বরিশালে হাসানাত-পঙ্কজের প্রতিদ্বন্দ্বী ‘কাগুজে’ প্রার্থী

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) টিএম তুহিন এবং জাতীয় পার্টির ছেরনিয়াবাত সেকেন্দার আলী। আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর প্রতিপক্ষ হিসেবে এই দুই প্রার্থীর নির্বাচনে লড়াই করার কোনো সক্ষমতা নেই- তা প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীই স্বীকার করেন। এজন্য এলাকায় কোনো প্রচার-প্রচারণারও আয়োজন নেই। এমনকি পোস্টারও ছাপানো হয়নি।
ঠিক একই অবস্থা বরিশাল-৪ (মেহেন্দিগঞ্জ-হিজলা) আসনে। সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথের আপত্তিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ড. শাম্মী আহমেদের প্রার্থিতা বাতিল হওয়ায় পঙ্কজ নাথের সঙ্গে লড়াই করতে টিকে রয়েছেন জাতীয় পার্টি মনোনীত মিজানুর রহমান ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের হৃদয় ইসলাম চুন্নু। এই দুই প্রার্থীকে কেউ চেনেন না সংসদীয় আসনের।
ভোটাররা বলছেন, কাগুজে প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে লড়াই করছেন হেভিওয়েট আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ ও পঙ্কজ নাথ। ভোটের হিসেব কেমন হবে তা আন্দাজ করতে পেরে অনেকটা নিশ্চিন্তে রয়েছেন তারা।
বরিশাল-১ আসনে তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে নৌকা মনোনীত প্রধানমন্ত্রীর ফুফাতো ভাই আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ শুধু বরিশাল-১ আসনের নয়, বৃহত্তর বরিশালে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে তিনি ১৯৭৩ সালে বরিশাল উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। অধুনালুপ্ত বরিশাল পৌরসভারও চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে বরিশাল-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২৬ জুন ২০০০ সালে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হন। হাসানাত ১৯৯৬ থেকে ২০০০ পর্যন্ত জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ ছিলেন। ২০১৪ সালে তিনি তৃতীয় বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১৮ সালে চতুর্থবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই বছরে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক মনোনীত হন, যা বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী পদমর্যাদার। তিনি পার্বত্য শান্তিচুক্তির জন্য বিশেষভাবে প্রশংসীত।
আবুল হাসানাতের প্রতিদ্বন্দ্বী এনপিপি মনোনীত আম প্রতীকের প্রার্থী মো. তুহিন বলেন, আমরাতো ছোটখাটো দলের প্রার্থী। এখনো নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করিনি। আগামীকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণায় নামবো। এর আগে আমি ২০১৫ সালে এনপিপি থেকে গৌরনদী পৌরসভার মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি। বরিশাল-১ আসনে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী যিনি (আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ) তিনি নিঃসন্দেহে হেভিওয়েট প্রার্থী। তার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই। দল থেকে মনোনয়ন দিয়েছে আমাকে। প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মাঠে রয়েছি। আমার যতটুকু সামর্থ্য তা দিয়েই ভোটযুদ্ধে টিকে থাকবো।
গৌরনদী পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এনায়েত হোসেন বলেন, আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ যে উচ্চতার নেতার তার সামনে এদের প্রতিদ্বন্দ্বিতাই মানায় না। এরাতো নামের প্রার্থী। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হলে অন্তত ২০ বছর রাজনীতি করতে হবে। এখনতো অনেক দল বেড়িয়েছে তাদের ২০ বছর বয়সই হয় নাই এসেছে ভোট করতে। শক্ত প্রার্থী না হওয়ায় বরিশাল-১ আসনের ভোটের হিসেব সকলেরই অনুমান করা হয়ে গেছে।
হিজলা উপজেলার চরবাউসিয়ার ঘোড়দৌড় গ্রামের বাসিন্দা মুকুল বেগম বলেন, পঙ্কজ নাথ সবদিক দিয়ে সেরা। তার সময়ে মানুষ বেশি নির্যাতিত হয়েছে আবার কারিশমা করে নৌকার প্রার্থীকে ভোটে আসতে দেয়নি। এখনতো সে আবার এমপি হবে এটা এই এলাকার সকলেই জানেন। তার বিরুদ্ধে যে প্রার্থী আছেন তারা নিজেদের কেন্দ্রেইতো নিজেরা জিতবে না। পঙ্কজ নাথের প্রতিদ্বন্দ্বী যারা, তারাতো কাগজের প্রার্থী, পানি লাগলেই গলে যাবে।
জানা গেছে, দুই দশক আগেও এই আসন বিএনপি-জামায়াত অধ্যুষিত ছিল। ২০১৪ সালে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন পঙ্কজ নাথ। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও নিরঙ্কুশ জয় পান। তিনি নির্বাচিত হওয়ার পরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন বেড়ে যায়। উপজেলায় তার অনুসারী না এমন নেতাকর্মীরা হামলা, মারধরের শিকার হয়ে এলাকা ছাড়েন। এমনকি অনেকেই খুন হন। পঙ্কজ নাথ তার সংসদীয় আসনে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। এসব বিষয় জানতে পেরে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে আওয়ামী লীগের সকল পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তিনি তখন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ছিলেন।
পঙ্কজ নাথের কর্মকাণ্ডের ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হলে উপজেলা আওয়ামী লীগ থেকেই বিকল্প প্রার্থীর দাবি ওঠে। এসব কারণে তাকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। পঙ্কজ নাথ মনোনয়ন হারালে তার নেতাকর্মীদের ওপরও হামলা হয়। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদের দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকায় মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। এতে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঈগল প্রতীক) পঙ্কজ নাথ।
তার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙল প্রতীকের মিজানুর রহমান ও সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট মনোনীত ছড়ি প্রতীকের হৃদয় ইসলাম চুন্নু। এই দুই প্রার্থীর কোনো প্রচার-প্রচারণা এখনো শুরু হয়নি। মিজানুর রহমান ও হৃদয় ইসলাম চুন্নু জানিয়েছেন, দলের মনোনয়ন পাওয়ায় ভোটের মাঠে তারা রয়েছেন। পঙ্কজ নাথ হেভিওয়েট প্রার্থী মেনে নিয়েই নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। ভোটের হিসেব জনগণের কাছে স্পষ্ট। পঙ্কজ নাথের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কর্মী-সমর্থকও তাদের তেমন নেই বলে অকপটে স্বীকার করেন তারা।
মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার চানপুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাহাউদ্দিন ঢালী বলেন, ঈগল প্রতীকের প্রতিদ্বন্দ্বী যারা তারা এই এলাকার হলেও তাদের কেউ ওইভাবে চেনেন না। গতকাল পঙ্কজ নাথ এলাকায় এসে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন। নির্বাচনের পরিবেশ ভালো আছে। আমরা জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর