রংপুরে বিএনপির ৭০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের অভিযোগ

রংপুরে হরতাল-অবরোধে নাশকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা, সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগসহ বিভিন্ন মামলায় পুলিশ অন্তত ৭০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। যাদের বেশির ভাগই রংপুর মহানগর বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পদে আছেন।
শনিবার (৪ নভেম্বর) সকালে রংপুর মহানগর বিএনপির মিডিয়া সেলে দেওয়া এক বার্তায় গ্রেপ্তারের এ তথ্য জানান মহানগর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ জহির আলম নয়ন।
হরতালের (২৯ অক্টোবর) দিন থেকে শুরু করে অবরোধ শেষে শুক্রবার (৩ নভেম্বর) রাত পর্যন্ত রংপুর নগরীর বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে ২৫ জনের নাম ও পদবি জানা গেছে।
তারা হলেন- রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মাহফুজ উন-নবী ডন, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কাওছার জামান বাবলা, মহানগর ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম সবুজ, মহানগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক ইমরান খাঁন সুজন, সাবেক সহ-সভাপতি আবিদ হাসান গুড্ডু, ১৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের আহ্বায়ক রেজওয়ানুল ইসলাম নাহিদ, ১৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি আকিনুর ইসলাম, ২০ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের আহ্বায়ক সাব্বির হোসেন আশিক, ২৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আশিকুর রহমান মিন্টু, ২ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম রব্বানী রাব্বী, ৩০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক খোকন, ২৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির ক্রীড়া সম্পাদক এরশাদ, বিএনপিরকর্মী আলতাফ হোসেন লন্ডন, ২০ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলকর্মী সাজিদ হোসেন মুন্না, ২৫ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলকর্মী আনাস, ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপিকর্মী সিরাজুল ইসলাম, ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপিকর্মী জাহিদুল ও রফিকুল, ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপিকর্মী মাকছুদার রহমান, ১৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপিকর্মী মাসুদ পারভেজ মজনু, ২৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপিকর্মী আক্তার হোসেন, মোকতার হোসেন, জহুরুল ইসলাম ও ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপিকর্মী গজিয়ার রহমান।
যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ জহির আলম নয়নের অভিযোগ, সরকারবিরোধী আন্দোলন দমানোর লক্ষ্যে পুলিশ গণগ্রেপ্তার চালাচ্ছে। এতে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের পাশাপাশি নিরপরাধ সাধারণ মানুষও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের অনেকেই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত নন বলেও জানান তিনি।
এদিকে শুক্রবার (৩ নভেম্বর) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মাহফুজ উন-নবী ডন গ্রেপ্তার হওয়ায় ১ম যুগ্ম আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম মিজুকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক এবং সদস্য আব্দুস সালামকে ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিবের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তারা দায়িত্ব পালন করবেন।
অন্যদিকে জেলা ও মহানগর পুলিশের তথ্য বলছে, হরতালের আগের দিন শনিবার রাত থেকে গতকাল শুক্রবার রাত পর্যন্ত (৭ দিনে) বিএনপি-জামায়াতসহ অঙ্গ সংগঠনের অন্তত ৫১ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে নাশকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা, অগ্নিসংযোগ, সরকারি কাজে বাধা প্রদানসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা রয়েছে।
এদের মধ্যে রংপুর জেলা পুলিশ হরতালের দিন ১১ জনসহ অবরোধের তিন দিনে ১৪ এবং শুক্রবার রাতে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে সদর বিএনপি উপজেলা সদস্য আনিছুর রহমান, আমজাদ হোসেন, গঙ্গাচড়া বিএনপি সদস্য নাসির উদ্দিন, নয়া মিয়া, নুর আমিন, রুহুল ইসলাম, জামায়াতে ইসলামীর সদস্য আব্দুল জলিল মিয়া, মিঠাপুকুর জামায়াতে ইসলামীর সদস্য রেজাউল ইসলাম রাজু, সাইদুর রহমান লিটু, কাউনিয়া থেকে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আবু হাসান রায়হান রুশো, পীরগাছা উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নুর আহাদ মণ্ডল রয়েছেন।
রংপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, হরতালের শুরু থেকে শুক্রবার রাত পর্যন্ত মহানগরের ছয়টি থানা এলাকা থেকে বিএনপি-জামায়াতের ২০-২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবও রয়েছে।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি অ্যান্ড মিডিয়া) মো. ইফতে খায়ের আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, হরতালের দিন থেকে শুক্রবার রাত পর্যন্ত রংপুর জেলার আটটি থানা এলাকা থেকে বিএনপি-জামায়াতের ২৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে নাশকতার পরিকল্পনা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টার অভিযোগসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা রয়েছে।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমজেইউ