ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েবসাইটে মিলছে ৫ শতাধিক রক্তদাতার তথ্য

চিকিৎসার জন্য অনেকেরই রক্তের জরুরি প্রয়োজন হয়। সময়মতো রক্ত না পেয়ে অনেক সময় ঘটে প্রাণহানি। অনাকাঙ্ক্ষিত প্রাণহানি রুখতে ধামসোনা ইউনিয়নের ওয়েবসাইটে যুক্ত করা হয়েছে ৫ শতাধিক রক্তদাতার নাম-ঠিকানা, রক্তের গ্রুপসহ ফোন নম্বর।
সাভারের মোট ১২টি ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েবসাইট ঘেটে দেখা যায়, শুধুমাত্র আশুলিয়ার ধামসোনা ইউনিয়নের ওয়েবসাইটে রয়েছে ৫ শতাধিক আগ্রহী রক্তদাতার নাম, ঠিকানা, রক্তের গ্রুপ ও মোবাইল ফোন নম্বর। যেখান থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী রক্তের গ্রুপ দেখে ফোন করলেই পাওয়া যেতে পারে রক্ত। এমন উদ্যোগে ইউনিয়নে রক্তের জন্য রোগীর স্বজনদের ভোগান্তি কিছুটা হলেও কমছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
এছাড়া সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েবসাইটে লোকাল গভর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্ট-৩ (এলজিএসপি-৩) এর ডাটাবেজে রক্তদাতার প্রায় ৪১ জনের তালিকা রয়েছে। বাকি ১০ ইউনিয়ন যেমন, শিমুলিয়া, ইয়ারপুর, আশুলিয়া, পাথালিয়া, বিরুলিয়া, সাভার সদর, তেঁতুলঝোড়া, বনগাঁও, আমিনবাজার, কাউন্দিয়া ও ভাকুর্তা ইউনিয়নের ওয়েবসাইটের তথ্য ভান্ডারে রক্তদাতার তথ্য পাওয়া যায়নি। এসব ইউনিয়নের বাসিন্দাদের রক্তের প্রয়োজন হলে অন্যের সহযোগিতা কিংবা রক্ত ক্রয় করে জীবন বাঁচাতে হয়।
তবে ধামসোনা ইউনিয়ন পরিষদের বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্ন। ইউনিয়নের ওয়েবসাইটের তথ্য ভান্ডারে ৫ শতাধিক রক্তদাতার তথ্য মোবাইল ফোন নম্বরসহ দেওয়া আছে। যেখান থেকে সহজেই প্রয়োজন অনুযায়ী রক্তের গ্রুপ ও অবস্থানের দূরত্ব দেখে কল করে রক্তদাতাকে খুঁজে নিতে পারেন উপকারভোগীরা। আর খবর পেয়েই রক্ত দিতে ছুটে আসেন রক্তদাতারা।
আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা সুলতান মাহমুদ বলেন, আমি শুনেছিলাম যে ইউনিয়ন পরিষদের তথ্যভান্ডারে ব্লাড ডোনারের (রক্ত দাতা) মোবাইল ফোন নম্বরসহ বিভিন্ন তথ্য দেওয়া থাকে। হঠাৎ রাত দুইটার দিকে আমার এ পজিটিভ রক্তের খুবই প্রয়োজন পড়ে। রোগী স্থানীয় নারী ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি ছিল। পরে ইয়ারপুর ইউনিয়নের ওয়েবসাইট ঘাটতে থাকি। কিন্তু দুঃখের বিষয় সেখানে কোনো রক্তদাতার তথ্য পাওয়া গেল না।
পরে ধামসোনা ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েবসাইটে যাই। রাত ২টার পর সেখান থেকে একজনের ফোন নম্বর নিয়ে ফোন দেই। পরে তিনি ভোরে এসে রক্ত দিয়ে আমার স্বজনকে বাঁচাতে সাহায্য করেন। তবে ধামসোনা ইউনিয়ন পরিষদের মতো সকল পরিষদে এলজিএসপি-৩ এর ডাটাবেজ থাকা অত্যন্ত জরুরি।
আরও পড়ুন
ধামসোনা ইউনিয়নের বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা জীবিকার তাগিদে জামালপুর থেকে এসে দীর্ঘদিন ধরে আশুলিয়ার ধামসোনা ইউনিয়নে বসবাস করি। এই ইউনিয়নে বসবাস করে পৌরসভার মতো সুবিধা ভোগ করছি। যদিও পৌরসভার নাগরিক সুবিধা ও ইউনিয়ন পরিষদের নাগরিক সুবিধা এক নয়। কিন্তু যে সব সেবা আমরা পাচ্ছি, তা একটা ইউনিয়ন পরিষদের তুলনায় বেশি। এই ইউনিয়নের ওয়েবসাইটে রয়েছে ৫ শতাধিক রক্তদাতার রক্তের গ্রুপ, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর। যে কেউ ১ মিনিটেই এর মাধ্যমে রক্ত খুঁজে পাবেন। রক্ত খুঁজে ফোন দিলেই সেবা দিতে প্রস্তুত তালিকায় থাকা এসব রক্তদাতারা।

