিল শেষে সবাইকে আপ্যায়ন করা হয়।
ইংল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান ‘দি অনারেবল সোসাইটি অফ লিংকন্স ইন’ থেকে কৃতিত্বের ‘বার-অ্যাট-ল’ ডিগ্রি অর্জন করেন চাঁদসার গ্রামের ইউনুছ আলী ও শামছুন্নাহার বেগম দম্পতির কনিষ্ঠ সন্তান মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ জুয়েল। বর্তমানে তিনি লন্ডনের একটি চেম্বারে আইন পেশায় নিযুক্ত রয়েছেন।
স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ জুয়েল চাঁদসার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক, পালং উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও শরীয়তপুর সরকারি কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর তিনি আইন বিভাগে উচ্চতর ডিগ্রি লাভের উদ্দেশ্যে ২০০৯ সালে বৃটেনে পাড়ি জমান। সেখানের ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডন থেকে এলএলবি এবং লন্ডনের বিপিপি ইউনিভার্সিটি ল স্কুল থেকে এলএলএম কৃতিত্বের সঙ্গে সম্পন্ন করেন।
সর্বশেষ জুয়েল গত ১০ অক্টোবর (মঙ্গলবার) অনারেবল সোসাইটি অফ লিংকন্স ইন থেকে কল টু দ্য বার সেরিমনির মাধ্যমে মাস্টার অফ দি বেঞ্চের পক্ষে ট্রেজারার জনাথন ক্রোওর (কুইন কাউন্সেল) কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যারিস্টার-অ্যাট-ল ডিগ্রির সনদ গ্রহণ করেন। এদিকে তার ব্যারিস্টার হওয়ার খুশিতে নিজ গ্রামে ২ হাজার গ্রামবাসীকে মধ্যাহ্নভোজ করিয়েছেন তার বাবা-মা।
মধ্যাহভোজে অংশ নিতে আসা রাশেদ খান মেমন ঢাকা পোস্টকে বলেন, জুয়েল আমাদের এলাকার ছেলে। ছোটবেলা থেকে ভালো ছাত্র হিসেবে তার সুনাম ছিল গ্রামে। সে ভালো কিছু করবে এটা আগেই সবাই বুঝতে পেরেছিল। ঠিকমত পড়াশোনা করলে সাফল্য একদিন আসবেই। জুয়েলের ব্যারিস্টার হওয়ার সংবাদে পুরো গ্রাম জুড়ে আনন্দ নেমেছে। এক সঙ্গে বিরিয়ানি, পায়েস খেয়ে গ্রামবাসীরা আনন্দ উৎসব করছি।

মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ জুয়েলের মা শামচুন্নাহার বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, জুয়েল ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছিল। আমার ছেলে ব্যারিস্টার হওয়ায় মা হিসেবে আমি গর্ববোধ করছি। জুয়েল আইন পেশায় নিয়োজিত থেকে সাধারণ মানুষের সেবা করে যাবে।
লন্ডন থেকে মুঠোফোনে ব্যারিস্টার শাহনেওয়াজ জুয়েল বলেন, আমার ব্যারিস্টার ডিগ্রি অর্জনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবদান আমার মা-বাবার। ছোট সময় যখন স্কুল কলেজে যেতাম তখন ভালো পড়াশোনার জন্য গ্রামবাসীও আমাকে আদর যত্ন করত। আমার বাবা যখন সুস্থ ছিল তখন সব সময় আমাকে উৎসাহ, অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। বাবার উৎসাহ, কঠোর পরিশ্রম আমাকে ডিগ্রি অর্জনে সহায়তা করেছে। বাবার জীবদ্দশায় এই ডিগ্রি অর্জন করতে পারায় নিজেকে ধন্য মনে করছি। গ্রামবাসীকেও আমি ধন্যবাদ জানাই, কারণ তাদের দোয়ায় আমি বড় হয়েছি। ইংল্যান্ড থেকে দেশে ফিরে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নিজেকে আইন পেশায় নিযুক্ত করব। এছাড়া নবীন আইন শিক্ষার্থীদের জন্য বিলেতে আইন ডিগ্রি নিতে আমি সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব।
পালং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সেলিম শেখ ঢাকা পোস্টকে বলেন, জুয়েল ব্যারিস্টার হওয়ায় চাঁদসার গ্রামে ঈদের আনন্দ নেমেছে। ওর বাবা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। এনিয়ে পরিবারে কোনো আনন্দ ছিল না। ছেলের ব্যারিস্টার ডিগ্রি অর্জনের খবরে পরিবার ও গ্রামে আনন্দ উৎসব হচ্ছে। গ্রামবাসীরা একত্রিত হয়ে ঈদের মতোই বিরিয়ানি, পায়েস খেয়েছেন।
পালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কে. এম আজাহার হোসেন খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, শাহনেওয়াজ জুয়েল আমাদের এলাকার ছেলে। সে লন্ডনের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যারিস্টারি পড়া শেষ করেছেন। তার এই কৃতিত্বে আমরা সবাই গর্বিত। আশা করছি গ্রামের অসহায় ও নিপীড়িতদের আইনি সেবা দিয়ে তিনি পাশে থাকবেন। তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি।
সাইফ রুদাদ/আরকে