খুলনায় পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহসহ ১৮ দফা দাবি উন্নয়ন কমিটির

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খুলনায় আগমন উপলক্ষ্যে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ, পাটকল চালু ও পূর্ণাঙ্গ টেলিভিশন সেন্টার চালুসহ ১৮ দফা দাবি জানিয়েছেন বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির নেতারা।
শনিবার (১১ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ভৈরব-রূপসা বিধৌত পলিমাটিতে গড়ে উঠেছে খুলনা শহর। উপকূলের বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ এ জেলার দক্ষিণে রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসভূমি, প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা ‘বিশ্ব ঐতিহ্য’ সুন্দরবনের আঁচল জুড়ে গড়ে উঠেছে দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মোংলা। এই সমুদ্র বন্দর ও সুন্দরবনকে আবর্তিত করেই সমৃদ্ধ হচ্ছে খুলনা উপকূলের অর্থনীতি। বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং সামাজিক নানা সূচকে বাংলাদেশ এখন উল্লেখযোগ্য নাম।
নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের মানুষের অদম্য আকাঙ্ক্ষা, প্রাণশক্তি আর ঘাম ঝরানো পরিশ্রমের কারণে বিশ্বে উন্নয়নের বিস্ময় এখন বাংলাদেশ। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ এবং সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশের অভিযাত্রায় খুলনাঞ্চল এখন শক্তিশালী অভিযাত্রী। এ অভিযাত্রায় খুলনা আগামীতে উন্নত বাংলাদেশ উপহার দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, যদি খুলনার সম্ভাবনাগুলোকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো যায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বৈষম্যের জনপদে এখন উন্নয়নের তিলক। দক্ষিণের জানালায় এখন অর্থনীতির সুবাতাস। দক্ষিণ অঞ্চলের উন্নয়নে এখন ধারাবাহিকভাবে যে সকল প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে সেগুলো আগামীর খুলনাকে সমৃদ্ধ করবে। সুতরাং খুলনার ভৌগোলিক সম্ভাবনাকে কার্যকরভাবে কাজে লাগাতে পারলে আগামী ১০/১৫ বছরের মধ্যে খুলনা দক্ষিণাঞ্চলের রাজধানী হিসেবে বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেবে। ফলে ভাগ্য পরিবর্তন হবে খুলনা উপকূলের প্রায় ৪ কোটি মানুষের।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের সুযোগ্য কন্যা বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়কালে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের। পদ্মা সেতু নির্মাণ, মোংলা সমুদ্র বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ আধুনিকায়ন, পায়রা সমুদ্র বন্দর নির্মাণ, মোংলায় রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল, পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহ, ফয়লায় বিমান বন্দর, সুন্দরবনের পর্যটন শিল্প, রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনার আধুনিক রেলস্টেশন, খুলনা- মোংলা রেল সেতু নির্মাণ, খুলনা ওয়াসা, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জলাবদ্ধতা নিরসন এবং সড়ক ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে স্বাধীনতা পরবর্তী পঞ্চাশ বছরে এই প্রথম স্মরণকালের বরাদ্দ পেয়েছে। আজকের এই সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন ও মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে তার দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
এতে বলা হয়, এক সময় খুলনাকে শিল্পের শহর বলা হত। কিন্তু শিল্প সহায়ক নীতির অভাবে খুলনার ভারী শিল্পগুলো কালের বিবর্তনে বন্ধ হতে হতে খুলনা শিল্পহীন নগরী হিসেবে পরিণত হয়েছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পরে খুলনা অঞ্চলের অর্থনীতির উত্থানের অমিত সম্ভাবনা তৈরি এবং খুলনা আবারও শিল্প নগরীতে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। অর্থাৎ এই একটি সেতুই হবে ভবিষ্যৎ খুলনার উন্নয়নের অন্যতম প্রধান ‘অনুঘটক’। এতদঞ্চলের চলমান প্রকল্প বাস্তবায়ন, বিশ্বমানের ত্রিমাত্রিক যোগাযোগ অবকাঠামো গড়ে তোলা, আকাশ/নৌ/সড়ক পথে বহুমাত্রিক পরিবহনের নিশ্চয়তা, বাণিজ্যবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি, সমুদ্র বন্দরভিত্তিক সুযোগগুলো সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে শুধু জাতীয় অর্থনীতিতে নয় আঞ্চলিক অর্থনীতির রাজধানীতে পরিণত হবে আমাদের খুলনা।
১৮ দফা দাবির মধ্যে অন্যতম হলো-
• খুলনা বিমান বন্দর প্রকল্পের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে দ্রুত কাজ শুরু করা।
• খুলনা-মোংলা-ভাঙা মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীত করা।
• রূপসা-তেরখাদা ও দিঘলিয়াকে খুলনা শহরের সঙ্গে সংযোগের জন্য টানেল নির্মাণ।
• মোংলা পোর্টের সক্ষমতা বৃদ্ধি, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং ড্রেজিং ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা।
• খুলনায় পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহ চালু।
• খুলনা-যশোর মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীতকরণ।
• খুলনায় অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়ন করা।
• খুলনায় স্বতন্ত্র ক্যান্সার হাসপাতাল স্থাপন।
• আমদানি-রপ্তানির সুবিধার্থে মোংলা পোর্টের অদূরে কনটেইনার স্টেশন স্থাপন।
• খুলনার পাটকলসহ বন্ধ সকল মিল-কলকারখানা চালুর ব্যবস্থা করা। সুন্দরবনকে ঘিরে পর্যটন হাব গড়ে তোলা।
• ভৈরব, রূপসা ও পশুর নদীর নাব্যতা বাড়াতে নিয়মিত ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করা।
• খুলনায় পূর্ণাঙ্গ টেলিভিশন কেন্দ্র চালু করা।
• সরকারি উদ্যোগে খুলনায় বোটানিক্যাল গার্ডেন, একটি চিড়িয়াখানা স্থাপন এবং খুলনা প্রেস ক্লাবের বহুতল ভবন নির্মাণে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করা।
• খুলনায় মেরিন একাডেমি ও ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠা, খুলনা আলিয়া মাদ্রাসা ও মহিলা আলিয়া মাদ্রাসাসহ আহসানউল্লাহ কলেজ, হাজী আ. মালেক কলেজ, শহীদ সোহরাওয়াদ্দী কলেজ, দৌলতপুর দিবা-নৈশ কলেজ সরকারি করা।
• খুলনা-যশোর-দর্শনা ডাবল রেললাইন স্থাপন, খুলনা থেকে রেলযোগে ঢাকা যাওয়ার জন্য খুলনা-গোপালগঞ্জ রেললাইন স্থাপন এবং খুলনা-ঢাকা কালনা সেতু হয়ে সরাসরি রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে হবে।
• মুন্সিগঞ্জ-সাতক্ষীরা-যশোর রেললাইন স্থাপন।
• খুলনায় নভোথিয়েটার দ্রুত বাস্তবায়ন ও ডায়াবেটিক হাসপাতালে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করা।
সংবাদ সম্মেলনে কমিটির মহাসচিব শেখ মোহাম্মদ আলীসহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মোহাম্মদ মিলন/এএএ