‘কিছু হলেই ধর্মঘটের ডাক দেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা’
নওগাঁয় সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক ও বাস শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় জেলার অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার সকল রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) সকাল ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের এই ধর্মঘটের ডাক দেন বাস পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।
জানা যায়, সোমবার (১৬ অক্টোবর) বিকেলে নওগাঁর মান্দা উপজেলার ফেরিঘাট এলাকায় মহাসড়কে অটোরিকশা চলাচলে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে বাস ও অটোরিকশার শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনার পর সন্ধ্যায় নওগাঁ শহরের বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে অটোরিকশা শ্রমিক ও মালিকেরা সড়ক অবরোধ করে বাস চলাচল বন্ধ করে দেন। এ নিয়ে উভয়পক্ষের মাঝে চলে সংঘর্ষ। পরে পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা হয় ওই এলাকায়। এ ঘটনার জেরে মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দেয় বাস মালিক-শ্রমিকেরা। এই ধর্মঘটের কারণে সকাল থেকেই দূরপাল্লার কোনো বাস শহর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যেতে পারেনি। এছাড়াও ধর্মঘটের কারণে অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় রাজশাহীসহ জেলার ১১টি উপজেলার বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী যাত্রীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়।
শহরের পার নওগাঁ মহল্ল্যা থেকে বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে এসেছিলেন আসিফ সোহান। তিনি বলেন, অসুস্থ মামাকে দেখতে রাজশাহীতে মেডিকেলে যাওয়া জরুরি ছিল। নওগাঁ থেকে স্বল্প সময়ে রাজশাহী যাওয়ার একমাত্র সহজ মাধ্যম বাস। কিন্তু বাস বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়েই সিএনজি নিয়ে যেতে হবে। বাড়তি ভাড়ার পাশাপাশি সময় খরচ হবে দ্বিগুণ।
মান্দা উপজেলার দুর্গাপুর গ্রাম থেকে ঢাকার বাসস্ট্যান্ডে আসা আব্দুর রহমান বলেন, বাস বন্ধ থাকায় সিএনজি নিয়ে বাড়তি ভাড়া দিয়ে নওগাঁ পর্যন্ত এসেছিলাম। এখন ঢাকায় যাওয়ার জন্য বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখছি লাইন করে বাস দাঁড় করানো। কোনো বাস চলছে না। বাধ্য হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে।
নওগাঁ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী রবিউল আউয়াল মাহি বলেন, ‘কিছু হলেই ধর্মঘটের ডাক দেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। যেই ধর্মঘটে জনভোগান্তি বাড়ে সেটা আদৌ কতটুকু বৈধভাবে ডাকা হচ্ছে সেটা নিয়ে প্রশাসনের কাজ করা উচিত। কারণ পূর্ব ঘোষণা ছাড়া বাস চলাচল বন্ধ হলে শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয়। সবাই তো আর অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে বাইক বা সিএনজি নিতে পারে না।’
নওগাঁ সিএনজি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আশিক হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাস মালিক গ্রুপ অটোরিকশা চালকদের নানাভাবে হয়রানি করতে একটি লাঠিয়াল বাহিনী তৈরি করে রেখেছে। যাদের কাজ সড়কে অটোরিকশা আটকে চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম করা। এই লাঠিয়াল বাহিনীর লাগাম টেনে ধরার ক্ষেত্রে প্রশাসন কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখছেন না।
নওগাঁ জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি শহিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচল সম্পূর্ণ অবৈধ। এরপরেও অটোরিকশা চালকেরা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চলাচল করে আসছিল। বিষয়টি নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করে তাদেরকে বোঝানো হয়েছে। এরপরেও বিষয়টি তোয়াক্কা না করে অটোরিকশা চালানোয় সোমবার তাদেরকে বাধা দিলে আমাদের এক বাস শ্রমিকের ওপর অতর্কিত হামলা করা হয়েছে। এ ঘটনার পর তারা বাসস্ট্যান্ড অবরোধ করে অনেক বাস আটকে দেয়। একটা অবৈধ যান যদি বৈধ যানকে এভাবে সড়কে চলাচলে বাধা দেয়, তাহলে সেটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। তাই এ ঘটনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের এই বাস ধর্মঘট চলবে।
নওগাঁ সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়সাল বিন আহসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাস মালিক-শ্রমিক এবং অটোরিকশা চালকদের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। এটা সমাধানের জন্য একাধিকবার উভয় পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করা হলেও সমাধান করা সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি তাদের মাঝে পাল্টাপাল্টি হামলার জন্য এটাই মূল কারণ। বাস বন্ধ থাকলেও যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে সিএনজিসহ অন্যান্য যানবাহন নিরাপদে চলাচলে প্রশাসন সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছে। দুই পক্ষের সঙ্গেই যোগাযোগ করা হচ্ছে। সন্ধ্যার পর তাদের সঙ্গে একটি বৈঠক হবে। আশা করছি বিবদমান সমস্যাটি সমাধান করে শীঘ্রই বাস চলাচল স্বাভাবিক করা হবে।
আরমান হোসেন রুমন/এএএ