‘চরভদ্রাসন রক্ষা প্রকল্প বন্ধ করতে চেয়েছিলেন এমপি নিক্সন’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী জাফর উল্যাহ অভিযোগ করে বলেছেন, সম্প্রতি ৬১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড চরভদ্রাসন রক্ষায় যে প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে, তা নিজের শ্বশুর আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর মাধ্যমে বন্ধ করতে চেয়েছিলেন এ এলাকার বর্তমান এমপি মজিবুর রহমান চৌধুরী (নিক্সন চৌধুরী)।
রোববার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে ফরিদপুরের চরভদ্রাসন সদর ইউনিয়নের ডাঙ্গী গ্রামে ছাত্রলীগ নেতা মোকাদ্দেস হোসেনের বাড়িতে এক উঠান বৈঠকে এ অভিযোগ করেন তিনি।
কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ২০০৮ সালে আমার সহধর্মিনী এ আসনের এমপি নির্বাচিত হন। এর কিছুদিন পরে পদ্মা নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে হাজিগঞ্জ ও চরভদ্রাসন। ওই সময় চরভদ্রাসন উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি আজিজুল হক আমাকে এ সমস্যার কথা জানান। আমি তৎকালীন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) নজরুল ইসলাম হিরুকে নিয়ে ভাঙন কবলিত এলাকায় আসি।
পরে এ ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড ৬১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। এর মধ্যে নির্বাচনে নিক্সন চৌধুরী এ এলাকার এমপি নির্বাচিত হন। তার (নিক্সন) দ্বিতীয় শ্বশুর আনোয়ার হোসেন মঞ্জু তখন পানিসম্পদ মন্ত্রী। নিক্সন চৌধুরী পানিসম্পদ মন্ত্রী শ্বশুরের মাধ্যমে ‘চরভদ্রাসন রক্ষা প্রকল্পটির আর প্রয়োজন নেই’ বলে বাতিল করার উদ্যোগ নেন।
যেদিন এ প্রকল্প পাশ হওয়ার কথা, তার আগের দিন রাতে আমি এ বিষয়টি জানতে পারি। পরদিন সকালে আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে চলে যাই। নেত্রী আমাকে আশ্বস্ত করেন। পরে আমি জানতে পারি নেত্রী মন্ত্রীসভার একটি বৈঠকে প্রথমেই বলেন— চরভদ্রাসন ভাঙন রোধের প্রকল্পটি আগে তোলেন, ওটা পাশ করে আমি এ সভার কাজ শুরু করতে চাই। এ ঘটনায় সবাই অবাক হয়ে যান। অবাক হন নিক্সন চৌধুরী ও তার শ্বশুর আনোয়ার হোসেন।
কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, আপনারা অনেকে তার (নিক্সন) আসল রূপ জানেন না। সে চোরকে বলে চুরি করতে আবার গৃহকর্তাকে বলেন সজাগ থাকতে। একটি ইউনিয়নের নির্বাচনে তিনি পাঁচজনকে চেয়ারম্যান বানানোর প্রতিশ্রুতি দেন।
তিনি বলেন, নিক্সন চৌধুরী এক চান্দ্রা ইউনিয়নের নিক্সন ১১ শত বিঘা জমি দখল করেছেন। এর মধ্যে হিন্দুদের এবং সরকারি জমিসহ নানা ধরনের জমি রয়েছে। আমার এক শিক্ষকের সাত বিঘা জমি দখল করেছেন নিক্সন। ওই জমিটুকু না নিতে ওই শিক্ষক নিক্সনকে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু নিক্সন তা শোনেননি, এরপর ওই শিক্ষক মারা যান।
তিনি আরও বলেন, নিক্সন এ এলাকার মানুষ নন। তিনি মাদারীপুরের লোক। তিনি তো এ এলাকার উন্নয়ন করবেন না, উন্নয়ন করবেন শিবচরের।
কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, তিনি (নিক্সন) বলে বেড়ান পুলিশ ও প্রশাসন ম্যানেজ করে ভোট নিয়েছেন। তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা রক্ষা করার চেষ্টা করুন। যখন সময় থাকবে না, তখন কিছুই করার থাকবে না। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি নির্বাচিত হলে বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন সলেমান সিকদার। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইউপি আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ইসাহাক মিয়া, আওয়ামী লীগ নেতা আহসানুল হক ও মোশাররফ হোসেন বেলায়েত হোসেনসহ অনেকে।
জহির হোসেন/কেএ