আশুলিয়ার ডেন্ডাবর এলাকার রোজিনা আক্তার। তিনি ধামসোনা ইউনিয়নের একজন রক্তদাতা এবং ধামসোনা ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য ভান্ডারে তার সম্পর্কে তথ্য রয়েছে। তাকে ফোন করলেই পাওয়া যাবে 'ও পজিটিভ' (O+) রক্ত। রোজিনা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন পর্যন্ত আমি কারও ফোন পাইনি। তবে আমি রক্ত দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। যে কেউ যেকোনো সময় ফোন করলেই আমি রক্ত দিতে যাব। আমার সব তথ্য ধামসোনা ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য ভান্ডারে দেওয়া আছে।
একই ওয়েবসাইটের তথ্য ভান্ডার থেকে আব্দুল মোমিনের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে তাকে ফোন করে ঢাকা পোস্ট। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার রক্তের গ্রুপ এ নেগেটিভ (A-)। এই রক্ত একটু কষ্ট করে খুঁজে নিতে হয়। খুব সহজেই এই রক্ত পাওয়া যায় না। তাই অনেক রোগীর স্বজনরা ধামসোনা ইউনিয়ন পরিষদের তথ্যভান্ডারে রক্তের খোঁজ করেন। আমার কাছে অনেক ফোন আসে। তিন মাস পর পর আমি রক্ত চাওয়া মাত্রই দিয়ে দেই। রক্ত দেওয়ার জন্যই আমরা সেখানে তথ্য দিয়ে রেখেছি।
সাভার সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা সোহান বলেন, আমি সাভার সদর ইউনিয়নে বাস করি। সাভার সদর ইউনিয়নের ওয়েবসাইটে রক্তদাতার কোনো তথ্য নেই। আমাদের রক্তের প্রয়োজন হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সহযোগিতা নেই। ফেইসবুকে বিজ্ঞপ্তি আকারে পোস্ট করি। সেখানে রক্তের গ্রুপের সাথে না মিললেও অনেকেই রক্তের ব্যবস্থা করে দেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে এটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া। যদি আশুলিয়ার ধামসোনা ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েবসাইটের মতো রক্তদাতার নাম ও ফোন নম্বর থাকতো তাহলে দ্রুতই রক্ত পাওয়া যেতো।
আশুলিয়া সচেতন নাকগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি লায়ন মোহাম্মদ ইমাম হোসেন বলেন, আমরা সবাই সচেতনতার সঙ্গে রক্ত সংগ্রহ করব এবং ডোনেট করব। ধামসোনা ইউনিয়নের ওয়েবসাইটে রক্তদাতার সংখ্যা ৫ শতাধিক। পুরো থানায় হয়তো প্রয়োজনের তুলনায় ডোনারের সংখ্যা এখানে সামান্য। আমরা চাই যেহেতু এটা শিল্পাঞ্চল, লাখ লাখ মানুষের এখানে বাস তারা যেন অন্তত রক্তের অভাবে মারা না যায়। এ কারণে সকল ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েবসাইটে ব্লাড ডোনারের তথ্য সংরক্ষণের জোর দাবি জানাই।
ধামসোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ইউনিয়ন স্বনির্ভর। এই ইউনিয়নে গত ৮ বছরে যা উন্নয়ন হয়েছে সেটার স্বাক্ষী গোটা ইউনিয়নবাসী। আমার ইউনিয়নে কোনো ভাঙা রাস্তা নেই। নাগরিক সুবিধা দিতে আমি রাত দিন প্রস্তুত রয়েছি। আমার ইউনিয়ন পরিষদের ওয়েবসাইটে ৫ শতাধিক রক্তদাতার তথ্য রয়েছে। এখানে আরও একটি অপশন রয়েছে। যেখানে রক্তদাতারা নিজেরাই তাদের তথ্য সংযুক্ত করতে পারবেন। আমাদের রক্তদাতার সন্ধান করতে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয় না। ওয়েবসাইটে একবার চোখ বোলালেই প্রয়োজন অনুযায়ী রক্তের ব্যবস্থা হয়ে যায়। আমি চাই এই ইউনিয়নের মত ঢাকা-১৯ আসন ঢেলে সাজাতে। সুযোগ পেলে ঢাকা-১৯ তথা সাভার আশুলিয়ার সমস্ত লোকের সেবা করতে চাই।
আরকে