অবরোধে বেড়েছে সবজির ট্রাকের ভাড়া, কেনাবেচায় অস্বস্তি

উত্তরাঞ্চলের সবজির সবচেয়ে বড় মোকাম বগুড়ার মহাস্থানহাটে এখন শীতের আগাম সবজিতে ভরপুর। ভোরের আলো ফুটতেই কৃষকরা বিভিন্ন ধরনের আগাম শীতকালীন সবজি নিয়ে চলে আসেন এই হাটে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এ মোকামে চলে বেচাকেনা। হাটের এমন ব্যস্ততা প্রতি বছরের মতো থাকলেও এবারের চিত্র কিছুটা ভিন্ন।
অবরোধের কারণে সবজির বেচাকেনায় স্বস্তি পাচ্ছেন না কৃষক-ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি অসময়ে হঠাৎ বৃষ্টিতে সবজির ফলনও কমেছে।
মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) সকালে মহাস্থানহাট ঘুরে দেখা যায়, পাইকারি বাজারে ফুলকপি বিক্রি হয়েছে ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকা মণ। বেগুনের মণ ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা। করলা ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০। পটলের মণ ১২০০ টাকা। মুলা বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা মণে। বরবটি প্রতি কেজি ১২ থেকে ১৫ টাকা। মিষ্টি কুমড়ার প্রতি কেজি ১৮ থেকে ২০ টাকা। প্রতি পিস বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ২৪ থেকে ২৬ টাকা করে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সম্প্রতি টানা অবরোধে তাদের ব্যবসায় ধস পড়েছে। আগাম শীতকালীন সবজির ভরা মৌসুম হলেও বাইরের অনেক পাইকার আসছেন না। ফলে সবজির বেচাকেনা কমে গেছে। উপরন্তু সবজি পাঠানোর জন্য পরিবহন ব্যয় বেড়েছে।

তাদের দাবি, আগে সিলেটে যাওয়ার জন্য ট্রাক ভাড়া ছিল ২২ থেকে ২৩ হাজার টাকা। ঢাকার ভাড়া ১২ হাজার টাকা এবং চট্টগ্রামের ভাড়া অন্তত ২৫ হাজার টাকা। এসব গাড়ি প্রতি ভাড়া গড়ে অন্তত পাঁচ হাজার টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে। তবে গাড়ি ভাড়া বেশি হলেও সবজি সরবরাহ ঠিক আছে।
সদর উপজেলার নামুজা এলাকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী আব্দুস সোবহান মহাস্থানহাট থেকে প্রতি মণ শিম ক্রয় করেছেন ১ হাজার ৩০০ টাকা করে। পাঠাবেন চট্টগ্রামে। দুই দিন আগে কিনেছিলেন ১ হাজার ১০০ টাকায়। বললেন, দুই দিন আগে শিমের বাজার খারাপ ছিল। আজকে বাজারে দাম একটু বেশি। এখন অবরোধের কারণে পাঠাতেও খরচ বেশি লাগছে। কেজিতে ৩ থেকে ৫ টাকা করে বাড়তি টাকা দিতে হচ্ছে।
ইজিবাইক নিয়ে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার থেকে সবজি ক্রয় করতে এসেছেন শামসুর রহমান। নিজ এলাকায় খুচরা বিক্রি করবেন তিনি।

শামসুর রহমান বলেন, ফুলকপি কিনেছি ১ হাজার টাকা মণ, বাঁধাকপি ২৭ টাকা পিস, শিম ১ হাজার ২০০ টাকা মণ ও মুলা ৮০০ টাকা মণ।
সিরাজগঞ্জ থেকে শসা নিয়ে এসেছেন শাহিদুল ইসলাম। কিন্তু হাটে এসে দাম দেখে হতাশ। তিনি ঢাকা পোস্টকে জানান, শসার দাম ভালো না। প্রতি মণ শসার দাম ব্যবসায়ীরা দিতে চাচ্ছেন ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। আমি সিরাজগঞ্জ থেকে শসা নিয়ে এসে মহাস্থানহাটে বিক্রি করি। অবরোধ না থাকায় আজ মঙ্গলবার বেগুনের বাজার একটু এলোমেলো হয়েছে। সবুজ গোল জাতের বেগুন বেশি আমদানি হওয়ায় দাম পড়ে গেছে। তবে দেশি ছোট গোল জাতের বেগুনের দাম বেড়েছে।
ঢাকা পোস্টকে মোলামগাড়ীর বেগুন চাষি মো. পলাশ বলেন, ১০ মণ বেগুন নিয়ে আসছি। দাম কম, ৮০০ টাকা মণ। এই বেগুনের দাম ছিল ১৪০০ টাকা মণ। কিন্তু আজ অবরোধ না থাকার কারণে এই বেগুনের আমদানি হয়েছে বেশি। এ জন্য দাম কমে গেছে।
মোকামতলার বেগুন চাষি সেলিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, চার মণ দেশি জাতের বেগুন নিয়ে আসছি। বিক্রি হয়েছে ২ মণ ৩০ কেজি। প্রতি মণ ১ হাজার ৪০০ টাকা করে বিক্রি করেছি। অবরোধের কারণে মূল সমস্যা হচ্ছে পাইকাররা আসছেন, বিক্রি হচ্ছে কম। এক সপ্তাহ আগেও এই বেগুন বিক্রি করেছি ২ হাজার টাকা মণ।
হরতাল-অবরোধে সবজির বাজারে অস্থিরতা এখন অনেকটাই কম বলে জানান মহাস্থানহাটের আড়তদার সফুরা ভান্ডারের মালিক শফিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, প্রথম দিকে হরতাল অবরোধে একটু আতঙ্ক কাজ করেছিল, এ জন্য ট্রাকের ভাড়া বেড়ে যায়। এখন স্বাভাবিক হয়েছে। তবে ট্রাকের ভাড়া গড়ে প্রায় ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা বেশি। এখন প্রতিদিন এই হাট থেকে ছোটবড় মিলে অন্তত ৫০ গাড়ি সবজি যাচ্ছে বিভিন্ন জেলায়।
শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, এই সময়টায় সবজির বাজার অনুযায়ী এবার খুব একটা ভালো না। কৃষকরা লাভবান হতে পারছে না। ফুলকপিতে একটু ধস দেখা দিয়েছে। গতবার এই সময় ফুলকপি ২২০০ থেকে ২৫০০ টাকা মণ ছিল। এছাড়া অন্য সবজি মোটামুটি ঠিক আছে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী জেলায়, এবার রবি মৌসুমে শীলকালীন শাক-সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি। সরকারি হিসাবে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রতি হেক্টরে ২৩ টন।
এর মধ্যে আগাম শীতকালীন সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে। তবে অর্জন হয়েছে ৪ হাজার ১৭৫ হেক্টর। প্রতি হেক্টরে ফলন হচ্ছে সাড়ে ১৯ দশমিক ৫ টন।
আসাফ-উদ-দৌলা নিওন/এএএ