লালনের আদর্শ ও বাণীকে অন্তরে ধারণ করতে হবে : হানিফ
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফ বলেছেন, লালনের বাণী দিয়ে আমাদের মূল্যায়ন করার সময় এসেছে। সমাজ ও রাষ্ট্রকে পরিবর্তন করতে হলে আমাদেরকে লালনের আদর্শ ও বাণীকে অন্তরে ধারণ করতে হবে। বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ্ সমাজ সচেতন মানুষ ছিলেন। বিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষা লাভ না করলেও আধ্যাত্মিক ব্যক্তি ছিলেন বলেই তিনি মরমি সাধক। লালনের কাছে সবার উপরে মানববাদ। লালন শাহ প্রতিবাদী ও মানবতাবাদী ছিলেন।
মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) রাতে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ছেঁউড়িয়ায় লালন আখড়াবাড়ির মাজার প্রাঙ্গণে আধ্যাত্মিক সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহে্র ১৩৩তম তিরোধান দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী আলোচনা সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘লালন বলে জাতের কী রূপ দেখলাম না এই নজরে..’ তার এই গানের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে মানুষ জাতপাতের ঊর্ধ্বে। লালনের বাণীগুলো সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আজকের সমাজ ধর্মে বিভক্ত। আমরা এক সৃষ্টিকর্তার তৈরি। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানে কোনো বিভেদ থাকবে না। লালন সেটাই প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। সমাজকে পরিবর্তন করতে হলে লালনের বাণী সবাইকে ধারণ করতে হবে।
মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দীর্ঘ নয় মাস লড়াই-সংগ্রাম করে একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করেছিলাম। পাকিস্তানকে পরাজিত করে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। ধর্ম নিয়ে হানাহানি, মারামারি ও বিভাজন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কখনো চাননি।
তিনি আরও বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে আমাদের রাষ্ট্রের মধ্যে একটি বিভাজন তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। যে বিভাজনের কারণে বাংলাদেশের মানুষ এখনো এক হতে পারছে না। বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত সেই বেনিফিশিয়ারি দল বিএনপি-জামায়াত উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে সমাজকে বিভক্ত করেছে। সেই বিভাজনের কারণেই এই দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটেছিল। যার কারণে আমাদের সমাজে এখনো আঘাত আসে।
আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ির কারণে ২০০১ সাল থেকে উগ্র মৌলবাদী সংগঠনগুলো প্রকাশ্যে রাজপথে মিছিল করেছে। সারা দেশে একসঙ্গে সিরিজ বোমা হামলা ঘটিয়েছিল। সেসময় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় অস্ত্র সরবরাহ করতে দেখেছিলাম। দেশটাকে মৌলবাদী দেশ হিসেবে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। সেখান থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সেসব মৌলবাদীদের কঠোর হস্তে দমন করে বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছি।
জেলা প্রশাসক মো. এহেতেশাম রেজার সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম সারোয়ার জাহান, পুলিশ সুপার এ এইচ এম আবদুর রকিব, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ সদর উদ্দিন খান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, কুষ্টিয়া আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট অনুপ কুমার নন্দী, কুষ্টিয়া প্রেসক্লাব-কেপিসি ও সাংবাদিক ইউনিয়ন কুষ্টিয়া জেলা শাখার সভাপতি রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব প্রমুখ।
আলোচনা সভা শেষে লালন মঞ্চে শুরু হয় লালন একাডেমির শিল্পী ও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত বাউল শিল্পীদের অংশগ্রহণে লালন সঙ্গীতানুষ্ঠান।
আধ্যাত্মিক সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহে্র ১৩৩তম তিরোধান দিবস উপলক্ষ্যে লালন শাহে্র মাজার প্রাঙ্গণ, মাঠ, কালি নদীর পাড়ঘেঁষে বসেছে দূরদূরান্ত থেকে আসা ভক্ত-অনুসারীদের খণ্ডখণ্ড দল। সেখানে ভিড় জমাচ্ছে লাখো মানুষ। গুরু-শিষ্য, ভক্ত-অনুসারী আর দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত লালন মেলা।
প্রসঙ্গত, মরমি সাধক ফকির লালন শাহ্ কুষ্টিয়ার শহরতলি কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের ছেঁউড়িয়া গ্রামে ১৮৯০ সালের ১ কার্তিক মারা যান। পরবর্তীতে এখানে প্রতি বছর ১ কার্তিক লালন মেলার আয়োজন করে লালন একাডেমি।
রাজু আহমেদ/এমজেইউ