নৌকা পেলেন ওয়ার্কার্স পার্টির মুস্তফা, নারাজ আ.লীগের নেতাকর্মীরা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনে ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে দুই বারের সংসদ সদস্য ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা মুস্তফা লুৎফুল্লাহকে। এর আগে দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল ফিরোজ আহমেদ স্বপনকে।
তবে এবারও আওয়ামী লীগের প্রার্থী না দেওয়ায় দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দাবি, গত ১০ বছর যাবত দলের এমপি না থাকায় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড থেকে পিছিয়ে রয়েছে আসনটি।
এদিকে, দীর্ঘ দশ বছর আসনটিতে আওয়ামী লীগের কেনো এমপি নেই। দলীয় এমপি না থাকায় ভাঙন ধরেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অভিযোগ, বর্তমান সংসদ সদস্য ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা মুস্তফা লুৎফুল্লাহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ভেদাভেদ সৃষ্টি করে দলে কোন্দল তৈরি করেছেন।
আসনটির আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মী বলেন, গত দশ বছর এ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে কাজ করে আমাদের দৃশ্যত কোনো উন্নয়ন হয়নি। রাস্তা-ঘাট থেকে শুরু করে কোনো ক্ষেত্রেই উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। এবারও ১৪ দল থেকে শরিক দলকে নৌকা প্রতীক দেওয়ায় প্রচণ্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সেক্ষেত্রে এবার আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র যে প্রার্থী থাকবে দলীয় নেতাকর্মীরা তার সমর্থনে কাজ করবে।
সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহাগ হুসাইন ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত ১০ বছর জোটের ওয়ার্কার্স পার্টিকে আসনটি ছেড়ে দেওয়ার কারণে তালা-কলারোয়াতে দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন হয়নি। আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ওয়ার্কার্স পার্টি এমপি মুস্তফা লুৎফুল্লাহর কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি দলীয় লোকদের সঙ্গে সমন্বয়ে না করেই নিজের মতো কাজ করছেন। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের কোনো খোঁজ খবর নেয়নি তিনি। তিনি আসেন সভা করে আবার সাতক্ষীরাতে চলে যান। কখনো দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎটুকুও করেন না। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আবারও এ আসনটি ১৪ দল থেকে ওয়ার্কার্স পার্টিকে দিয়েছে। সেক্ষেত্রে আমরা যারা দলীয় নেতাকর্মী রয়েছি সকলে এবার আওয়ামী লীগের যে স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকবে তার পক্ষে কাজ করবো।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ রয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যার যাকে পছন্দ তার দিকে কাজ করবে, কারো কাজে হস্তক্ষেপ করা যাবে না। অতএব আওয়ামী লীগ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে যিনি থাকবেন তার পিছনে কাজ করবো এবং আমরা আশাবাদী জয় আমাদের হবে।
আসনটির স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক সরদার মুজিব ঢাকা পোস্টকে বলেন, ১৪ দলের ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনী কাজের স্পৃহা অনেক বেড়ে গেছে। দলীয় নেতাকর্মীরা এবার কেউ ওয়ার্কার্স পার্টির নেতার পিছনে দৌড়াতে চায় না। একজন প্রার্থী নির্বাচনে কাজ করতে স্পৃহা পায় যখন সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটাররা প্রফুল্ল ভাবে প্রার্থীর পিছনে কাজ করেন। আসনটির দলীয় ভোটাররা আমার পক্ষে রয়েছে। দল রেখে এবার কেউ অন্য দলের কাউকে ক্ষমতায় আনতে চায় না।
তিনি আরও বলেন, বিগত ১০ বছরে আসনটিতে দৃশ্যত কোনো উন্নয়ন হয়নি। উন্নয়ন যেটা হয়েছে সেটা কাগজ-কলমে। তাকে যদি পুনরায় সংসদ সদস্য করা হয় সেক্ষেত্রে আসনটিতে কোনো উন্নয়ন হওয়ার সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছে না তৃণমূল নেতাকর্মীরা। দ্বাদশ নির্বাচনে তিনি জয়ী হতে পারবেন না। কারণ তিনি দল কিংবা এ আসনের মানুষ না। গত দুইবার দলীয় লোকজন তাকে সমর্থন দিয়ে জয়ী করলেও দলের জন্য তিনি বিন্দু পরিমাণ কাজ করেননি বরং দলীয় লোকজনের মধ্যে ভেদাভেদ তৈরি করে দলকে ধ্বংস করার কাজে লিপ্ত ছিলেন। ওয়ার্কার্স পার্টির এমপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী পরিষদের সুসম্পর্ক না থাকাটাই স্বাভাবিক। যেহেতু তিনি দলের এমপি না তাই তিনি আসনটির জন্য যথেষ্ট পরিমাণে কাজ করার যোগ্যতাও রাখেন না। তাই এবার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ে থেকে শুরু করে সকল কর্মীরা আমার পাশে রয়েছেন।
অপরদিকে, আসনটিতে নির্বাচনে লড়বেন জাতীয় পার্টির সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ও সাবেক এমপি সৈয়দ দিদার বখত। নির্বাচন প্রসঙ্গে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী ঢাকা পোস্টকে বলেন, তালা-কলারোয়া আসনে এক সময় একাধারে সবাই জাতীয় পার্টির সমার্থক ছিলেন। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জাতীয় পার্টির ক্ষমতায় আসার যথেষ্ট সম্ভবনা রয়েছে। জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা সকলে একত্রিত হয়েছে নির্বাচনে জয়লাভ করার জন্য।
সোহাগ হোসেন/এএএ